জয়ে বিশ্বকাপ শুরু যুক্তরাষ্ট্রের

স্টাফ রিপোর্টার

কানাডার ব্যাটিংয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লক্ষ্যটা মনে হচ্ছিল বেশ দূরের পথ। এর আগে কখনোই এত রান তাড়া করেনি তারা, ভয় ছিল সেটিরও। কিন্তু সবকিছুকেই যেন দূরে ঠেলে দিলো অ্যারন জোন্সের ঝড়। এর সঙ্গে আন্দ্রিয়াস গউসের হাফ সেঞ্চুরিতে সহজ জয় পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

শনিবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে কানাডাকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুরুতে ব্যাট করে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রান করে কানাডা। ওই রান তাড়া করতে নেমে ১৪ বল আগে জয় পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু পায় কানাডা। দলটির দুই ওপেনার অ্যারন জনসন ও নাভনিত ধালিয়াল মিলে প্রথম পাঁচ ওভারে এনে দেন ৪৩ রান। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে গিয়ে উইকেটের দেখা পায় যুক্তরাষ্ট্র। হারমিত সিংয়ের বলে শরীরের ভারসম্য হারিয়ে খেলা শটে নিতিশ কুমারের হাতে ক্যাচ দেন জনসন। ১৬ বলে ৫ চারে ২৩ রান করে আউট হন তিনি।

তার বিদায়ের পর উইকেটে আসা প্রাগাত সিংও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। ৭ বলে ৫ রান করে রান আউট হয়ে যান তিনি। অল্প সময়ের ব্যবধানে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ধালিয়ালের সঙ্গে দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন নিকোলাস কিরটোন। ৩৭ বলে দুজনের ৬২ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখছিল কানাডা।

কিন্তু এবার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ত্রাতা হন নিউজিল্যান্ড ছেড়ে দেশটির ক্রিকেটে পাড়ি জমানো কোরি অ্যান্ডারসন। ১৫তম ওভারে নিজের প্রথম বলেই তিনি ফিরিয়ে দেন ওপেনার ধালিয়ালকে। অ্যান্ডারসনের বলে কিছুটা আগে শট খেলে ফেলায় লং অফে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয় ৪৪ বলে ৬১ রান করা এই ব্যাটারকে।

অ্যান্ডারসনের এনে দেওয়া এই উইকেটের পরই রানের গতি কমে যায় কানাডার। এর মধ্যে আলি খানের বলে অ্যান্ডারসনের হাতেই ক্যাচ দিয়ে কিরটোন ফিরলে আরও চাপে পড়ে যায় তারা। ৩১ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫১ রান করেছিলেন কিরটোন।

শেষদিকে আবার দলটিকে আশা জোগাচ্ছিলেন দিলপ্রিত বাজওয়া। অ্যান্ডারসনের করা ১৯তম ওভারে একটি চার ও ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওই ওভারের শেষ বলেই রান আউট হয়ে যান ৫ বলে ১১ রান করা বাজওয়া। শ্রেয়াস মোব্বার অবশ্য দুইশ ছোঁয়া সংগ্রহ এনে দেন কানাডাকে। ২ চার ও সমান ছক্কায় ১৬ বলে ৩২ রান করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে ৩ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন অ্যান্ডারসন।

রান তাড়ায় নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় বলেই স্টিভেন টেইলরকে এলবিডব্লিউ করেন কালিম সানা। এরপর আন্দ্রিয়াস গউসকে সঙ্গে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল। পাওয়ার প্লের ছয় ওভার শেষে ১ উইকেট হারিয়ে ৪১ রান করে যুক্তরাষ্ট্র।

তাদের আরেকটু চাপে ফেলে দেন সপ্তম ওভার করতে আসা দিলোন হেইলিগার। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১৬ বল খেলে ১৬ রান করেন যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়ক মোনাঙ্ক। কিন্তু তার বিদায়ের পরই বদলে যেতে থাকে ম্যাচের দৃশ্যপট।

উইকেটে এসে গউসকে একপ্রান্তে রেখে রীতিমতো ঝড় তোলেন অ্যারন জোন্স। স্রেফ ২২ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যেটি সবচেয়ে দ্রুততম। চার-ছক্কার বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েন কানাডার বোলাররাও।

জোন্সের হাফ সেঞ্চুরির পর হাত খোলেন গউস। ২৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। এক বল পরই স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন গউস। কিন্তু পরে দেখা যায় সেটি হয়েছে নো বল! জেরেমি গার্ডেনের করা ঘটনাবহুল ১৪তম ওভারে ৩৩ রান পায় যুক্তরাষ্ট্র। এই ওভারের আগে ৪২ বলে ৬৯ রান দরকার ছিল তাদের, পরে সেটি হয়ে যায় ৩৬ বলে ৩৬ রান।

গউস শেষ অবধি ফেরেন ১৬তম ওভারে গিয়ে। নিখিল দত্তের বলে লং অনের উপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন তিনি। ৪৬ বল খেলে সাতটি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ৫৮ বলে জোন্সের সঙ্গে গউসের ১৩১ রানের জুটির ইতি ঘটে।

কিন্তু আরেক প্রান্তে ঠিকই ঝড় চালিয়ে যান অ্যারন জোন্স। তার ব্যাটে টানা দুই ছক্কাতেই ১৪ বল আগেই ম্যাচ জিতে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। ১০ ছক্কার ইনিংসে ৪০ বলে ৯৪ রানে অপরাজিত থাকেন জোন্স। বিশ্বকাপে অ্যাসোসিয়েট দেশ হিসেবে সবচেয়ে বড় সংগ্রহ গড়েও ম্যাচ জিততে পারেনি কানাডা। নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এর আগে ১৬৪ রানের বেশি তাড়া করেনি যুক্তরাষ্ট্র, এখানেও রেকর্ড গড়ে তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *