ধীর হয়েছে চীনের ভোক্তা ও উৎপাদক মূল্যস্ফীতি
চীনে মূল্যস্ফীতির চাপ ধীর হয়েছে। আগস্টে ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি আশঙ্কার তুলনায় ধীর হয়েছে। পাশাপাশি উৎপাদক পর্যায়ের মূল্যস্ফীতির হার ১৮ মাসের সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। এটি দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদায় পতনের চিত্র তুলে ধরছে। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে মুদ্রানীতি আরো সহজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। খবর রয়টার্স।
ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস (এনবিএস) জানিয়েছে, গত মাসে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) এক বছর আগের তুলনায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। এ হার জুলাইয়ের ২ দশমিক ৭ শতাংশের তুলনায় ধীর। রয়টার্সের জরিপে বিশ্লেষকরাও ২ দশমিক ৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
একই সময়ে উৎপাদক মূল্যসূচক (পিপিআই) ২ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। এ হার ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির পর সবচেয়ে ধীর। এটি আগের মাসে ৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ১ শতাংশ পূর্বাভাসের চেয়েও কম। বিশেষ করে জ্বালানি ও কাঁচামালের দাম কমায় এ মূল্যস্ফীতি ধীর হয়েছে।
অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের বিশ্লেষক শিয়ানা ইউ ও জিচুন হুয়াং একটি নোটে বলেন, পণ্যের দাম ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ায় বছরের বাকি সময়েও পিপিআই ধীর হবে। পাশাপাশি আমরা মনে করি সিপিআই ৩ শতাংশের নিচে থাকবে।
সরকারি ও বেসরকারি তথ্যগুলো আগস্টে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটি আরো গতি হারানোর ইঙ্গিত দেয়। রিয়েল এস্টেট বাজারে মন্দা, কভিডজনিত বিধিনিষেধ এবং বিদ্যুতের ঘাটতি ভোক্তা ব্যয় ও কারখানা কার্যক্রম সংকুচিত করেছে। সম্প্রতি দেশটি চেংডুর ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের বসবাসের অঞ্চলে লকডাউন বিস্তৃত করেছে।
আগস্টে খাদ্যের দাম সিপিআই ধীর হতে সহায়তা করেছে। এ সময়ে খাদ্যের দাম বছরওয়ারি হিসাবে ৬ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে জুলাইয়ে এ বাড়ার হার ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। পাশাপাশি খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। জুলাইয়ে এসব পণ্যের দাম বেড়েছিল ১ দশমিক ৯ শতাংশ।
গত মাসে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাদ দিয়ে হিসাব করা কোর মূল্যস্ফীতি দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আগের মাসেও এ হার একই ছিল। মাসভিত্তিক কোর মূল্যস্ফীতি গত মাসে দশমিক ১ শতাংশ নেমেছে। জুনের তুলনায় জুলাইয়ে দাম বাড়ার হার ছিল দশমিক ৫ শতাংশ। এনবিএস আলাদাভাবে জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও লৌহজাতীয় নয় এমন ধাতুর মূল্য হ্রাসের কারণে সামগ্রিক শিল্পপণ্যের দামে নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।
জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনে উৎপাদক মূল্যস্ফীতি আগস্টে ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। জুলাইয়ে এ হার ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশ ছিল। চীনে ভোক্তা মূল্যসূচক সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৩ শতাংশের কাছাকাছি থাকলেও অন্যা প্রধান অর্থনীতিগুলোয় এটি রেকর্ড উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। গত মাসে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, চীন ক্রমবর্ধমান কাঠামোগত মূল্যস্ফীতির চাপের মুখোমুখি হয়েছে। চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে কয়েকটি মাসে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি ধীর হওয়ায় আর্থিক নীতি আরো সহজ করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। ফলে দেশটি সুদের হার কমিয়ে অর্থনীতি চাঙ্গা করার উদ্যোগ নিতে পারে। সম্প্রতি চীনের মন্ত্রিসভা বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে আরো উদ্যোগ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কভিডজনিত বিধিনিষেধে বিপর্যস্ত অর্থনীতি শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নিচ্ছে দেশটির নীতিনির্ধারকরা। এইচএসবিসি ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ এরিন জিন বলেন, আমরা আশা করি চীন মুদ্রানীতি আরো সহজ করবে। পাশাপাশি তারল্য সহায়তাও দেয়া হবে।