জয়ের সুবাস ওয়েস্ট ইন্ডিজের

স্টাফ রিপোর্টার

ইয়ান বিশপ রীতিমত ইতিহাসের পাতা উল্টানো শুরু করে দিয়েছিলেন…টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে কম রান ডিফেন্ড করেছিল কোন দল? ধারাভাষ্যকারদের পাশেই থাকেন ক্রিকেট স্ট্যাটিসিয়ান। যাদের একমাত্র কাজ দ্রুত ক্রিকেটের রেকর্ড বের করে দেওয়া।

মুহুর্তেই বেরিয়ে গেল, ১৮৮২ সালে অস্ট্রেলিয়া ৮৫ রান টার্গেট দিয়ে ম্যাচ জিতেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ওভালে স্বাগতিকদের আটকে দেয় ৭৭ রানে। তাহলে বাংলাদেশ ৮৪ রান পুঁজি করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় তাহলে বিশ্ব রেকর্ড হবে।

বিশপ তাই বললেন, ‘এটা বিশ্ব রেকর্ড হতে পারে, ক্রিকেটে যে কোনো কিছুই সম্ভব।’ সম্ভব হবে কিনা সেটা জানা যাবে রোববার, চতুর্থ দিনের খেলা শেষে। শনিবার অ্যান্টিগার ২২ গজে খালেদ আহমেদ যা করলেন তাতে রীতিমত স্বাগতিকদের কাঁপাকাপি অবস্থা।

৮৪ রানের মামুলী লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩ রানে নেই ৩ উইকেট। খালেদের তোপে দিশেহারা ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং অর্ডার। নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলে ব্র্যাথওয়েটকে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করান। এরপর রেইমন রেইফারের একই পরিণতি। দ্বিতীয় ওভারে খালেদ এনক্রোমার বোনারের উইকেট উপচে ফেলেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে তখন রাজ্যের চাপ। কোচ ফিল সিমন্সকে বেশ উদ্বিগ্ন লাগছিল। অবশ্য ২২ গজে ক্যাম্পবেল ও ব্র্যাকউড সেই চাপ সামলে নেন। বাংলাদেশের দেওয়া ৮৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দিন শেষ করেছে ৩ উইকেটে ৪৯ রানে। রোববার চতুর্থ দিনে ৩৫ রান তুললেই তাদের জয় নিশ্চিত।

প্রথম ইনিংসে ১০৩ রান করে বাংলাদেশ শুরুতেই ম্যাচ ডুবিয়ে দেয়। তবুও আশা ছিল দ্বিতীয় ইনিংসে। বিশেষ করে বোলাররা যখন ভালো করেছিল তখন ব্যাটসম্যানদের বাড়তি কিছু করার তাড়না থাকা দরকার ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ২৪৫ রানে।

বাংলাদেশ ম্যাচের ও নিজেদের ভাগ্য লিখে ফেলে সকালের সেশনেই। এলোমেলো ব্যাটিংয়ে হারায় ৪ উইকেট। স্কোরবোর্ডে ৬৫ রান আসলেও সাত সকালে উইকেটে টিকে থাকা ছিল জরুরী। কিন্তু শান্ত, মুমিনুল, লিটন, জয় কেউই দায়িত্ব নিতে পারেননি।

বিশেষ করে ১৫২ বল কাটিয়ে দেওয়ার পর অফস্টাম্পের এক হাত বাইরের বল তাড়া করে আউট হওয়া স্রেফ বোকামি! জয় ৪২ রানে সাজঘরে ফেরার আগে লিটন একই কাজ করেন। ব্যাকফুট পাঞ্চ করতে গিয়ে টাইমিং মেলাতে পারেননি। বল যায় স্লিপ কর্ডনে। দুজনের উইকেটই নেন রোচ।

এর আগে দুই বাঁহাতিকে রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে আউট করেন কাইল মায়ার্স। শান্ত ৪৫ বলে ১৭ রান করার পর ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে উইকেট বিলিয়ে আসেন। প্রথম ইনিংসে শূন্যর পর এবার মুমিনুল থামেন ৪ রানে। এই ইনিংসের মধ্য দিয়ে টানা ৯ ইনিংসে দশের ঘর ছোঁয়ার আগেই আউট হলেন মুমিনুল।

সপ্তম উইকেটে শুরু হয় বাংলাদেশের লড়াই। এবারও দলের হাল ধরেন সাকিব। সঙ্গে ছিলেন সোহান। সোহান থিতু হতে সময় নিয়েছিলেন। এরপর নিজের সহজাত ব্যাটিংয়ে অতি দ্রুত রান তোলেন। সাকিব বারবার সুযোগ দিচ্ছিলেন কিন্তু ভাগ্য পাশে থাকায় বেঁচেও যাচ্ছিলেন। সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি শটে মুগ্ধতাও ছড়ান।

দুজনের দারুণ ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। এ সময়ে সাকিব তুলে নেন ফিফটি। সোহানের ব্যাট থেকে আসে ৪৯ রান। দুজনের জুটির রান সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে যায়। সঙ্গে ইনিংস হারের যে শঙ্কা তৈরি হয় সেটাও কেটে যায়।

বিরতির পর ফিরে সোহান কাঙ্খিত ফিফটি পেয়ে যান। সাকিব এগোতে থাকে আপন ছন্দে। কিন্তু নতুন বল আসার পরই যত বিপদ বাংলাদেশের ইনিংসে। অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিংয়ের চেয়ে নিজেদের ভুলগুলোও বেশি। নতুন বলে তৃতীয় ওভারে সাকিব কেমার রোচের বল ড্রাইভ করেছিলেন। কিন্তু হাওয়ায় ভাসানো বল জমে যায় ব্র্যাথওয়েটের হাতের মুঠোয়। তাতে ভেঙে যায় ২২১ বলে তাদের ১২৩ রানের জুটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের যা সর্বোচ্চ। এই টেস্টে এটাই ছিল প্রথম শতরানের জুটি।

সাকিব ফেরার পর সোহানের ব্যাট আর হাসেনি। রোচের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের পর তাড়ার চেষ্টায় পেছনে ধরা পড়েন সোহান। চার বছর আগে এই মাঠেই ৬৪ রান করেছিলেন। চার বছর পর টেস্ট একাদশে ফিরে ৬৪ রানেই থামেন উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান। লেজের ব্যাটসম্যানরা কেউ দলের রান বাড়াতে পারেননি। দ্বিতীয় নতুন বলে বাংলাদেশের ইনিংস স্থায়ী হয় কেবল ৬৫ বল। ১৩ রানে বাংলাদেশ হারায় শেষ ৪ উইকেট।

বল হাতে রোচ ৫৩ রানে নেন ৫ উইকেট। জোসেফ ৩ উইকেট নেন ৫৫ রানে।

রোচের পর একই উইকেটে নতুন বলে আগুণ ঝরান খালেদ। তার সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন মোস্তাফিজ, ইবাদত, মিরাজ ও সাকিবও। আলগা বল না দিয়ে ব্যাটসম্যানদের চাপে রেখেছিলেন তারা। কিন্তু সেই চাপ সামলে জয়ের সুবাস পাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ চতুর্থ দিন আরো দুই-একটি উইকেট নিতে পারে তাহলে লড়াইটা জমে উঠতেও পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *