জ্বালানি তেলের ব্যারেল নামতে পারে ৬৯ ডলারে
উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে ২০১৮ সাল পার করেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার। বছরের শুরু থেকে জ্বালানি পণ্যটির দাম বাড়তির দিকে থাকলেও শেষ ভাগে এসে জ্বালানি তেলের দামে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে। এ ধারাবাহিকতায় অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে বছর শেষ করেছে জ্বালানি তেলের বাজার।
এমনকি ২০১৫ সালের পর এবার নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে বছর শেষ করেছে জ্বালানি তেল। নতুন বছরেও জ্বালানি পণ্যটির বাজারে আশার আলো দেখছেন না খাতসংশ্লিষ্টরা। এ সময় আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের গড় দাম আগের বছরের তুলনায় কমে ব্যারেলপ্রতি ৬৯ ডলারে নেমে আসতে পারে। খবর রয়টার্স, মার্কেট ওয়াচ ও অয়েলপ্রাইসডটকম।
নতুন বছরে জ্বালানি তেলের বাজারের সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। এতে স্বনামধন্য ৩২ জন বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ অংশ নিয়েছেন। জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের গড় দাম ছিল ৭১ ডলার ৭৬ সেন্ট। নতুন বছরে এ গড় দাম কমে দাঁড়াতে পারে ব্যারেলপ্রতি ৬৯ ডলার ১৩ সেন্টে। সেই হিসাবে, ২০১৯ সাল শেষে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের গড় দাম আগের বছরের তুলনায় ২ ডলার ৬৩ সেন্ট কমতে পারে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরের শুরুতে জ্বালানি তেলের সম্ভাব্য বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আরেকটি জরিপ পরিচালনা করেছিল রয়টার্স। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের গড় দাম দাঁড়াতে পারে ৭৪ ডলার ১৩ সেন্টে। সেই হিসাবে, চলতি বছরের জন্য জ্বালানি পণ্যটির গড় দাম ব্যারেলে ৫ ডলার কমানো হয়েছে।
বাড়তি সরবরাহের চাপে ২০১৪ সালের শেষ দিক থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমতে শুরু করে। ওই সময় প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১০০ ডলারের উপরে ছিল। দরপতনের ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে জ্বালানি পণ্যটির দাম ব্যারেলপ্রতি ৩০ ডলারের নিচে নেমে যায়। জ্বালানি পণ্যটির দরপতনের লাগাম টানতে সরবরাহ কমানোর ওপর জোর দেয়া হয়। ওপেকভুক্ত দেশগুলো রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশকে সঙ্গে নিয়ে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলন হ্রাসে চুক্তি করে।
এসব উদ্যোগের সুফলও মিলেছে। গত বছরের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বাড়তির দিকে ছিল। এ ধারাবাহিকতায় বছরের মাঝামাঝি সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড ৮৬ ডলার ৭৪ সেন্টে বিক্রি হয়। ২০১৪ সালের শেষ ভাগের পর আন্তর্জাতিক বাজারে এটাই ব্রেন্ট ক্রুডের সর্বোচ্চ দাম।
তবে বছরের শেষ ভাগে এসে ফের দরপতনের মুখে পড়ে জ্বালানি তেলের বাজার। এ ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের শেষ কার্যদিবসে ভবিষ্যতে সরবরাহের চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড বিক্রি হয় ৫৩ ডলার ৭৭ সেন্টে। অন্যদিকে ভবিষ্যতে সরবরাহের চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) বিক্রি হয় ৪৫ ডলার ৭৭ সেন্টে।
জ্বালানি তেলের বাজারে নতুন করে মন্দাভাবের পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা। প্রথমত, ইরানের ওপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়া। গত নভেম্বরের শুরুতে তেহরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। এর জের ধরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
প্রভাব ফেলেছে জ্বালানি পণ্যটির দামে। দ্বিতীয়ত, উত্তোলন ও সরবরাহ বেড়ে যাওয়া। ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পর জ্বালানি তেলের সম্ভাব্য সরবরাহ সংকট এড়াতে পণ্যটির উত্তোলন বাড়িয়ে দেয় রাশিয়া, সৌদি আরব, ইরাকসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। ফলে জ্বালানি পন্যটির বাজারে নতুন করে সরবরাহ বেড়ে যায়। বাড়তি সরবরাহ জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে দেয়। তৃতীয়ত, মার্কিন উত্তোলন খাতের চাঙ্গাভাব।
২০১৮ সালজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনে চাঙ্গাভাব বজায় ছিল। এ ধারাবাহিকতায় গত অক্টোবরে দেশটিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দৈনিক গড় উত্তোলন ১ কোটি ১৫ লাখ ব্যারেলে পৌঁছে যায়, যা দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এসব কারণে চলতি বছরও আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দরপতন অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।