ডেল্টা লাইফে মাস্ক কেলেঙ্কারি

স্টাফ রিপোর্টার

এবার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জীবন বিমা কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে মাস্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। মাস্ক কেলেঙ্কারির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রশাসক সুলতান উল-আবেদীন মোল্লাসহ একাধিক কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় আদালত সমন ইস্যুর আদেশ দিয়েছেন।

জানা গেছে, ডেল্টা লাইফ ২০২১ সালের মে মাসে লাজিম মিডিয়া থেকে ২ লাখ ১৫ হাজার মাস্ক কেনে। প্রতিটি ৫০ টাকা করে এই মাস্কের মূল্য ধরা হয় ১ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যে সময় এই মাস্ক কেনা হয়, সে সময় ডেল্টা লাইফে প্রশাসক হিসেবে ছিলেন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাবেক সদস্য সুলতান উল-আবেদীন মোল্লা।

এই মাস্ক অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত লাভের জন্য সুলতান উল-আবেদীন মোল্লার নির্দেশে কেনা হয়েছে বলে মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে সিআর মামলা দায়ের করেন ডেল্টা লাইফের এক পরিচালক জেয়াদ হোসেন। সুলতান উল-আবেদীন মোল্লার সঙ্গে ডেল্টা লাইফের ডিএমডি মনজুরে মাওলা, ইভিপি কামরুল হক এবং এম হাফিজুর রহমান খান এ কার্যক্রমে জড়িত বলে অভিযোগ করেন ডেল্টা লাইফের এই পরিচালক।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদের কাছে প্রথম দুই কোটি টাকা উৎকোচ দাবি করে। পরিচলনা পর্ষদ অপারগতা প্রকাশ করলে পরে ১ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। এই টাকা না দেওয়ায় ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সুলনাত উল-আবেদীন মোল্লাকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।

এতে আরও বলা হয়েছে, সুলতান উল-আবেদীন মোল্লা প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নির্দেশে ওই বছরের ৪ মে অসৎ উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে ব্যক্তিগত লাভের জন্য ২ লাখ ১৫ হাজার পিস মাস্ক ৫০ টাকা হিসেবে ক্রয় করার জন্য ডেল্টা লাইফের কর্মকর্তা মো. কামরুল হক এবং মো. মনজুরে মাওলা নোট প্রস্তুত করেন। কোম্পানির ক্রয়, সংগ্রহ এবং পেমেন্ট পদ্ধতি লঙ্ঘন করে ওই দিনই বিনা টেন্ডারে পলিসিহোল্ডার এবং কোম্পানির স্বার্থবিরোধী নোট সাবমিট এবং অনুমোদন করা হয়। পরদিন ৫ মে লাজিম মিডিয়ার কাছ থেকে কোটেশন গ্রহণ করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

অভিযোগে বলা হয়েছে, মো. কামরুল হক এবং মো. মনজুরে মাওলার অনুমোদনে ২ লাখ ১৫ হাজার মাস্ক ১ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। যার প্রতিটির মূল্য ধরা হয় ৫০ টাকা, যা ওই সময়ের বাজার মূল্য অপেক্ষা অনেক বেশি। লাজিম মিডিয়াকে কার্যাদেশ দিয়ে ৫০ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করা হয়। আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। এতে কোম্পানির পলিসিহোল্ডার এবং শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতি করে নিজেরা লাভবান হয়েছেন।

এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন। পিবিআই তদন্ত করে সুলতান উল-আবেদীন মোল্লা, মো. কামরুল হক এবং মো. মনজুরে মাওলার বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৪০৮/৪২০/৩৪ ধারায় অপরাধ সত্য প্রমাণিত হয়েছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দালিখ করে।

এই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে সম্প্রতি অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুবকর ছিদ্দিকের আদালত এই আসামিদের বিরুদ্ধে সমন ইস্যু করেছেন। সেই সঙ্গে আগামী ২৩ মে সমন জারির প্রতিবেদন প্রাপ্তি এবং উভয় পক্ষের উপস্থিতির জন্য ধার্য করেছেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সুলতান উল-আবেদীন মোল্লা বলেন, মাস্ক নিয়েছে, ডেলিভারি দিয়েছে। দামের বিষয়; এটা তো একটা রিলেটিভ মেটার। মাস্ক তো বিভিন্ন দামের আছে। কোনোটা বেশি কোনোটা কম, সেটা কে এক্সামিনেশন করছে। বিমা আইন অনুযায়ী প্রশাসক হিসেবে আমার বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে মামলা হবে না। তারপরও তারা করেছে। এখন দেখেন ম্যাজিস্ট্রেট কী করেন। আমার আইনজীবীও থাকবেন।

পিবিআই’র তদন্তে অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যতদূর বুঝি ওরা (জেয়াদ রহমান) ম্যানেজ করে এটা করিয়েছেন। পিবিআই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, আমরা যে কথাগুলো বলেছি সেগুলো ওই তদন্ত প্রতিবেদনে নেই।

তিনি আরও বলেন, আমার পর ওখানে (ডেল্টা লাইফ) আরও দুজন প্রশাসক যোগ দিয়েছে। আমি অর্ডার দিয়েছি, তার পরের প্রশাসক পেমেন্ট দিয়েছে। অথচ তাকে এই মামলা থেকে বাদ দিয়েছে। তাকেও আসামি করা হয়েছিল, কিন্তু পিবিআই বাদ দিয়েছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন পিবিআই কীভাবে কাজ করছে।

এদিকে সুলতান উল-আবেদীন মোল্লা আইডিআরএ সদস্য থাকা অবস্থায় ২০১৭ সালে তার নামে মোবাইল চার্জার কিনতে ২২ হাজার ২৯০ টাকা খরচ দেখানো হয়। আইডিআরএ থেকে এ টাকা দেওয়া হয় চেকের (চেক নম্বর-২২৯২৯৩৪) মাধ্যমে। এ নিয়ে ২০১৯ সালে জাগো নিউজে ‘একটি মোবাইল চার্জারের দাম ২২ হাজার টাকা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

সে সময় সুলতান উল-আবেদীন মোল্লা বলেন, আইডিআরএ থেকে কখনো মোবাইলের চার্জার কেনার টাকা নেইনি। এছাড়া মোবাইলের চার্জারের দাম কিছুতেই ২২ হাজার টাকা হতে পারে না। এটা অবশ্যই অস্বাভাবিক। এখন তো বালিশসহ কত কিছু বেরিয়ে আসছে। খরচের খাতে আমার নাম দেখালে তো কিছু করার নেই। আমি এখন আইডিআরএ-তে নেই। আমি থাকা অবস্থায়ও কেউ অগোচরে এটা করলে আমার কিছু করার নেই। আমার জানা মতে এমন পার্সেস (ক্রয়) আমি করিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *