দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আসছে নতুন আইন

জীবন ইসলাম

দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূতকরণ বা অবসায়নসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আসছে নতুন আইন। এ লক্ষ্যে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে খসড়ার ওপর অংশীজনের মতামত চাওয়া হয়েছে।

খসড়ায় বলা হয়, মূলধন বা তারল্য, দেউলিয়াত্ব বা ব্যাংকের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ অন্য যে কোনো ঝুঁকির সময়োপযোগী সমাধানের জন্য আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার মাধ্যমে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে রেজল্যুশন ক্ষমতা দেওয়া প্রয়োজন। তাই এ অধ্যাদেশ চূড়ান্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনের বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে এই অধ্যাদেশের বিধান প্রাধান্য পাবে।

অধ্যাদেশের আওতায় দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনায় গঠিত হবে ‘ব্রিজ ব্যাংক।’ ‘ব্রিজ ব্যাংক’ হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা একটি ব্যর্থ ব্যাংক পরিচালনার জন্য তৈরি করা হবে। ব্রিজ ব্যাংক রেজল্যুশন প্রক্রিয়া চলাকালে নিরবচ্ছিন্ন ব্যাংকিং কার্যক্রম বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ বা অবসায়নসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ব্রিজ ব্যাংক ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক অস্থিতিশীলতা মোকাবিলার সময় প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং পরিষেবা নিশ্চিত করবে।

আমানত রক্ষা করা, সরকারি আর্থিক সহায়তা ন্যূনতম পর্যায়ে রেখে সরকারি তহবিলের সুরক্ষা, ব্যাংকের সম্পদের মূল্য হ্রাস এড়ানো এবং পাওনাদারদের লোকসান ন্যূনতম পর্যায়ে রাখাসহ আর্থিক খাতে সার্বিক স্থিতিশীলতায় বেশ কিছু উদ্দেশ্যে এ আইন হচ্ছে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়, এ অধ্যাদেশের অন্যান্য বিধান এবং আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে একটি তপশিলি ব্যাংক আর কার্যকরী নয়, অথবা কার্যকরী হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংককে এ অধ্যাদেশ অনুযায়ী রেজল্যুশন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

এতে আরও বলা হয়, আবশ্যক বিবেচিত হলে কোনো তপশিলি ব্যাংকের ওপর আশু সংশোধনমূলক ব্যবস্থা অথবা অন্য কোনো তত্ত্বাবধানমূলক ব্যবস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে ওই ব্যাংকের ওপর রেজল্যুশন পদক্ষেপ গ্রহণে বাধা দিতে পারবে না। যখন বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো তপশিলি ব্যাংককে রেজল্যুশন করার সিদ্ধান্ত নেবে, তখন তা লিখিতভাবে অবহিত করবে এবং এ অধ্যাদেশের অধীনে রেজল্যুশন ব্যবস্থার বাস্তবায়ন শুরু করবে। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক তৃতীয় পক্ষের কাছে রেজল্যুশন প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যাংকের শেয়ার, সম্পদ ও দায় হস্তান্তর করতে পারবে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ বলেন, দেশের অনেক ব্যাংক অকার্য্যকর হয়ে পরেছে। এসব ব্যাংকের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার সময় এসেছে। ব্যাংক বন্ধ সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কতটা স্বচ্ছতার সাথে কাজ করবে তা বিবেচ্য বিষয়।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংক অচল হলে তা বন্ধ করা অথবা একীভূত করার ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, দুর্বল ব্যাংক অবস্থা ভেদে একীভূত হবে অথবা বন্ধ করতে হবে। তবে তা অবশ্যই স্বচ্ছতার সাথে করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *