জ্বালানি তেল রফতানিতে ইরানের নতুন রেকর্ড

স্টাফ রিপোর্টার

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চলতি বছর নতুন রেকর্ড স্পর্শ করেছে ইরানের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি। অন্যান্য দেশ উত্তোলন সীমিত করলেও ইরান বৈশ্বিক সরবরাহ খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জ্বালানি তেল যোগ করেছে। বাজার পরামর্শক, জাহাজের তথ্য ও খাতটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

২০১৮ সালে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের ওপর ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন প্রশাসন। উদ্দেশ্য ছিল দেশটির জ্বালানি তেল রফতানি ও এটি থেকে সরকারের আয়ের পথ বন্ধ করে দেয়া। এমন পদক্ষেপের ফলে দেশটির জ্বালানি তেল রফতানি সীমিত হয়ে পড়েছিল।

তবে জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকে আবারো বাড়তে শুরু করেছে ইরানের জ্বালানি তেল রফতানি। বাইডেন প্রশাসন জানায়, দুই দেশের মধ্যে পরমাণু চুক্তি নিয়ে সংলাপ চলছে।

মে মাসে ইরানের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি দৈনিক ১৫ লাখ ব্যারেল ছাড়িয়েছে। বাজার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেপলারের মতে, ২০১৮ সালের পর এটিই সর্বোচ্চ রফতানি। ২০১৮ সালে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগ পর্যন্ত দেশটির দৈনিক রফতানির পরিমাণ ছিল ২৫ লাখ ব্যারেল।

ইরান জানায়, মে মাসে দেশটি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন দৈনিক ৩০ লাখ ব্যারেলে উন্নীত করেছে। এটি বৈশ্বিক সরবরাহের ৩ শতাংশ। জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক এবং সংশ্লিষ্টরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, চলতি মাসেও উত্তোলন এ পর্যায়ে থাকবে।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা চলতি সপ্তাহে জানায়, ইরান মে মাসে দৈনিক ২৮ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করেছে, যা ইরানের সরকারি তথ্যের প্রায় কাছাকাছি।

জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর নেতৃস্থানীয় সৌদি আরব। সম্প্রতি দেশটি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেল বা ১০ শতাংশ করে কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে হিসাবে দৈনিক উত্তোলন দাঁড়াবে ৯০ লাখ ব্যারেলে। দেশটি জ্বালানি তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ সিদ্ধান্ত অব্যাহত রাখবে। পণ্যটির দাম সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দার উদ্বেগে কমে গেছে। সৌদি আরব ও ওপেক প্লাসের উত্তোলন কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত ইরানে উত্তোলন ও রফতানি বাড়াতে সহায়তা করেছে।

বিশ্লেষকরা জানান, ইরানের ওপর এখনো মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি কাজ করছে না, মনিটরও করা হচ্ছে না। বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর ইরানের বিরুদ্ধে গুরুতর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণেই বাড়ছে ইরানের জ্বালানি তেল রফতানি। তবে কালোবাজারের মাধ্যমেই এসব জ্বালানি তেল বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে এসব জ্বালানি তেল সরবরাহের কোনো স্বচ্ছতা নেই। এ কারণে তা বৈশ্বিক সরবরাহ খাতেও প্রতিফলন ঘটাচ্ছে না।

তবে মার্কিন প্রশাসন জানায়, ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা এখনো কার্যকর আছে। কেউ নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করা হবে না।

এদিকে অন্যান্য বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এসভিবি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, মে মাসে ইরানের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন দৈনিক ৩০ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল স্পর্শ করেছে। জানুয়ারিতে যা ছিল ২৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল। অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও কনডেনসেট রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দৈনিক ১৯ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেলে। মে মাসে চীন ছিল ইরানের সবচেয়ে বড় ক্রেতা দেশ। সিরিয়া ও ভেনিজুয়েলায়ও কিছু তেল রফতানি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *