নির্ধারিত দামের চেয়ে কমে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল: বাণিজ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার

সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়েও বাজারে কম দামে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

মন্ত্রী বলেন, ‘ভোজ্যতেলে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের জায়গায় ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এটার প্রভাব বাজারে পড়েছে, মানুষ সুফল পাচ্ছে। যে সয়াবিন তেল আমরা ১৬৮ টাকা নির্ধারণ করেছিলাম, সেটা এখন খুচরা বাজারে ১৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫৮ টাকায়।’

সোমবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির প্রথম সভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

ভোজ্যতেলের ওপর থেকে ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রত্যাহারের সুফল ক্রেতারা পেতে শুরু করেছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভোজ্যতেলের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে তদারকি জোরদার করা হয়েছে। দাম স্বাভাবিক রাখতে সয়াবিন তেলের সরবরাহ আরও বাড়ানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। দেশে পর্যাপ্ত ভোজ্যতেল মজুত রয়েছে। অন্যান্য পণ্যের পরিস্থিতি স্থিতিশীল। বাজারে কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই।’

টিপু মুনশি বলেন, ‘সরবরাহ চেইন ঠিক রাখতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে, বিশেষ করে তেলের ক্ষেত্রে। সেখানে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে দেশে লাখ লাখ খুচরা ব্যবসায়ী রয়েছেন, সেখানে কোথাও কোথাও ব্যতিক্রম হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বড় কোনো সমস্যা নেই। ৯০ হাজার টন তেল মজুত আছে। কোথাও যদি কেউ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে, তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন সংস্থা মনিটরিং করছে। আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে। তিনি জানতে চেয়েছেন, পণ্য পরিবহনে কোথাও কোনো বাধা আসছে কি না। সব দিক থেকেই ফলোআপ করার চেষ্টা করছি।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রোজার আগে হোক বা পরে হোক ব্রাজিল, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় তেলের দাম না কমলে আমরা রোজার মধ্যে কুলাতে পারবো না। তবে তেলের ওপর ভ্যাট কমানোর ফলে দাম নিম্নমুখী। মসুর ডাল ঠিক আছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, টিসিবি তো এখন পেঁয়াজ বিক্রি না করার জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছে। গতকাল ২৮ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনেছি। উত্তরায় যদি ২৮ টাকা হয়, কৃষকরা তো দাম পাবে না। তাহলে ১০ দিন পর কৃষক আবার মাঠে নামবে। আমরা চেষ্টা করবো, রমজানে দাম নিম্নমুখী রাখার।’

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে, দেশেও দাম কমানোর ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ মুহূর্তে তেলের যে দাম নির্ধারণ করা আছে, সেটা এক হাজার ৪০০ ডলারের ওপরে দাম ধরে করা হয়েছে। গত কয়েকদিনে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে এখনো এক হাজার ৬০০ ডলারের ওপরে বিক্রি হচ্ছে। এ দামে আমদানি করা তেল যখন বাংলাদেশে ঢুকবে, তখন এক মাসে গড় করে দাম নির্ধারণ করবো। প্রতি ঘণ্টায় আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের খোঁজ রাখছি।’

তিনি বলেন, ‘পণ্য আমদানি ও সরবরাহে যাতে কোনো ধরনের সদস্যা না হয়, সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমদানিপণ্য দ্রুত খালাস ও শুল্কায়ন, দ্রুত পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পণ্যের আমদানি, পাইকারি বা ডিলার পর্যায়ে যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’

ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলো বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, এ বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এস এম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার থেকে আমরা দুই বার অভিযান চালিয়েছি। সেখানে গত সপ্তাহে একটি শুনানি করেছি। দেখা গেছে, কোম্পানিগুলো উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়েছি। আজ একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটি হলো- আগামী বুধবার তাদেরকে ডাকা হয়েছে। বুধবারের পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলাম, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, এফবিসিসিআই-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *