নিম্নমুখী চাপের মুখে আন্তর্জাতিক পণ্যবাজার

স্টাফ রিপোর্টার

বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা ও মূল্যস্ফীতির উদ্বেগে অব্যাহত বাড়ছে ডলারের চাহিদা। এতে ক্রমেই চাপের মুখে আন্তর্জাতিক পণ্যবাজার। বাজারে সপ্তাহব্যাপী নিম্নমুখী প্রবণতা যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। খবর আনাদোলু এজেন্সি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আরো আগ্রাসী মুদ্রানীতি গ্রহণ করতে পারে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে দেশটির অর্থনীতি মন্দার মুখে পড়বে। এসব আশঙ্কা বৈশ্বিক পণ্যবাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা আরো তীব্রতর করছে।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, জুনে যুক্তরাষ্ট্রে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ, যা আশঙ্কাকেও ছাড়িয়ে গেছে। ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি আরো শক্তিশালীভাবে সংকোচনের পরিকল্পনা করছে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক। ধারণা করা হচ্ছে, জুলাইয়ে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে ব্যাংকটি ১০০ বেসিস পয়েন্টে এবং সেপ্টেম্বরে ৭৫ বেসিস পয়েন্টে সুদহার বাড়াবে।

অন্যদিকে, ১০৮ দশমিক ১ মূল্যসূচকের মাধ্যমে সপ্তাহ শেষ করেছে ডলার। অর্থাৎ মুদ্রাটির বিনিময় মূল্য ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে ১০৯ দশমিক ৩ পয়েন্টের মাধ্যমে ডলারের দাম ২০ বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছেছিল।

বাজারে চলমান এসব পরিস্থিতির কারণে পণ্য বেচাকেনা চাপের মুখে। ফলে কমছে দাম। গত সপ্তাহে প্রতি আউন্স স্বর্ণের গড় দাম ১ হাজার ৬৯৭ ডলার ৬০ সেন্টে নেমেছে। এটি এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন। এ নিয়ে টানা পাঁচ সপ্তাহের মতো মূল্যবান ধাতুটির দাম নিম্নমুখী ছিল। আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৭০৭ ডলারে সপ্তাহ শেষ করেছে স্বর্ণ, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশ কম।

অন্যদিকে, রুপার দাম দুই বছরের সর্বনিম্নে নেমেছে। গত সপ্তাহে ধাতুটির দাম আউন্সপ্রতি ১৮ ডলার ১০ সেন্টে নেমেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া প্লাটিনামের সাপ্তাহিক গড় দাম ৫ দশমিক ২ শতাংশ এবং প্যালাডিয়ামের দাম ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে।

অর্থনৈতিক উত্থান-পতনের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক তামার দাম কমে ২০২০ সালের নভেম্বরের পর সর্বনিম্নে নেমেছে। গত সপ্তাহে প্রতি পাউন্ড তামার গড় দাম ছিল ৩ ডলার ২০ সেন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ধাতুটির দাম কমেছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া অ্যালুমিনিয়ামের দাম ৩ শতাংশ, নিকেলের ১১ শতাংশ ও দস্তার ৫ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে।

এদিকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯২ ডলার ৫০ সেন্টে নেমেছে। অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কায় জ্বালানিটির সাপ্তাহিক দাম ৭ শতাংশ কমেছে। যদিও নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে।

বিশ্লেষকরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের সরবরাহ সংকট অব্যাহত। রাশিয়ার গ্যাজপ্রম ঘোষণা দিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি গ্যাস টারবাইনজনিত প্রতিবন্ধকতার কারণে জ্বালানিটির সরবরাহ অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। টারবাইন সংকটের অজুহাতে গ্যাজপ্রম ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ সক্ষমতা কমিয়েছে।

অন্যদিকে, অর্থনৈতিক মন্দা ও ব্যাংকগুলোর মুদ্রানীতিতে সংকোচনের কারণে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে কৃষিপণ্যের বাজারেও। বেশির ভাগ কৃষিপণ্যের দামই লক্ষণীয় মাত্রায় কমেছে। শিকাগো মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে গমের দাম গত সপ্তাহে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। এছাড়া ভুট্টার দাম ৩ শতাংশ এবং সয়াবিনের ৩ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। তবে চালের দাম দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে।

২০২১ সালের মে মাসের পর সর্বনিম্নে নেমেছে তুলার দাম। গত সপ্তাহে পণ্যটির গড় দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় ৭ দশমিক ২ শতাংশ কমে যায়। কফির সাপ্তাহিক দাম ৯ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে, যা ২০২১ সালের অক্টোবরের পর সর্বনিম্ন। গত সপ্তাহে চিনির দাম কমেছে দশমিক ৩ শতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *