ডিমলায় হচ্ছে ৫০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র

স্টাফ রিপোর্টার

তিন বেসরকারি উদ্যোক্তার সমন্বয়ে গঠিত একটি কনসোর্টিয়াম নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় বিল্ড ওন অপারেট (বিওও) ভিত্তিতে ৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে। এ কেন্দ্র থেকে ২০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ কিনতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৭৩২ কোটি ৮ লাখ টাকা।

সর্বজনীন বিদ্যুৎসেবা এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়ন ও প্রসারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনাময় উৎস সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ সৌর বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এতে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

বেসরকারি খাতে বিওও ভিত্তিতে আইপিপি হিসেবে এএসকে নিউ এনার্জি কোম্পানি লিমিটেড, এজে পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এবং এটিএন সলিউশনস লিমিটেডের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম ডিমলায় ৫০ মেগাওয়াটের (এসি) সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগে একটি প্রস্তাব দাখিল করে। স্পন্সর কোম্পানি নিজ অর্থে ও নিজ ব্যবস্থাপনায় প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান, বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ট্রান্সমিশন লাইন, সাব-স্টেশন নির্মাণসহ প্রকল্পের সব ব্যয় নির্বাহ করবে।

স্পন্সর কোম্পানি যখন তাদের প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দেয়, সে সময় তারা উৎপাদিত বিদ্যুতের ট্যারিফও প্রস্তাব করে। কোম্পানিটি ২০ বছর মেয়াদে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম ০.১৩৫২ ডলারের সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪.৪৯৩ টাকা দাবি করে।

ভূমি/সাইট পরিদর্শন কমিটি স্পন্সরের প্রস্তাবিত স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনের সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রস্তাবটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কারিগরি কমিটির কাছে পাঠানো হলে কমিটি প্রতিবেদনে প্রস্তাবটি আর্থিক,বাণিজ্যিক ও কারিগরিভাবে বিবেচনাযোগ্য মর্মে মতামত দেয়। এ প্রকল্পের আওতায় উৎপাদিতব্য বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশনের বিষয়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) মতামত নেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিতব্য বিদ্যুৎ স্পন্সর কোম্পানির খরচে প্রকল্প স্থান থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার ১৩২ কেভি ডাবল সার্কিট লাইন নির্মাণ করে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের জলঢাকা ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রে ইভাকুয়েট করা যেতে পারে বলে অভিমত দেওয়া গয়েছে। স্পন্সর কোম্পানি এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বাবিউবো) ১৯৮৩তম সাধারণ বোর্ড সভায় প্রস্তাবিত সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে স্পন্সরের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করে চুক্তি সম্পাদন করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রী (প্রধানমন্ত্রী) নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

গত ১০ এপ্রিল প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির সঙ্গে স্পন্সরের নেগোসিয়েশন সভা হয়। প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা, আর্থিক সক্ষমতা ও কারিগরি যোগ্যতা, জমি সংগ্রহ, প্রকল্প সাইট, প্রকল্পের ইনিশিয়াল এনভায়নরমেন্ট অ্যাসেসমেন্ট (আইইএ), পাওয়ার ইভাকুয়েশন, ট্রান্সমিশন লাইন এবং সাব-স্টেশন নির্মাণ প্রভৃতি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে স্পন্সর কোম্পানির দাখিল করা ট্যারিফ কমানোর জন্য বলা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে স্পন্সর কোম্পানি প্রাথমিক পর্য়ায়ের প্রস্তাবিত দর কমিয়ে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম ১৪.৪৯৩ টাকার পরিবর্তে ১০.৬৯৮টাকা/কিলোওয়াট ঘণ্টা প্রস্তাব করে।

নেগোসিয়েটেড ট্যারিফ অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ‘নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে বিদ্যুৎ কেনা হলে ২০ বছর মেয়াদে ১২ শতাংশ ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর ও ১৮ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টরে ওই কোম্পানিকে ১ হাজার ৭৩২ কোটি ৮ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *