থাইল্যান্ডে চালের দামে রেকর্ড

স্টাফ রিপোর্টার

থাইল্যান্ডে চালের রফতানি মূল্য চলতি সপ্তাহে বেড়ে দেড় বছরের সর্বোচ্চে উন্নীত হয়েছে। স্থানীয় বাজারে ক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি ও মুদ্রার শক্তিশালী বিনিময় মূল্য দাম বাড়াতে সহায়তা করেছে। এছাড়া বলিষ্ঠ চাহিদার কারণে এশিয়ার অন্য দেশগুলোয় রফতানি মূল্য কয়েক মাসের সর্বোচ্চে অবস্থান করছে। খবর বিজনেস রেকর্ডার।

এ সপ্তাহে থাইল্যান্ডের ৫ শতাংশ ভাঙা চাল টনপ্রতি ৪৮০ ডলারে রফতানি হচ্ছে, গত সপ্তাহে যা ছিল ৪৫২-৪৬৫ ডলার। দেশটির মুদ্রা বাথের মূল্যবৃদ্ধি দাম বাড়িয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

ব্যাংককভিত্তিক এক ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় বাজারে চালের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়ায় রফতানি বাড়ানোর লক্ষ্যে রফতানিকারকরা কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয়ের পরিমাণও বাড়িয়েছেন। ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ইন্দোনেশিয়া কয়েকশ হাজার টন চালের ক্রয়াদেশ দিয়েছে।

এদিকে ভিয়েতনাম ফ্রি অন বোর্ড (এফওবি) চুক্তিতে প্রতি টন ৫ শতাংশ ভাঙা চাল ৪৫৮ ডলারে রফতানির প্রস্তাব করছে, যা গত বছরের জুলায়ের পর সর্বোচ্চ। গত সপ্তাহেও দেশটি একই দামে চাল রফতানি করেছে। তবে নতুন বছরসহ বিভিন্ন ছুটির কারণে বর্তমানে ব্যবসার গতি কিছুটা ধীর বলে জানিয়েছেন হো চি মিন সিটিভিত্তিক ব্যবসায়ীরা।

ভিয়েতনাম ফুড অ্যাসোসিয়েশন জানায়, ভিয়েতনামিজ চালের ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা কয়েকদিনে রফতানি মূল্য বাড়াতে সহায়তা করেছে। ফিলিপাইনে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি চাল রফতানি করা হচ্ছে। এদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেশটি আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির নীতি থেকে সরে এসেছে।

অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলেন, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশসহ অন্যান্য ক্রেতা চাল আমদানির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ দরপত্রের মাধ্যমে এক লাখ টন ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে। আমদানি বাড়ানোর মাধ্যমে মজুদ পরিপূর্ণ করতে চায় দেশটি। উদ্দেশ্য স্থানীয় বাজারে শস্যটির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা।

বিশ্বের শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ ভারত। চলতি সপ্তাহে দেশটির ৫ শতাংশ ভাঙা সেদ্ধ চালের দাম আগের সপ্তাহের মতোই অপরিবর্তিত। প্রতি টন রফতানি হচ্ছে ৩৭৫ ডলারে, যা নভেম্বরের শেষ সময়ের পর সর্বোচ্চ। মুম্বাইভিত্তিক ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিম্নমুখী দামের কারণে ক্রেতারা থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের তুলনায় ভারত থেকে বেশি আমদানি করছেন।

ভারতের চাল রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বিভি কৃষ্ণ রাও বলেন, রফতানি বাজারে বর্তমানে সাদা চালের চেয়ে সেদ্ধ চালের চাহিদা বেশি। এছাড়া প্রতিযোগিতার বাজারে বেশ ভালো অবস্থানে ভারতীয় চালের বাজারদর।

গত বছরের ৩০ নভেম্বর ভাঙা চালসহ অর্গানিক নন-বাসমতি চালের ওপর থেকে রফতানি নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছে ভারত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রফতানি নীতিতে আনা পরিবর্তন সফলতার মুখ দেখেছে। এরই মধ্যে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। পাশাপাশি দামও স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। এ কারণেই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।

তিন মাস ধরে এসব চাল রফতানি বন্ধ ছিল। ফলে প্রধান আমদানিকারক দেশগুলো বিপাকে পড়ে। ফের রফতানি শুরুর ঘোষণা আসায় আমদানিকারক দেশগুলোয় স্বস্তি ফিরেছে। শস্যটির রফতানি মূল্যও কমে এসেছে।

আন্তর্জাতিক চাল বাণিজ্যে ৪০ শতাংশ বাজার হিস্যাই ভারতের। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশটি সব মিলিয়ে ২ কোটি ১২ লাখ ৩০ হাজার টন চাল রফতানি করে। আগের অর্থবছর রফতানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮০ হাজার টন। কভিড-১৯ মহামারী শুরুর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশটি রফতানি করেছিল ৯৫ লাখ ১০ হাজার টন। অর্থাৎ গত অর্থবছর চাল রফতানি মহামারীপূর্ব পর্যায় ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ বছর পণ্যটি রফতানিতে মন্দার মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *