দক্ষিণ কোরিয়ার সুগন্ধির বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে
নভেল করোনাভাইরাসজনিত মহামারীর কারণে অনেক নতুন দিন দেখেছে বিশ্বের মানুষ। মৃত্যুর মিছিল যেমন দেখতে হয়েছে, তেমনি সংক্রমণ থেকে বাঁচতে নতুন নতুন উপায়ের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে প্রতিনিয়ত। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে ছোটখাটো শখের চর্চা শুরু করেছেন অনেকে, গড়ে উঠেছে নতুন অভ্যাসও। বিশেষ করে কেনাকাটার ক্ষেত্রে বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। যেমন আগের চেয়ে অনেক বেশি অনলাইন শপিংয়ের দিকে ঝুঁকেছে মানুষ। খবর কোরিয়া হেরাল্ড।
সাম্প্রতিক একটি জরিপের তথ্য বলছে, মহামারীকালে সুগন্ধি পণ্যের আকার ও ধরনে বেশ বড় রকমের পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে কোরিয়ার সাধারণ মানুষের মধ্যে সুগন্ধি কেনার হার বেড়েছে। ২০-৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে এ হার সবচেয়ে বেশি। বৈশ্বিক বাজার পর্যবেক্ষক সংস্থা ইউরোমনিটর বলছে, ২০১৮-১৯ সালের তুলনায় কোরিয়ার সুগন্ধির বাজার বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৩ সাল নাগাদ এ বাজারের আকার বেড়ে ৫৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলারে পৌঁছতে পারে।
লেখক পার্ক জি সুক বলেন, যখন মানুষ কোনো সংকটকাল পার হয়, তখন সে তার ঘ্রাণেন্দ্রীয়ের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। নিজেকে দ্রুত উজ্জীবিত করার সবচেয়ে ভালো উপায়গুলোর একটি হলো ভালো কোনো সুগন্ধির ঘ্রাণ নেয়া। এর মাধ্যমে দ্রুত হতাশার অনুভূতিগুলোকে দূর করা যায়।
কোরিয়ায় যে সুগন্ধি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে ধূপকাঠি। যখন এটি পোড়ানো হয়, তখন পুরো ঘর মিষ্টি গন্ধে ভরে যায়। যদিও ধূপকাঠি বা আগরবাতি মূলত ধর্মীয় কাজে ব্যবহার হয়, কিন্তু তরুণ কোরীয়রা এর নতুন ব্যবহার শুরু করেছেন। আর সেটি হলো সারাদিন কাজ শেষে ঘরে ফিরে ধূপকাঠি জ্বেলে তার সামনে বসে সেটি নিঃশেষ হতে দেখা। এ অভ্যাসকে বলা হচ্ছে হেয়াং-মেয়ং। বলা হচ্ছে, এ কাজের মাধ্যমে মন শান্ত হয়, মুদৃ সুগন্ধে মানসিক চাপ কমে যায়।
ইনহা ইউনিভার্সিটির কনজিউমার স্টাডিজ বিষয়ের অধ্যাপক লি ইউন হি বলেন, ভবিষ্যতে ধূপকাঠি বা আগরবাতি আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। এখন যেমন মানুষ দৃষ্টিনন্দন আসবাবপত্র দিয়ে ঘরবাড়ি সাজাতে চায়, তেমনি অচিরেই তারা চাইবে, তাদের ঘর যেন সবসময় মৃদু সুগন্ধে ভরে থাকে। তিনি বলেন, দেশ হিসেবে কোরিয়ার জাতীয় আয় বেড়েছে, মানুষের মনোযোগ পোশাক ও খাবার থেকে বেরিয়ে এখন বসবাসের জায়গার দিকে ঘুরে গেছে। সে হিসেবে এখন বেশির ভাগ তরুণই চান, তার বসবাসের ব্যক্তিগত স্থানটি যেন দেখতে সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি সুগন্ধিও হয়।
আরেক ধরনের সুগন্ধি এখন কোরিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেটি হলো নিশ পারফিউম। মূলত সুগন্ধি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষভাবে বিশেষ গ্রাহকদের জন্য এ সুগন্ধি তৈরি করে। ফলে এগুলোর দাম বেশ চড়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি দেখা গেছে, উচ্চমূল্যের সব নিশ পারফিউমও বিক্রির তালিকার শীর্ষে রয়েছে। ইউরোমনিটর বলছে, মোট সুগন্ধি বিক্রির ৯০ শতাংশই নিশ পারফিউম। এর থেকে কোরিয়ার মানুষের ব্যয় সক্ষমতারও একটি ধারণা পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারীর পর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার কোরিয়ার নতুন ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বাজার ও ফ্যাশন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যেহেতু আগের মতো পোশাক বা মেকআপ দিয়ে মানুষ নিজেতে পরিচিত করতে পারছে না, কারণ মুখের অর্ধেক ঢাকাই থাকছে মাস্কের আড়ালে। আবার বেশির ভাগ অফিসের কাজ বাড়ি থেকে করার কারণে বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণে তেমন দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছে না। তাই নিচের ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসেবে সুগন্ধিকেই বেছে নিচ্ছেন তরুণ কোরীয়রা।
বিশেষ করে নিজের ব্যক্তিত্ব প্রকাশের চমত্কার ও অনন্য মাধ্যম হিসেবে তরুণরা বেছে নিচ্ছেন নানা ধরনের সুগন্ধি। এজন্য দেদার খরচ করতেও পিছপা হচ্ছেন না কোরিয়ার তরুণরা। আবার একজনের সঙ্গে যেন অন্যজনের সুগন্ধির সুবাস মিলে না যায়, সেদিকেও রাখতে হচ্ছে খেয়াল। ফলে বাড়ছে নিশ পারফিউমের বাজার। এ কারণে সুগন্ধি প্রস্তুতকারকরাও নিশ পারফিউমের দিকে বেশি জোর দিচ্ছেন। বিশ্বের অনেক বড় বড় সুগন্ধির প্রতিষ্ঠানও কোরিয়ায় শাখা খুলতে শুরু করেছে।
কেবল ঘরের বা শরীরে ব্যবহারের সুগন্ধিই নয়, কোরীয় তরুণরা এখন ত্বকচর্চার সামগ্রীতেও সুন্দর সুবাস চাইছেন। ভোক্তা চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে বিখ্যাত কে-বিউটি ব্র্যান্ডগুলো তাদের ত্বকচর্চার পণ্যে অনন্য সুগন্ধ যুক্ত করতে শুরু করেছে। ক্রিম, লোশন বা সেরামের গন্ধ যেন ভোক্তার পছন্দ হয়, তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণাও। বিশেষ করে চমত্কার সুগন্ধিযুক্ত হ্যান্ড ক্রিম এখন বেশ জনপ্রিয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুগন্ধিযুক্ত কে-বিউটি পণ্যগুলো আগামী বছরের সৌন্দর্য প্রবণতা হিসেবে গণ্য হবে। সেদিকেই এখন এগোচ্ছে শিল্পটি।