ধনীদের বিনিয়োগ আরো সহজ করল দুবাই
বৈশ্বিক বিনিয়োগ আকর্ষণে নিয়মিত নতুন নতুন উদ্যোগ জারি রেখেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। সেই সূত্রে ধনীদের সম্পত্তি স্থানান্তর ও বিনিয়োগের কারণে ফুলেফেঁপে উঠেছে দেশটির দুবাই, আবুধাবি বা শারজার মতো অঞ্চলগুলো। বিশেষ করে নীতি সহজ হওয়ায় ইউএইর সম্পত্তি খাতের দিকে বিদেশীদের আকর্ষণ বেশি। গত বছর এ বাজারে বড় আকারের প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। সেই প্রবণতা বজায় রাখতে নতুন কিছু উদ্যোগ নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।
দ্য ন্যাশনালের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৫ সালের প্রথম দিকে তিনটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে ইউএই কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে দুবাইয়ের স্মার্ট ভাড়া সূচক চালু, শেখ জায়েদ রোড ও আল জাদ্দাফ এলাকার সম্পত্তি ফ্রি-হোল্ড স্টাটাস বা পূর্ণ মালিকানায় রূপান্তরের উদ্যোগ এবং দুবাই ল্যান্ড ডিপার্টমেন্ট (ডিএলডি) ও ব্রোকার ফি বাবদ ব্যাংকগুলোকে অর্থায়ন বন্ধে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা।
এক সময় জ্বালানি তেলনির্ভর থাকলেও এক দশকের বেশি সময়জুড়ে অর্থনীতি বৈচিত্র্যময় করার পথে হাঁটছে আরব আমিরাত। এ কারণে ভিসা, ব্যবসা, বিনিয়োগ ও বসবাসের ক্ষেত্রে শিথিল নীতি প্রণয়ন করেছে দেশটি, এতে ‘করস্বর্গ’ হিসেবে পরিচিত হয়েছে প্রধান শহরগুলো। এছাড়া অনেক বিদেশী কোম্পানি এখন আঞ্চলিক দপ্তর হিসেবে দুবাইয়ের মতো শহরকে বেছে নিচ্ছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে আরব আমিরাতের আবাসন খাতে ক্রেতাদের বড় একটি অংশ বিদেশী। কারণ নীতি সহজ হওয়ার কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ অর্থ পাচারের গন্তব্য হয়ে উঠেছে দেশটির চাকচিক্যময় শহরগুলো।
নতুন উদ্যোগের অংশ হিসেবে চলতি মাসের শুরুতে স্মার্ট ভাড়া সূচক চালু করেছে ডিএলডি। এর মাধ্যমে অঞ্চলটির আবাসিক ভবনগুলো এক-পাঁচ তারকার মধ্যে শ্রেণীবদ্ধ হয়েছে। একই সঙ্গে ইউএই সেন্ট্রাল ব্যাংক জানিয়েছে, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিএলডি নিবন্ধন ফি ও রিয়েল এস্টেট ব্রোকার ফি বাবদ অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে। এতে ক্রেতাদের প্রারম্ভিক খরচ বাড়বে ও ছোট ক্রেতাদের জন্য বিনিয়োগ কঠিন হয়ে পড়বে। অর্থাৎ নগদ বড় অংকের অর্থ খরচ করতে পারবে এমন ক্রেতারাই অঞ্চলটির লক্ষ্য।
এছাড়া দুবাইয়ের শেখ জায়েদ রোড ও আল জাদ্দাফ এলাকার বেসরকারি সম্পত্তির মালিকদের জন্য তাদের মালিকানাকে ফ্রি-হোল্ড (পূর্ণ মালিকানা) অবস্থায় রূপান্তরের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলাকাটিকে শহরের রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত করার লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ৪৫৭টি প্লট ফ্রি-হোল্ড অবস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার যোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে শেখ জায়েদ রোডে ১২৮টি এবং আল জাদ্দাফে ৩২৯টি প্লট।
এ বিষয়ে পরামর্শক সংস্থা ক্যাভেন্ডিশ ম্যাক্সওয়েলের অংশীদার সিরাজ আহমেদ বলেন, ‘নতুন নীতিমালা বিনিয়োগকারীদের সুযোগ গ্রহণ ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। এটি দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘স্মার্ট ভাড়া সূচক ও ফ্রি-হোল্ড স্টাটাস বিনিয়োগকারী ও ডেভেলপার উভয়ের জন্য নতুন সম্ভাবনা খুলে দিচ্ছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা ব্যাংকগুলোর আর্থিক ঝুঁকি হ্রাস করে। এতে বাজার স্থিতিশীল ও টেকসই থাকে।’
শেখ জায়েদ রোডে ১৯৭০ সাল থেকে ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে নির্মিত বেশকিছু পুরনো ভবন রয়েছে। মূলত ফ্রি-হোল্ড স্টাটাসের মাধ্যমে এখানে বড় ধরনের বিনিয়োগ আশা করছে দুবাই কর্তৃপক্ষ। এতে নতুন ভবন, পুরনো ভবনের আধুনিকীকরণ ও বিক্রয়ের জন্য সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে দুবাইয়ের সম্পত্তি বাজার শক্তিশালী হয়েছে। নতুন নীতিগুলোও এরই ধারাবাহিকতা। যেমন অবসরে থাকা ব্যক্তি ও রিমোট কর্মীদের জন্য রেসিডেন্সি পারমিট, ১০ বছরের গোল্ডেন ভিসা প্রোগ্রাম সম্প্রসারণ এবং ইউএইর অর্থনীতির বৈচিত্র্যকরণের প্রচেষ্টা।
পরিসংখ্যান অনুসারে, গত বছর দুবাইয়ে ৭৬ হাজার ১০০ কোটি দিরহামের রিয়েল এস্টেট চুক্তি হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। এছাড়া এক বছরের মধ্যে এ খাতে লেনদেন ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২ লাখ ২৬ হাজারে পৌঁছেছে।
গত বছর দুবাইয়ের সম্পদবাজারে ২৭ লাখ ৮০ হাজার বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে রিয়েল এস্টেট লেনদেন ও ভাড়া চুক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
পরামর্শক সংস্থা কোল্ডওয়েল ব্যাংকার রিচার্ড এলিসের (সিবিআরই) প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দুবাইয়ের আবাসিক বাজারে গড় মূল্য আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ বাড়ে। এর মধ্যে গড় অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য ১৯ শতাংশ এবং গড় ভিলার মূল্য বাড়ে ২৩ শতাংশ।
এদিকে গত সপ্তাহে আবুধাবি ও দুবাইয়ের মধ্যে উচ্চগতির যাত্রী ট্রেন পরিষেবা ঘোষণা করেছে ইতিহাদ রেল। নতুন এ পরিষেবা ইউএইর প্রধান দুই গন্তব্যের মধ্যে যোগাযোগ ৩০ মিনিটে সীমিত করবে। ধারণা করা হচ্ছে, বিনিয়োগ ও অন্যান্য কারণে জনবিন্যাসের নতুন প্রবণতা এবং নতুন রিয়েল এস্টেট প্রকল্প সম্প্রসারণ মিলিয়ে এ রেলপথ অঞ্চল দুটিকে আরো সমৃদ্ধ করবে।