তাইওয়ানের রফতানি ক্রয়াদেশে বড় পতন

স্টাফ রিপোর্টার

তাইওয়ানের রফতানি ক্রয়াদেশে বড় ধরনের পতন হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০০৯ সালের আর্থিক সংকটের পর সবচেয়ে বড় পতনের মুখোমুখি হয়েছে অঞ্চলটি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান সুদহার এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকির মধ্যেই রফতানি ক্রয়াদেশে এমন নেতিবাচক প্রবণতার তথ্য প্রকাশ করল তাইওয়ান।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে ইলেট্রনিকস পণ্য সরবরাহ করে তাইওয়ান। বিশেষ করে অত্যাধুনিক সেমিকন্ডাক্টরের বৈশ্বিক চাহিদার বড় একটি অংশ সরবরাহ করে দ্বীপটি। সুতরাং রফতানি ক্রয়াদেশে এমন পতন বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি পণ্যগুলোর চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, নভেম্বরে বিদেশ থেকে ক্রয়াদেশ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ শতাংশ কমেছে। এ হার ২০০৯ সালের মার্চের পর সর্বোচ্চ। সে সময় বিশ্বজুড়ে চলা আর্থিক সংকটে প্রায় প্রতিটি দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাছাড়া গত মাসে রফতানি ক্রয়াদেশ পতনের এ হার পূর্বাভাসের চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে। জরিপে অর্থনীতিবিদরা প্রায় ১৩ শতাংশ সংকোচনের পূর্বাভাস দিয়েছিল।

অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ইকোনমিকস ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বৈশ্বিক মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছিল। টানা তিন প্রান্তিকে বৈশ্বিক মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) সংকুচিত হওয়ারও পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমান পরিস্থিতি সেই মন্দার চিত্র তুলে ধরছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাইওয়ানের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনও রফতানি কমে যাওয়ার তথ্য জানিয়েছে। নভেম্বরে চীনের শিল্পোৎপাদন ও খুচরা বিক্রির সূচক ছয় মাসের সর্বনিম্নে নেমেছিল। পরিষেবা খাতে দুর্বলতার মধ্যে গত মাসে খুচরা বিক্রি বছরওয়ারি ৫ দশমিক ৯ শতাংশ এবং গাড়ি উৎপাদন ৯ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে।

একদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়িয়ে যাচ্ছে প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি চীনের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের কারণে বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়িক মনোভাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্প্রতি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে আবারো কভিড সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। চলতি মাসেই চীন হঠাৎ করে জিরো কভিড নীতি থেকে সরে আসে। পাশাপাশি প্রায় তিন বছর ধরে চালিয়ে আসা গণপরীক্ষার কার্যক্রমও বন্ধ করে দেয়া হয়। এ অবস্থায় দেশটিতে করোনা সংক্রমণ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে চীনের অর্থনৈতিক সংকট আরো বাড়তে পারে। সব মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি পণ্যের চাহিদায় আরো পতন হতে পারে।

কানাডা-চায়না বিজনেস কাউন্সিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নোয়াহ ফ্রেজার বলেন, চীনে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় খুচরা ও ভোক্তানির্ভর খাতগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। এমনিতেই তারা সীমিত কর্মী নিয়ে কাজ করে। এর মধ্যে আবার অসুস্থতার কারণে কিছু কর্মী কাজে না আসায় বিপর্যয় তৈরি হচ্ছে। এজন্য বড় বড় খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেয়ে বন্ধ রাখাকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *