দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যাংক ঋণ ৩ হাজার কোটি টাকা
উপমহাদেশের প্রথম চিনিকল ‘দেশবন্ধু সুগার মিল’ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয় ২০০২ সালে। কিনে নেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর গোলাম মোস্তফা। ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত চিনিকলটিকেই বড় হওয়ার সিঁড়ি বানান তিনি।
দেশবন্ধু সুগার মিলের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির জন্য বিভিন্ন ব্যাংকে এলসি খোলেন গোলাম মোস্তফা। আমদানীকৃত অপরিশোধিত চিনি পরিশোধনের পর বাজারে বিক্রি হয়। কিন্তু ব্যাংকের এলসি দায় আর পরিশোধ হয় না। এভাবে একের পর এক নন-ফান্ডেড ঋণ ফান্ডেড হয়েছে। চিনি থেকে এ ব্যবসায়ী ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছেন পলিমার, সিমেন্ট, শিপ ম্যানেজমেন্ট, আবাসন, রাইস মিল, টেক্সটাইল, সোয়েটার, ফুড অ্যান্ড বেভারেজসহ বিভিন্ন খাতে। গড়ে তুলেছেন এক ডজনের বেশি কোম্পানি। বেড়েছে ব্যাংকঋণের অংকও। চলতি বছরের জুন শেষে দেশবন্ধু গ্রুপের কাছে ব্যাংকঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। গ্রুপটির সামর্থ্যের চেয়ে বেশি মাত্রার এ সম্প্রসারণ বিপদে ফেলেছে এক ডজন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে।
দেশবন্ধু গ্রুপের প্রায় সব ঋণই বিভিন্ন সময়ে খেলাপি হয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংকের ঋণ চার-পাঁচবারও পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এখনো পুনঃতফসিলের প্রক্রিয়ায় রয়েছে কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ। গ্রুপটির নতুন এলসি খোলাও বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। যদিও নতুন নতুন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছেন গোলাম মোস্তফা।
ব্যাংকাররা বলছেন, দেশবন্ধু সুগার মিলসহ বিভিন্ন কোম্পানির নামে নেয়া ঋণ অন্য খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এ কারণে গ্রুপটির চলতি মূলধনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। অপরিশোধিত চিনি, মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি কিংবা চলতি মূলধন নিয়ে নির্ধারিত সময়ে তা পরিশোধ না করায় ফোর্সড লোন সৃষ্টি হচ্ছে। গ্রুপটির কর্মকাণ্ড মোটেই ব্যাংকবান্ধব নয়। বারবার যোগাযোগ করেও দেশবন্ধুর কাছ থেকে ঋণের অর্থ আদায় করা যাচ্ছে না।
দেশবন্ধু গ্রুপের কাছে সবচেয়ে বেশি ঋণ আছে বেসরকারি খাতের সাউথইস্ট ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের। ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড মিলিয়ে গ্রুপটির কাছে ব্যাংক দুটির ঋণের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া বড় অংকের ঋণ রয়েছে ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, এনসিসি, প্রিমিয়ার ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের। আরো কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দেশবন্ধু সুগার মিল লিমিটেডের নামেই আছে ১ হাজার ৮১২ কোটি টাকার ঋণ। ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেডের নামে। অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে দেশবন্ধু সিমেন্ট মিলস লিমিটেডের ৫২ কোটি, দেশবন্ধু ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ৫১ কোটি, দেশবন্ধু পার্সেল অ্যান্ড লজিস্টিক লিমিটেডের ১৮ কোটি, সাহেরা অটো রাইস মিলস লিমিটেডের ২১ কোটি ও সাউথইস্ট সোয়েটার লিমিটেডের নামে ১২৪ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে।
বড় অংকের ঋণ রয়েছে দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান, এমডিসহ চার পরিচালকের নামে। গ্রুপটির চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার নামে ঋণ রয়েছে ৭৮ কোটি টাকা। ১৭৩ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে চেয়ারম্যানের ভাই দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমানের নামে। এছাড়া পরিচালক মো. আখেরুজ্জামানের নামে ১৪০ কোটি এবং মো. মাইনুল ইসলাম লালের নামে ১৪০ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি বছরের এপ্রিল শেষে দেশবন্ধু গ্রুপের মোট ঋণ ছিল ২ হাজার ৮১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা মেয়াদি ঋণ। বাকি ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল। ফান্ডেড ঋণ ছিল ২ হাজার ২১ কোটি এবং নন-ফান্ডেড ৭৯১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১৪ সালে দেশবন্ধু গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড মিলিয়ে ৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ ছিল মার্কেন্টাইল ব্যাংকের। এরপর থেকে অস্বাভাবিক গতিতে ব্যাংকটিতে ঋণ বেড়েছে দেশবন্ধুর। চলতি বছরের মাঝামাঝি এ ঋণের পরিমাণ ছাড়ায় হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫১০ কোটি টাকা ছিল ফান্ডেড এবং ৫২১ কোটি টাকা নন-ফান্ডেড। দেশবন্ধু সুগার মিলস, পলিমার, রাইস মিলস ও কমোডিটি খাতে এ ঋণ দিয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক।
যদিও ব্যাংকঋণের বড় অংশই অন্য খাতে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দেশবন্ধু গ্রুপের ঋণ অন্তত চার দফায় পুনঃতফসিল করা হয়েছে। তার পরও ঋণের কিস্তি বকেয়া হয়ে যাওয়ায় ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে বিশেষ বিবেচনায় পুনঃতফসিল করা হচ্ছে। পুনঃতফসিলের আবেদন এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়নি।
তবে সম্প্রতি নন-ফান্ডেড দায় সমন্বয় করায় দেশবন্ধুর ঋণ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানান মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে নন-ফান্ডেড ঋণ ফোর্সড ঋণে পরিণত হওয়ায় দেশবন্ধু গ্রুপের দায় বেড়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি গ্রুপটির নন-ফান্ডেড দায় সমন্বয় করা হয়েছে। এতে দেশবন্ধুর কাছে আমাদের ব্যাংকের ঋণ ৫০০ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। গ্রুপটিকে নতুন করে কোনো এলসি সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। দেশবন্ধুর কাছ থেকে আদায় বাড়িয়ে ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এলসি দায় পরিশোধ না করায় ফান্ডেড ঋণ বেড়ে গেছে।
বড় অংকের এ ঋণের বিপরীতে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কাছে জামানত হিসেবে আছে দেশবন্ধু গ্রুপের দুটি ভবন। রাজধানীর বনানী খেলার মাঠের পাশের ছয়তলার একটি ভবন ও বারিধারার নয়তলার একটি ভবন ব্যাংকের কাছে জামানত আছে।
দেশবন্ধু গ্রুপের কাছে ৭৮৫ কোটি টাকা ঋণ আছে সাউথইস্ট ব্যাংকের। দেশবন্ধু সুগার মিল, দেশবন্ধু সিমেন্ট মিলস এবং সাউথইস্ট সোয়েটার লিমিটেডকে এ ঋণ দেয়া হয়েছে। যদিও এ ঋণ নিয়ে বিপদে আছে ব্যাংকটি। এরই মধ্যে দেশবন্ধু গ্রুপের ঋণ দুবার পুনঃতফসিল করেছে সাউথইস্ট ব্যাংক। তার পরও গ্রুপটির ঋণের কিস্তি অনিয়মিতই থাকছে। দেশবন্ধু সুগার মিল লিমিটেডের স্থাপনা, যন্ত্রপাতি এবং ধানমন্ডির ‘রাপা প্লাজা’ সাউথইস্ট ব্যাংকের কাছে জামানত দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেন বলেন, নন-ফান্ডেড ঋণ ফোর্সড লোনে রূপান্তরিত হওয়ায় দেশবন্ধু গ্রুপের ঋণ বেড়ে গেছে। তবে গ্রুপটির কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য সবধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি এলসির বিপরীতে ২০ শতাংশ অর্থ আমরা আগেই জমা নিচ্ছি। এভাবে ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা হচ্ছে। তবে দেশবন্ধুকে নতুন করে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা সতর্কতা অবলম্বন করছি।
দেশবন্ধু গ্রুপের কাছে ১১০ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে এনসিসি ব্যাংকের। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এ ঋণটি চতুর্থবারের মতো পুনঃতফসিল করা হয়েছে। করপোরেট কালচারের ঘাটতির কারণেই গ্রুপটির ঋণ বারবার পুনঃতফসিল করতে হচ্ছে বলে মনে করেন এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, সরকারি চিনিকলগুলো লোকসান দিচ্ছে। এ খাতের বেসরকারি উদ্যোক্তারাও ভালো নেই। এ অবস্থায় স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দেশবন্ধু গ্রুপ নানা খাতে বিনিয়োগ করেছে। যিনি যে খাতে দক্ষ, তার সে খাতেই থাকা উচিত।
দেশবন্ধু গ্রুপের কোম্পানি ‘দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেড’ ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত। চিনি বিপণনের জন্য প্লাস্টিকের বস্তা উৎপাদন করে কোম্পানিটি। যদিও সময় ভালো যাচ্ছে না দেশবন্ধু পলিমারের। ৬১ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৭ কোটি টাকা রয়েছে বেসরকারি খাতের ঢাকা ব্যাংকের। অনিয়মিত হয়ে যাওয়ায় চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর এ ঋণটিও পুনঃতফসিল করা হয়েছে। ব্যাংকঋণ পরিশোধ না করতে পারলেও সাম্প্রতিক সময়ে দেশবন্ধু পলিমার আরো সম্প্রসারিত করেছেন গোলাম মোস্তফা।
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশের বেশির ভাগ বড় করপোরেটেই ভালো করপোরেট সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। এজন্যই বেশি বড় হতে গিয়ে গ্রুপগুলো বিপদে পড়ছে। এক কোম্পানির ঋণ অন্য কোম্পানিতে সরিয়ে নেয়ার কারণে মূলধনশূন্য হয়ে যাচ্ছে। দেশবন্ধুর ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি একই। ঢাকা ব্যাংকের ঋণটি আমরা পুনঃতফসিল করে দিয়েছি। আশা করছি, দেশবন্ধু যথাসময়ে ঋণটি পরিশোধ করবে।
বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় দেশবন্ধু গ্রুপের এলসি খোলা বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংক এশিয়া। গ্রুপটির কাছে নিজেদের ঋণ শূন্যে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে ব্যাংকটি। এরই মধ্যে তা ৮০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। যদিও এ ঋণটি নিয়েও স্বস্তিতে নেই ব্যাংক এশিয়ার কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, দেশবন্ধু চলতি মূলধন হিসেবে নেয়া টাকা ফেরত দেয়নি। ফলে এটি ফোর্সড ঋণ হয়ে গেছে। এজন্য দেশবন্ধু গ্রুপের সব ধরনের এলসি ও অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তহবিল স্থানান্তরের কারণে দেশবন্ধু সুগারসহ বেশির ভাগ কোম্পানি ক্যাপিটালশূন্য হয়ে গেছে। তবে ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংকের পক্ষ থেকে চাপ বাড়ানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী বলেন, ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে নেয়া টাকা ফোর্সড ঋণে রূপান্তর দেশের বড় করপোরেটগুলোর সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ একবার এটা করে পার পেলে বারবার করতে চায়। এ মুহূর্তে আমরা দেশবন্ধুর কোনো এলসি খুলছি না। গ্রুপটির কাছ থেকে টাকা আদায়ের উদ্যোগ জোরদার করা হয়েছে।
দেশবন্ধু গ্রুপের কাছে বড় অংকের ঋণ ছিল প্রিমিয়ার ব্যাংকের। যদিও সে ঋণ এরই মধ্যে আদায় করা হয়েছে বলে জানান ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রিয়াজুল করিম। তিনি বলেন, দেশবন্ধু নতুন করে এলসি খোলার তদবির নিয়ে এসেছিল। কিন্তু আমরা রাজি হইনি।
বড় ঋণের এসব কোম্পানি ছাড়াও বিভিন্ন খাতের একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে দেশবন্ধুর। এর মধ্যে সার আমদানি ও বিপণনের কোম্পানির নাম ‘ফার্টিলাইজার মার্কেটিং করপোরেশন’। শিপিং ব্যবসার জন্য রয়েছে ‘নর্দান শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানি’। ভোগ্যপণ্য আমদানি ও বিপণনের কোম্পানি হলো ‘এমআর ট্রেডিং’। আবাসন খাতের কোম্পানির নাম ‘জিএম প্রোপার্টিজ’। আরো আছে ধানমন্ডির বিপণিবিতান ‘রাপা প্লাজা’। সম্প্রতি নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে ‘দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড’ নামে আরো একটি প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করেছেন গোলাম মোস্তফা।
ঋণ নেয়ার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকে জমা দেয়া ‘দেশবন্ধুর’ কাগজপত্রে গ্রুপটির বার্ষিক টার্নওভার দেখানো হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০৩ কোটি টাকা নিট মুনাফা হয় বলেও উল্লেখ করেছে দেশবন্ধু। যদিও ব্যাংকে দেখানো টার্নওভার ও নিট মুনাফার তথ্য অতিরঞ্জিত বলে মনে করেন ব্যাংকাররা।
তারা বলছেন, দেশবন্ধুর দেখানো ব্যবসার টার্নওভার যদি সত্যি হতো, তাহলে ঋণখেলাপি হওয়ার কথা নয়। গ্রুপটি কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিত্যনতুন খাতে বিনিয়োগ করছে। এক্ষেত্রে কিছু কোম্পানির জন্য ব্যাংক থেকে কোনো ঋণই নেয়নি। তার মানে তাদের হাতে বিনিয়োগ করার মতো অর্থ আছে। যদি তাই-ই হয়, তাহলে ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধে ইচ্ছা করেই ব্যর্থ হচ্ছেন। এমন প্রবণতা ‘ইচ্ছাকৃত’ ঋণখেলাপির পর্যায়ে পড়ে। দেশের ব্যাংকিং খাতের ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে গোলাম মোস্তফার সেলফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে এসএমএস পাঠিয়েও উত্তর পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুনে জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ৩০০ ঋণখেলাপির যে তালিকা প্রকাশ করা হয়, দেশবন্ধু সুগার মিল রয়েছে তালিকার ২১৪ নম্বরে। ওই তালিকায় প্রতিষ্ঠানটির ঋণ দেখানো হয় ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০৮ কোটি টাকা শ্রেণীকৃত। আর ৮৪ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। চলতি বছরের জুলাই শেষেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে দেশবন্ধু সুগার মিলকে খেলাপি প্রতিষ্ঠান হিসেবেই দেখানো হচ্ছে।