ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণ সরকারকে কঠোর হতে হবে

জীবন ইসলাম

করোনাকালীন সময়ে এলসি’র বিপরীতে পাওনা পরিশোধে ব্যাংকগুলো সময় নিয়েছে। ওই পাওনা সাম্প্রতিক সময়ে একযোগে পরিশোধ করতে হচ্ছে। তার উপর নতুন আমদানি এবং টাকার অবমূল্যায়ণ হওয়ায় ডলারের চাহিদা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বাজার নিয়ন্ত্রেণে রাখার জন্য ব্যাংকগুলোতে ডলার সারপ্লাস হলে ক্রয় করে; আবার সংকট হলে ডলার বিক্রি করে। এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।
সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেই কৌশল কাজে আসছে না। কারণ করোনাকালীন সময়ে এলসি’র বিপরীতে পাওনা বন্ধ থাকায় এখন তা পরিশোধে চাপ পরেছে। তার উপর বিদেশে চিকিৎসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদান, ভ্রমন এবং নয়া এলসি’র চাপে ডলারের চাহিদা একযোগে বৃদ্ধি পায়।
এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কতিপয় ব্যাংক, মানি এক্সচেঞ্জ এবং সাধারন ব্যবসায়ী একযোগে কারসাজিতে জড়িয়ে ডলারের আন্ত:ব্যাংক লেনদেনের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়ে লেনলেন করেছে।
এদিকে ২০২১ সালে ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ক্রয় করে। কারণ ওই সময় ব্যাংকগুলোর কাছে চাহিদার তুলনায় বেশি ডলার থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা ক্রয় করে। আবার চলতি বছর ডলারের চাহিদা ব্যাংকগুলোতে বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের কাছে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডলার বিক্রি করাসহ বিলাস সমাগ্রী আমদানির বিপরীতে এলসি বন্ধ করেছে, এছাড়াও কোনো কোনো পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকারককে ৭৫ শতাংশ নিজ উদ্যোগে পেমেন্ট করতে হচ্ছে, বাকী ২৫ শতাংশ ব্যাংক পেমেন্ট করবে। এর ফলে ওইসব পণ্য আমদানি করতে গিয়ে গ্রাহককে বাইরে থেকে ডলার ক্রয় করতে হচ্ছে। যেকারণে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ও চাহিদা বেড়েছে।
পণ্য রপ্তানি করে আয় হয় ৫০ বিলিয়ন ডলার; আর কাঁচামাল সহ প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে গিয়ে ব্যয় হয় ৮০ বিলিয়ন ডলার। এই হিসাবে বছরে গড়ে ৩০ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি থেকেই যায়। এই ঘাটতি পূরনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি মসে বিলাস পণ্যের বিপরীতে ২ বিলিয়ন ডলার এলসি কমাতে উদ্যোগ নেয়। ফলে গত জুন মাসে ২ বিলিয়ন ডলার এবং জুলাই মাসে ১ বিলিয়ন ডলার এলসি কমেছে।
আগে শুধুমাত্র অনুমোদিত ডিলার শাখা ডলার লেনদেন করতে পারত, এখন থেকে সরকারি বেসরকারি সকল ব্যাংকের শাখা ডলার লেনদেন করতে পারবে।
ডলার কারসাজি বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফলে দেশি-বিদেশি ৬টি ব্যাংক চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই ব্যাংকগুলোর ট্রেজারিপ্রধানকে অপসারণ করা হয়েছে এবং ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৫টি মানিচেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে, ৯টি অবৈধ মানিচেঞ্জার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে; ২১ মানিচেঞ্জারকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আরো কিছু নজরদারিতে আছে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড, আবুল বারকাত দি ডেইলী অবজারভারকে বলেন, কার্ব মার্কেট নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে॥ নিয়ম না মানলে শাস্তির বিধান রাখতে হবে। হুন্ডী বন্ধ করে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ডলার আসার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তিনি বলেন, ডলার নির্ভরশীলতা কমাতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আলোচনা সাপেক্ষে বিভিন্ন দেশের সাথে মুদ্রার বিনিময় ব্যবস্থা নতুন করে নির্ধারণ করতে হবে।
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজারে উৎপাদন বাড়াতে হবে। দৃব্যমূল্য বৃদ্ধির সিন্ডিকেট শক্তহাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পণ্য উৎপাদনে ভিন্নতা আনতে হবে। একাজগুলো সরকারকে কঠিনভাবে করতে হবে। ২০২৪ সাল থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে। তাই এখন থেকে সরকারকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। যাতে রিজার্ভে কোনো চাপ না পরে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি ডলার বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এখন ব্যাংকের ইডি শাখাসহ সকল শাখায় ডলার লেনদেন হবে। আর যৌথ তদন্ত অব্যাহত থাকবে। যাতে কোনো ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জ ডলার কারসাজিতে জড়াতে না পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *