জ্বালানি পণ্যের দাম রেকর্ড ভাঙছে

স্টাফ রিপোর্টার

যুদ্ধের প্রভাবে আরো অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে বৈশ্বিক জ্বালানি পণ্যের বাজার। আন্তর্জাতিক বাজারে গতকাল লেনদেনের একপর্যায়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৩৯ ডলার ছাড়িয়ে যায়, যা গত ১৪ বছরে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে স্পট এলএনজির দামও এখন প্রতি এমএমবিটিইউ রেকর্ড ৫৯ ডলারের আশপাশে ওঠানামা করছে।

যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়ানোর পূর্বাভাস আগেই দিয়েছিলেন বিশ্লেষকরা। একই কথা প্রযোজ্য অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও। এর পরও গতকালের বাজার পরিস্থিতি অনেকেরই বিস্ময়ের উদ্রেক করেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্থানীয় বাজারগুলোয়ও এখন জ্বালানি পণ্যের দাম অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। এশিয়ার বাজারে জ্বালানি তেল-গ্যাসের মূল্য এখন আকাশচুম্বী। অন্যান্য দেশের মতো আর্থিক চাপে বাংলাদেশও। এরই মধ্যে ডিজেলে দৈনিক ১৯ কোটি টাকা লোকসানের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্র। অন্যদিকে কিছুদিন আগেও স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি প্রতি এমএমবিটিইউ ৩০ ডলারের মধ্যে কেনা গেলেও এখন আর সে সুযোগ নেই।

বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপিসি প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের বাজার পরিস্থিতি আমরা জ্বালানি বিভাগকে অবহিত করছি। এ মুহূর্তে বাজার মনিটরিং করা ছাড়া কোনো পথ নেই।

জ্বালানি তেলের বাজার পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান অয়েলপ্রাইস ডটকমের তথ্যানুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে গতকাল ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৩৯ ডলারে ওঠে। পরবর্তী সময়ে তা নেমে দাঁড়ায় ১২৪-১২৫ ডলারে। আগের দিন পণ্যটির দর ১১৫-১১৮ ডলারে ওঠানামা করলেও গতকাল দিনের শুরুতে তা এক লাফে ১৯ ডলার বেড়ে যায়।

অন্যদিকে, স্পট মার্কেটে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজির দাম এখন রেকর্ড সর্বোচ্চ। জ্বালানির বাজার পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩ মার্চ জাপান-কোরিয়া-মার্কার (জেকেএম) অঞ্চলে স্পট এলএনজির বেঞ্চমার্ক প্রতি মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) ৫৯ ডলার ৬৭ সেন্ট ওঠানামা করছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে স্পট মার্কেটে এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। যদিও এশিয়ার বাজারে এপ্রিলের সরবরাহ চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি ৪০ ডলার ৫ সেন্ট সরবরাহ চুক্তি হয়েছিল। তবে এ মূল্যে এখন আর পণ্যটি সরবরাহ সম্ভব নয় বলে বাজার পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পূর্বাভাস দিচ্ছে। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির রেকর্ড সর্বোচ্চ মূল্য ছিল ৫৬ ডলার ৩২ সেন্ট। যদিও পরে তা কমে যায়।

দেশের গ্যাস সরবরাহ সংকট কাটাতে পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদি আমদানি কার্যক্রমের পাশাপাশি স্পট মার্কেট থেকে চলতি অর্থবছরে ১৩ কার্গো এলএনজি আমদানি করা। এরই মধ্যে এক কার্গো এলএনজি প্রতি এমএমবিটিইউ ৩০ ডলারের মধ্যে কেনা গেছে। তবে যে হারে স্পট মার্কেটে এলএনজি দর বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আর কার্গো কেনা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।

পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চলতি অর্থবছরে দৈনিক ৮৫ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পেট্রোবাংলার। কিন্তু বিশ্ববাজারে পণ্যটির মূল্যে যে অস্থিরতা তাতে এ পরিকল্পনা ঠিক রাখা কঠিন। সেটি করা না গেলে ভর্তুকির হিসাবনিকাশেও বড় পার্থক্য তৈরি করবে।

দেশে বর্তমানে সেচ মৌসুম চলছে। সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি হওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রাখতে হয় সার্বক্ষণিক। এক্ষেত্রে কম মূল্যের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখা হয় বেশি। কিন্তু বেশি মূল্যে গ্যাস কিনে কম মূল্যে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করায় আর্থিকভাবে খাদের কিনারে পড়ছে জ্বালানি বিভাগ।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে জ্বালানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি সংকটও প্রকট হচ্ছে। তেলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলার সঙ্গে আলোচনা করেছে। পাশাপাশি তেলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের দ্বারস্থ হতে যাচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো পূর্বাভাস দিচ্ছে। এরই মধ্যে সৌদি আরবকে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র অনুরোধ জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *