নিউইয়র্ক পুঁজিবাজার ছাড়ছে পাঁচ চীনা করপোরেট জায়ান্ট
কয়েক বছর ধরেই চীন-যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক ও বাণিজ্য উত্তেজনা বাড়ছে। নিরাপত্তা, প্রযুক্তি ও মানবাধিকার নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবরও বেশ পুরনো। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে যুক্ত হয়েছে তাইওয়ান ইস্যু। পাশাপাশি সামনে আনা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের অডিট যাচাই-বাছাই নিয়ে বিরোধ। এ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচটি চীনা করপোরেট জায়ান্ট নিউইয়র্ক পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার অপসারণের ঘোষণা দিয়েছে। এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যে ক্রমবর্ধমান আর্থিক বিচ্ছেদের সর্বশেষ সংযোজন হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বিশ্বের তিনটি বৃহত্তম জ্বালানি সংস্থা পেট্রোচায়না, সিনোপেক ও সাংহাই পেট্রোকেমিক্যাল পৃথক বিবৃতিতে মার্কিন পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত শেয়ার স্বেচ্ছায় অপসারণের আবেদন করবে বলে জানিয়েছে। পাশাপাশি আরো দুটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন করপোরেট জায়ান্ট চায়না লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও অ্যালুমিনিয়াম করপোরেশন অব চায়নাও (চালকো) যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার থেকে নিজেদের অপসারণের ঘোষণা দিয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান দুটি প্রশাসনিক বোঝা ও শেয়ার রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যয়ের বিষয়টি উল্লেখ করলেও জ্বালানি জায়ান্টগুলো কোনো কারণ উল্লেখ করেনি।
এ খবরের পর নিউইয়র্ক পুঁজিবাজারে প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দাম কমেছে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেরই এ কমার হার প্রায় ১ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত বাজারমূল্য ৩০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। সংস্থাগুলো জানিয়েছে, হংকং পুঁজিবাজারে লেনদেন অব্যাহত থাকবে এবং সেটি চীনের বাইরের বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত। এর মাধ্যমে সংস্থাগুলো অন্যান্য চীনা প্রতিষ্ঠানের পদক্ষেপ অনুসরণ করেছে। এটি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে হংকংয়ের ভূমিকা বাড়িয়ে তুলছে।
ওয়াশিংটন সতর্ক করেছে, বেইজিং বিশ্বের বৃহত্তম ই-কমার্স কোম্পানির একটি আলিবাবা গ্রুপসহ চীনা প্রতিষ্ঠানের করপোরেট নিরীক্ষা রেকর্ড দেখার অনুমতি দিতে অস্বীকার করলে মার্কিন পুঁজিবাজার ছাড়তে হবে। মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সরকারগুলো এ পদক্ষেপে সম্মত হয়ছে। কারণ এটি যুক্তরাষ্ট্রের আইনে অত্যাবশ্যকীয়। তবে চীন ও হংকং এ পদক্ষেপ মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চীন আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে জানালেও মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছে।
২০২০ সালের নভেম্বরে তত্কালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার চীনের সামরিক উন্নয়নে সমর্থনকারী হিসেবে কয়েক ডজন প্রতিষ্ঠানের স্টক, বন্ড ও অন্যান্য সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে নিষেধ করেছিল। তবে বর্তমানে মার্কিন পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার গুটিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো সেই কালো তালিকায় নেই। এর আগে ১০ জুন চীনের বৃহত্তম রাইড-হেলিং পরিষেবা ডিডি নিউইয়র্ক পুঁজিবাজার ছেড়ে হংকং পুঁজিবাজারে যোগদান করেছিল।
চীনের বাজার নিয়ন্ত্রক জানিয়েছে, এ পদক্ষেপ প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল সংগ্রহের কার্যক্রম বিপন্ন করবে না। এক্ষেত্রে সংস্থাগুলো একাধিক বাজার বেছে নিতে পারে। এক বিবৃতিতে চায়না সিকিউরিটিজ রেগুলেটরি কমিশন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজারের নিয়ম ও নিয়ন্ত্রক প্রয়োজনীয়তাগুলো কঠোরভাবে মেনে চলেছে। বর্তমানে ব্যবসায়িক প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে সংস্থাগুলো দেশটির পুঁজিবাজার ছাড়ছে।
২০২০ সালে পাস হওয়া হোল্ডিং ফরেন কোম্পানিজ অ্যাকাউন্টেবল অ্যাক্টে বর্ণিত নিয়ন্ত্রকদের নিরীক্ষা মান পূরণ করেনি এমন চীনা সংস্থাগুলোর একটি তালিকায় এ পাঁচ সংস্থাকে যুক্ত করা হয়েছিল। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, অন্য প্রধান পুঁজিবাজারের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে লেনদেনকৃত শেয়ারের সংখ্যা কম। পেট্রোচায়না জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি মার্কিন তালিকাভুক্তি থেকে অতিরিক্ত মূলধন বাড়ায়নি। তাছাড়া ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হংকং ও সাংহাই পুঁজিবাজার প্রতিষ্ঠানটির তহবিল সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তাগুলো পূরণ করতে পারে।
চায়না লাইফ ও চালকো জানিয়েছে, ২২ আগস্ট সংস্থা দুটি তালিকাভুক্তি প্রত্যাহারের আবেদন করবে। এটি আবেদনের ১০ দিন পর কার্যকর হবে। এছাড়া সিনোপেক ও পেট্রোচায়না ২৯ আগস্ট আবেদন করার কথা জানিয়েছে।
এর আগে ২০২১ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন চীনা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ করার পর নিউইয়র্ক পুঁজিবাজার চায়না টেলিকম, চায়না মোবাইল ও চায়না ইউনিকমের লেনদেন স্থগিত করেছিল। যদিও এরপর বৃহত্তম দুই দেশের অব্যাহত উত্তেজনার মধ্যে জো বাইডেন প্রশাসন সেই সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত রেখেছে।