তামিমের অসাধারণ সেঞ্চুরি

উদ্বোধনী জুটিতে তামিম-সাদমান কিংবা দ্বিতীয় উইকেটে মুমিনুল-তামিম যেমন শুরু করেছিলেন পরের ব্যাটসম্যানরা আর তা ধরে রাখতে পারেননি।

যে কারণে প্রথম সেশনের এক পর্যায়ে ১ উইকেটে ১২১ রান থাকা বাংলাদেশ চা বিরতিতে যেতে যেতে পরিণত হলো ৭ উইকেটে ২০৭ রানের দলে। তামিম ইকবাল একাই খেলেছেন ১২৬ রানের ইনিংস। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪ রান করেছেন উদ্বোধনী জুটিতে তার সঙ্গী সাদমান ইসলাম।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে চা বিরতি পর্যন্ত ৭ উইকেটে ২০৭ রান করেছে বাংলাদেশ। বিরতির ঠিক আগের ওভারে সাজঘরে ফিরেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ১৭ রান করে অপরাজিত রয়েছেন লিটন দাস।

ওয়ানডে সিরিজটা ভালো কাটেনি, তিন ম্যাচে করেছিলেন মোটে ১০ রান। সেই তামিমই টেস্ট সিরিজের প্রথম ইনিংসে করলেন পুরো ওয়ানডে সিরিজের প্রায় ১৩ গুণ রান। হ্যামিল্টনের সবুজ গালিচায় ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি আর নেইল ওয়াগনারের গতি সামলে খেলেছেন দাপুটে ১২৬ রানের ইনিংস।

ম্যাচের আগেই নিশ্চিত হয়েছিল বাংলাদেশের জন্য সবুজ ফাঁদ প্রস্তুত করেছে স্বাগতিকরা। সে ফাঁদে ফেলতে টস জয়টাও ভালোভাবেই সারেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। আমন্ত্রণ জানান তামিম-সাদমানকে ব্যাটিংয়ে নামার।

ব্যাটিং স্টান্স, ফ্রন্ট ফুট ডিফেন্স কিংবা হুক শটটা অবিকল তামিমের মতো করেই খেলেন তরুণ ওপেনার সাদমান ইসলাম অনিক। প্রথমবারের মতো যখন নামলেন তামিমের সঙ্গে ব্যাটিং করতে তখন ক্ষণিকের জন্য বিভ্রান্তিই তৈরি হলো ‘দুই’ তামিমকে দেখে।

বড় তামিম এবং ছোট সাদমান মিলে বোল্ট-সাউদির প্রথম স্পেলটা সামলেছেন দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে। তামিম একপাশ থেকে সাজিয়েছেন স্ট্রোকের ফুলঝুরি আর সাদমানের দৃঢ় ব্যাট থেকে বিরতি দিয়ে দিয়ে এসেছে দারুণ কিছু শট। দুজনের উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশ পায় ৫৭ রান, তাও মাত্র ১০.২ ওভারেই।

বোল্টের যে ডেলিভারিতে আউট হন সাদমান, তাতে আউট হতে পারতেন বিশ্বের যেকোনো ব্যাটসম্যানই। যা মাত্রই দ্বিতীয় টেস্ট ইনিংস খেলতে নামা সাদমানের জন্য ছিলো ভয়ঙ্করের চেয়েও বেশি কিছু! তীক্ষ্ণ লেট সুইংয়ে বল সোজা আঘাত হানে অফস্টাম্পে। অপমৃত্যু ঘটে সাদমানের ৩২ বলে ২৪ রানের ইনিংসের। তামিম তখন অপরাজিত ৩০ বলে ৩৩ রান করে।

সাদমান ফেরার পর নিজের হাফসেঞ্চুরি করতে তামিম খরচ করেন মাত্র ৭ বল। ইনিংসের তেরোতম ওভারে বোল্টকে টানা তিন চার মেরে মাত্র ৩৭ বলে পৌঁছে যান নিজের ২৬তম হাফসেঞ্চুরিতে। যা পরে রূপ নেয় ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরিতে। বোল্টের সে ওভারে আরও এক বাউন্ডারি হাঁকান তামিম।

উদ্বোধনী জুটির আক্রমণাত্মক ব্যাটিংটা মুমিনুলকে সঙ্গে নিয়েও চালিয়ে যান তামিম। মনে হচ্ছিলো লাঞ্চ ব্রেকের আগেই হয়তো সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যাবেন দেশসেরা এ ব্যাটসম্যান। কিন্তু নেইল ওয়াগনার আক্রমণে আসার পর খানিক বিরতি নেন তামিম, খেলতে শুরু করেন দেখেশুনে।

লাঞ্চ ব্রেকের ঠিক আগের ওভারে মুমিনুল হক উইকেটের পেছনে ধরা পড়লে ভাঙে ৬৪ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। যেখানে তিনে নামা মুমিনুলের অবদান কেবল ১২ রান। তামিমের ব্যাটের রান তখন ৮২ বলে ৮৫ রান। ২৮ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১২২ রান করে লাঞ্চ ব্রেকে যায় বাংলাদেশ।

বিরতি থেকে ফিরে নিজের সেঞ্চুরি পূরণ করতে বেশি সময় নেননি তামিম। ওয়াগনারকে বাউন্ডারি মেরে মাত্র ১০০ বলেই ক্যারিয়ারের নবম, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম এবং বিদেশের মাটিতে চতুর্থ সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যান তামিম। কিন্তু অপরপ্রান্তে যথাযথ সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হন মিঠুন।

৩৫তম ওভারে দলীয় ১৪৭ রানের মাথায় ফেরেন ৩৫ বলে ৮ রান করা মিঠুন। দুই ওভার পর সাজঘরের পথ ধরেন ৬ বলে ১ রান করা সৌম্য সরকারও। একা বনে যান তামিম, তবু থামাননি আক্রমণ। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে গড়েন ৩১ রানের জুটি, যেখানে তার একার রানই ২২।

টিম সাউদির করা ৪০তম ওভারে হাঁকান ইনিংসের একমাত্র ছক্কা। সে ওভারেই বাউন্ডারি মারেন আরও দুইটি। কিন্তু অতি আক্রমণাত্মক হওয়ার মাশুলই যেন দেন তামিম। কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের নিরীহ দর্শন এক ডেলিভারিতে ব্যাট হাঁকিয়ে গালিতে ধরা পড়েন তিনি। থেমে যায় ১২৮ বলে ২১ চার ও ১ ছক্কায় খেলা ১২৬ রানের ইনিংসটি।

এরপর বেশিক্ষণ থাকা হয়নি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদেরও। ওয়াগনারের বুক বরাবর ধেয়ে আসা শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ফাইন লেগ বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন রিয়াদ। আউট হওয়ার আগে ৪৩ বলের সংগ্রামী ইনিংসে ৫ চারের মারে ২২ রান করেন তিনি। অধিনায়কের আউটের পরই মূলত শেষ হয়ে যায় বড় সংগ্রহের সম্ভাবনা।

যে আশা আরও কমে যায় চা বিরতির ঠিক আগের ওভারের প্রথম বলেই মেহেদি মিরাজ ছক্কা হাঁকিয়ে দ্বিতীয় বলেই শর্ট লেগের হাতে ধরা পড়লে। ২০৭ রানে সপ্তম উইকেট হারিয়ে রীতিমত ধুঁকছে বাংলাদেশ। সকালে উজ্বল সূর্য্যটা যেন ম্লান হতে শুরু করেছে বিকেল নামার আগেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *