জ্বালানি তেলের মূল্যযুদ্ধ শুরু করছে ইরান?
নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় ইরানের অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। আটটি দেশ বিশেষ ছাড় পাওয়ার পরও ইরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি অনেকাংশে কমতে শুরু করেছে।
অর্থনীতির ওপর চাপ কমানো ও রফতানি বাজার ধরে রাখার স্বার্থে আগে থেকেই বিশেষ ছাড়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি করছে ইরান। এখন নতুন করে ছাড়ের পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে দেশটি। এর ফলে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের তুলনায় ইরানি জ্বালানি তেলের রফতানি মূল্য অনেকটাই কমে যাবে।
এ কারণে এশিয়ার দেশগুলো জ্বালানি পণ্যটির আমদানিতে আরো বেশি করে তেহরানমুখী হতে পারে। ইরানের এ উদ্যোগকে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবের বিরুদ্ধে জ্বালানি তেলের মূল্যযুদ্ধের সূচনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর রয়টার্স।
এশিয়ার দেশগুলোর জন্য আগামী বছরের জানুয়ারিতে প্রতি ব্যারেল ইরানি লাইট ক্রুডের অফিশিয়াল সেলিং প্রাইস (ওএসপি) ১ ডলার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান সরকার। ফলে ইরান থেকে জ্বালানি পণ্যটির আমদানিতে ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ এশিয়ার দেশগুলোকে দুবাই বেঞ্চমার্কের তুলনায় ব্যারেলে ৩০ সেন্ট কম মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এশিয়ার দেশগুলোর জন্য ক্রুড অয়েলের অন্য তিনটি গ্রেডের মূল্যছাড় বাড়িয়েছে ইরান।
আসছে জানুয়ারিতে ইরানি লাইট ক্রুড কিনতে সৌদি আরবের তুলনায় ব্যারেলে ৩০ সেন্ট কম দিতে হবে এশিয়ার ভোক্তাদের। একইভাবে ইরানিয়ান হেভি ক্রুডের ক্ষেত্রে এশীয় ভোক্তাদের সৌদি আরবের তুলনায় ব্যারেলে ১ ডলার ২৫ সেন্ট কম গুনতে হবে। এ সময় ইরানের ফরোজান ক্রুডের দাম আরব মিডিয়াম গ্রেডের তুলনায় ব্যারেলপ্রতি ১ ডলার ১০ সেন্ট কম নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইরান থেকে রফতানি হওয়া জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা এশিয়ার দেশগুলো। তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে ইরান থেকে জ্বালানি পণ্যটির আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। ইরানি জ্বালানি তেল আমদানি কয়েক গুণ কমিয়েছে জাপান। চীন ও ভারত ইরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি কিছুটা কমিয়েছে। এ পরিস্থিতি ইরানের রফতানি আয় কমিয়ে দিয়েছে। বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে দেশটির সামগ্রিক অর্থনীতিতে।
মূলত এ কারণেই এশিয়ার দেশগুলোর জন্য জ্বালানি তেলের ওএসপি কমানোর পরিকল্পনা সামনে এনেছে তেহরান। নভেম্বরের শুরুতে নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের কারণে ক্রমে সংকুচিত হয়ে আসা রফতানি বাজার পুনরুদ্ধার করে চাপ এড়ানো এর মূল লক্ষ্য।
জেপি মরগানের এশিয়া-প্যাসিফিক অয়েল অ্যান্ড গ্যাস অপারেশনস শাখার প্রধান স্কট ডার্লিং জানান, রফতানি কমে মজুদ বাড়তে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান রফতানি বাজার হওয়ায় এশিয়ার দেশগুলোর জন্য জ্বালানি তেলে সবচেয়ে বেশি মূল্যছাড় দিয়েছে তেহরান। একই সঙ্গে ইউরোপ ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় জ্বালানি তেল রফতানিতে বিশেষ মূল্যছাড় দিয়েছে ইরান। সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলোয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সস্তা জ্বালানি তেলের উৎস হয়ে উঠছে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ইরান।
বিশেষ এ মূল্যছাড়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গত অক্টোবরে ইরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি পাঁচ বছরের সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে আসে। এ সময় প্রধান ক্রেতা দক্ষিণ কোরিয়া দেশটি থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ করে দেয়। আসছে জানুয়ারিতে আমদানি প্রক্রিয়া নতুন করে চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ছাড় পাওয়ায় জাপানি আমদানিকারকরা ইরান থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বাড়াতে আগ্রহী।
কয়েক মাসের স্থগিতাদেশ ছাপিয়ে জানুয়ারিতে ইরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি শুরুর ঘোষণা দিয়েছে ভারতের হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। ইরান থেকে জ্বালানি পণ্যটির আমদানি বাড়াবে চীনও। এর পেছনে সৌদি আরবের তুলনায় ইরানি জ্বালানি তেলের কম ওএসপি প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।
ইরানের এ মূল্যছাড় আঞ্চলিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে সৌদি আরবের জন্য বড় একটি ধাক্কা বলে মনে করছেন স্কট ডার্লিং। তিনি বলেন, এর ফলে সৌদি আরবের বদলে তেহরানের উপকূলে জ্বালানি তেল কিনতে এশীয় আমদানিকারকদের আনাগোনা বাড়বে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে সৌদি আরবও জ্বালানি তেলে মূল্যছাড় দিতে পারে। এমনটা হলে মধ্যপ্রাচ্য তথা উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি তেলের বাজারে মূল্যযুদ্ধ শুরু হতে পারে।