নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস

দীর্ঘ বিতর্কের পর ভারতের লোকসভায় পাস হয়ে গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি)। সোমবার দুপুরে লোকসভায় এই বিল পেশ করেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এরপর দীর্ঘ বিতর্কের পর রাত সাড়ে ১২টায় পাস হয় সেই বিল।

বিলের সমর্থনে ভোট পড়েছে ৩১১টি ও বিপক্ষে ৮০টি। এদিন সকাল থেকেই এই বিলকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয় সংসদ। কংগ্রেস, তৃণমূল সব বিরোধী দলের পক্ষেই এই বিলের বিরোধিতা করা হয়। পরে সব প্রশ্নের জবাব দেন অমিত শাহ।

পশ্চিমবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে বহু শরণার্থী এসে বছরের পর বছর ধরে বাস করছে বলে জানিয়ে আসছে ভারত। সেই শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বলে দাবি অমিত শাহের।

এদিন বিল পেশের পরই বিরোধীদের আক্রমণ ঠেকাতে অমিত শাহ বলেন ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল কারও অধিকার ছিনিয়ে নেবে না। বিলে ভেদাভেদ হচ্ছে বলে যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে এখনই এই বিল নিয়ে সংসদ ছেড়ে চলে যাব, এক শতাংশ সংখ্যালঘুবিরোধী নয় এই বিল। এই বিল পাস হলে কারও স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না। ধর্মনিরপেক্ষতা স্বীকার করে কেন্দ্রীয় সরকার।

বিল পাস হওয়ার পর সব সাংসদদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এছাড়া এই বিলের সব ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।

এদিন লোকসভায় দাঁড়িয়ে সব বিরোধীদের জবাব দিয়ে অমিত শাহ জানিয়ে দিলেন, ভারতীয় মুসলিমদের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। ভারতে বসবাসকারী মুসলিমরা সম্মানের সঙ্গেই বাঁচতে পারবেন। বিভেদ তৈরি করার জন্য এই বিল আনা হয়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে মুসলিমদের নাম নেই। উল্লেখ্য, এই বিলে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। মুসলিমদের কথা বলা হয়নি। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অমিত শাহ বলেন, ‘ওইসব দেশে মুসলিমরা সংখ্যালঘু নয়। তাই মুসলিমদের কথা বলা হয়নি। সংখ্যালঘুদের কথাই কেবলমাত্র বলা হয়েছে।’

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ চলছে ভারতের বিভিন্ন অংশসহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতেও। ছয় দশক পুরোনো নাগরিকত্ব বিল সংশোধন করে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানের অ-মুসলিমদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে সাহায্য করবে। লোকসভায় কংগ্রেস এই বিলের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে। তাদের বিশ্বাস, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ভারতীয় সংবিধানবিরোধী একইসঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি, সংস্কৃতি এবং সভ্যতাবিরোধী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *