জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমাতে অপেক্ষায় ওপেক

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে খাতসংশ্লিষ্টরা অস্ট্রিয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। দেশটির রাজধানী ভিয়েনায় চলছে অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজের (ওপেক) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক।

রাশিয়াসহ ওপেকবহির্ভূত সংশ্লিষ্ট দেশগুলোও এ বৈঠকে যোগ দিয়েছে। তবে জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক উত্তোলন হ্রাসে সুনির্দিষ্ট চুক্তির বিষয়ে এখনো একমত হতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। সৌদি আরবের প্রস্তাবে রাশিয়া নীতিগত সমর্থন জানালেও আপত্তি জানিয়েছে ইরান। ফলে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলন হ্রাসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে ঐকমত্যের অপেক্ষায় রয়েছে ওপেক। খবর রয়টার্স ও ব্লুমবার্গ।

দরপতন রোধে ওপেকের আওতায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক দৈনিক উত্তোলন বর্তমানের তুলনায় ১০-১৪ লাখ ব্যারেল কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে সৌদি আরব। এ বিষয়টি সামনে রেখে ভিয়েনায় জোটের বৈঠক ডাকা হয়।

এতে অংশ নিয়ে রুশ জ্বালানিমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক সৌদি প্রস্তাবে রাশিয়ার নীতিগত সমর্থনের কথা জানান। তবে ঠিক কী পরিমাণে জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানো হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।

এরই মধ্যে সৌদি প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে দেশটির আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান। গত নভেম্বরের শুরুতে ইরানের ওপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। ফলে ইরানের অর্থনীতি ভীষণ চাপের মধ্যে রয়েছে।

এ বিষয়টি সামনে এনেছে তেহরান। ইরানের যুক্তি অনুযায়ী, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার কিংবা শিথিল হওয়ার পর জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানো যেতে পারে।

এ বিষয়ে সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ বলেন, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমানোর বিষয়ে রাশিয়াকে রাজি করানোর চেষ্টা হয়েছে। দেশটি এ প্রস্তাবে নীতিগত সমর্থন দিয়েছে।

এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। তবে আমরা (ওপেক) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সব দেশের সম্মতি চাই। ঐকমত্যে পৌঁছানোর আগে পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকা হবে।

লন্ডনভিত্তিক ইন্টারফ্যাক্স এনার্জির জ্বালানিবিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক অভিষেক কুমার বলেন, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলন দৈনিক অন্তত ১০ লাখ ব্যারেল কমানো হলেও বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। এর ফলে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারে উঠতে পারে।

তিনি জানান, জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলন নিয়ে সৌদি আরবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ রয়েছে। এ কারণে ওপেকের আওতায় জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন কমাতে আপত্তি জানিয়েছে ইরান। এখন সৌদি আরব ও রাশিয়া সম্মিলিতভাবে এ বিষয়ে তেহরানকে রাজি করানোর চেষ্টা করবে।

ওপেকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত প্রণয়নে অনিশ্চয়তা জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে দিয়েছে। সর্বশেষ কার্যদিবসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম আগের দিনের তুলনায় কমেছে ৪৭ শতাংশ। এদিন ভবিষ্যতে সরবরাহের চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম দাঁড়িয়েছে ৫৯ ডলার ৭৮ সেন্টে, যা আগের দিনের তুলনায় ২৮ সেন্ট। অন্যদিকে ভবিষ্যতে সরবরাহের চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম দাঁড়িয়েছে ৫১ ডলার ১২ সেন্টে, যা আগের দিনের তুলনায় ৩৭ সেন্ট বা দশমিক ৭২ শতাংশ কম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *