ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গায় ছুটলো ট্রেন
পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৭ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনযাত্রার উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
উদ্বোধনের আগে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য এই রেল যোগাযোগ যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। তিনি বলেন, ঢাকা-ভাঙ্গা রেল যোগাযোগ উদ্বোধনের পর যোগাযোগ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসবে। এর সুফল সারাদেশের মানুষ পাবে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নপূরণে প্রথমবারের মতো ঢাকা-ভাঙ্গা পরীক্ষামূলক ট্রেনযাত্রা শুরু হলো। ট্রেনটিতে যাত্রী হিসেবে রয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এছাড়া পদ্মার দুই পাড়ের সংসদ সদস্যরাও রয়েছেন এই ট্রেনযাত্রায়। এই যাত্রায় ঢাকা-ভাঙ্গা ৮২ কিলোমিটার নতুন ব্রডগেজ রেলপথ যুক্ত হচ্ছে দেশের রেল যোগাযোগে।
জানা গেছে, পদ্মা সেতু হয়ে আগামী অক্টোবরেই ঢাকা থেকে ট্রেন যাবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত। আগামী ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্পের ট্রেন চলাচল। উদ্বোধনের দিন সুধীসমাবেশও হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এখনো সেটি চূড়ান্ত হয়নি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ৪ মে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। এছাড়া ৪৩ কিলোমিটার লুপ লাইন (স্টেশনের আগে-পরে বাড়তি লাইন) নির্মাণসহ নতুন ট্রেন চালুর জন্য ১০০টি আধুনিক যাত্রীবাহী বগি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৮২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এই পথে ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচলের লক্ষ্যে কোনো রেলক্রসিং রাখা হয়নি। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত আগের ৬টিসহ ২০টি আধুনিক স্টেশন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। পরে বেড়ে প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকায়।
আরও পড়ুন: ঢাকা-ভাঙ্গা ট্রেন চলবে ১০ অক্টোবর, আগামী জুনে যাবে যশোর
চীনের অর্থায়নে জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজ করছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ (সিআরইসি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ২৬৬ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। বাকি অর্থ ব্যয় করছে বাংলাদেশ সরকার। সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের জুন মাসে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ২০৩০ সাল নাগাদ রেলপথটির ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে ৭ জোড়া ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে ৫ জোড়া ট্রেন চলবে। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বছরে ৪০ লাখ, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে বছরে ১৭ লাখ ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব বলে ধরা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুর সড়ক পথ সাধারণ জনগণের জন্য খুলে দেওয়ার পর থেকে রেলওয়ে বাড়তি গুরুত্ব দেয় মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের কাজে। এরপরও ঢাকা থেকে যশোর অংশের কাজ শেষ করতে না পারায় পুরো পথের পরিবর্তে প্রথমে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ‘স্টেশনগুলোর কাজ চলছে। উদ্বোধনের তিন মাসের মধ্যে প্রধান প্রধান স্টেশনগুলো চালু হয়ে যাবে। তখন ট্রেনের সংখ্যাও বাড়বে। আগামী বছর যশোর পর্যন্ত রেল চালুর লক্ষ্য নিয়ে কাজ এগিয়ে চলছে।’