ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের যত্ন

আমাদের দেহের অগ্ন্যাশয় যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন না তৈরি করতে পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়,তাহলে ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। গবেষকরা বলছেন, যেসব দেশ উন্নত হচ্ছে, সেখানে ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়ছে। ডায়াবেটিসে শরীরের রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা কমে যায়।

এর ফলে কোথাও কেটে গেলে বা ক্ষত হলে সহজে ক্ষত পূরণ হয় না। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির অসচেতনতা ও অযত্নের ফলে কখনো কখনো পায়ের কোনো অংশ বা পা কেটে দেওয়ার মতো অবস্থা হয়ে পড়ে। আসুন জেনে নেই ডায়াবেটিস রোগীরা কীভাবে করবেন তাদের পায়ের যত্ন।

রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলে এটি পায়ের স্নায়ুর ওপর প্রভাব ফেলে। পায়ের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রাথমিক পর্যায়ে পিন ফোঁটার মতো অনুভূতি হয় এবং কিছু সময় পর পায়ের অনুভূতি কমে যায়। তখন পায়ে কোনো ব্যথা বা আঘাত টের পাওয়া যায় না। এ রোগে পায়ের রক্ত চলাচলও কমে যেতে পারে।

রক্ত চলাচল  কম থাকলে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়

ব্যায়ামের সময় বা হাঁটার সময় পায়ে ব্যথা হয়। পায়ে কোনো আঘাত পেলে সহজে সারে না। এমনকি পায়ের কোনো কাটাছেড়াও সহজে ভালো হয় না। ত্বক অতিমাত্রায় শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। এর ফলে পায়ের পাতা ফেটে যায়। গোড়ালি ফেটে যেতে পারে এবং দুই পায়ের মাঝখানে ঘা হতে পারে।এই রোগের ফলে পায়ে বিভিন্ন রোগব্যাধির সংক্রমণও বেড়ে যায়।

পায়ের যত্ন

চিকিৎসকের কাছে পা পরীক্ষা

ডায়াবেটিস রোগী হলে প্রতিবার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পা অবশ্যই পরীক্ষা করাতে হবে।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা

পা সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।

নখ কাটায় সতর্কতা

খুব সাবধাণতার পায়ের নখ কেটে ছোট করে রাখতে হবে। তবে খেয়াল করতে হবে কাটার সময় যেন নখ সোজা হয়। নখের ধারগুলোও যেন মসৃণ হয়।

ক্রিম-লোশন ব্যবহারে সতর্ক

ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে পায়ে ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন। তবে আঙ্গুলের মাঝখানে কখনোই লোশন ব্যবহার করবেন না।

ব্যায়াম করা

পায়ে যেন রক্ত চলাচল সচল থাকে সেজন্য হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে। পা ভাজ করে আবার সোজা করে নিতে হবে। এভাবে  দুই মিনিট করা যেতে পারে।

জুতা, মোজা পরার সময় সতর্কতা

জুতা বা মোজা পরার আগে ভালো করে পরীক্ষা করে নিন, যাতে এর ভেতর এমন কোনো বস্তু না থাকে যার ফলে পায়ে ব্যথা লাগতে পারে। প্রতিবার জুতা খোলার আগেও পা পরীক্ষা করে নিন। যেসব জুতা আরামদায়ক নয় এসব জুতা পরবেন না। বন্ধ ও আরামদায়ক স্যান্ডেল ব্যবহার করুন। খালি পায়ে হাঁটবেন না। মোজা ব্যবহারের সময় সুতি বা উলের মোজা পরুন।

শুষ্ক চামড়া হাত দিয়ে না ছেড়া

পায়ের শুক্ষ চামড়া নিজে নিজে হাত দিয়ে কাটবেন না।

পায়ের রং পরীক্ষা করা

পায়ের রং বদলাচ্ছে কি না বা পায়ে ফোস্কা পড়ছে কি না দেখুন।

এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না

সারক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না। অনেক্ষণ একভাবে বসেও থাকা যাবে না।

প্রতিদিন পা পর্যবেক্ষণ

সম্ভব হলে প্রতিদিন পা পর্যবেক্ষণ করুন। পায়ের ওপরের দিক আঙুলের ফাঁক এবং পায়ের তলা ভালোভাবে পরীক্ষা করুন। প্রয়োজন হলে পা ভালোভাবে পরীক্ষার জন্য পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিন।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন

পায়ে ব্যথা হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
পা লাল হলে বা রঙের পরিবর্তন হলে এবং  পায়ে ক্ষত বা ফোস্কা দেখা দিলেও চিকিৎসকের কাছে যাবেন।
পা খুব গরম হয়ে গেলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
এ ছাড়া পায়ে কোনো ধরনের দুর্গন্ধ হলেও চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি।
লেখক : ডা. সাবিকুন নাহার, প্রভাষক, কুমুদিনী ওমেনস মেডিকেল কলেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *