জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় থমকে আছে পাইপলাইন স্থাপন কাজ
ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা নিরসনে কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করছে সরকার। কক্সবাজারের ভাসমান টার্মিনালে রিগ্যাসিফিকেশন শেষে আমদানিকৃত এ জ্বালানি সরবরাহ হচ্ছে জাতীয় সঞ্চালন গ্রিডে। এভাবে প্রতিদিন সঞ্চালন গ্রিডে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে ৫০ কোটি ঘনফুট।
আরো ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের জন্য দ্বিতীয় টার্মিনাল স্থাপনের কাজও প্রায় শেষের পথে। যদিও এখনই এ টার্মিনালের সুফল নিতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। কারণ জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় এখনো থমকে রয়েছে দ্বিতীয় টার্মিনালে পুনরায় রূপান্তরিত গ্যাস সরবরাহের জন্য পাইপলাইন স্থাপনের কাজ।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বৃহৎ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপ এ টার্মিনালটি নির্মাণ করছে। পেট্রোবাংলা তথা জ্বালানি বিভাগ এ টার্মিনাল ব্যবহার করবে ভাড়ায়। প্রাথমিকভাবে গত ডিসেম্বরের মধ্যেই এটি চালু করার কথা ছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে তা পিছিয়ে এপ্রিলে নির্ধারণ করা হয়। এ টার্মিনাল থেকে রিগ্যাসিফায়েড জ্বালানি মহেশখালীর উপকূল থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের জন্য ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের ৭৯ কিলোমিটার সমান্তরাল পাইপলাইন নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয় ২০১৬ সালে। সামিটের টার্মিনাল স্থাপনের সময়কালের সঙ্গে মিল রেখে এ প্রকল্পও গত ডিসেম্বরে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয় এপ্রিলে। বর্তমান গতিতে এ বছরের শেষ নাগাদও পাইপলাইন স্থাপন শেষ হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
মূলত পাইপলাইনের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অংশের জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় প্রকল্পের কাজ থমকে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শিগগিরই পাইপলাইন চালু করা না গেলে আমদানিকৃত এলএনজি সরবরাহ করা যাবে না বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি এ প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় এরই মধ্যে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় লাইনপাইপ, কোটিং অ্যান্ড র্যাপিং ম্যাটেরিয়ালস, ইন্ডাকশন বেন্ডস, মিসেলেনিয়াস ফিটিংস, পিগ ট্র্যাপসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ আমদানির কাজও প্রায় শেষ। এসব যন্ত্রাংশ এখন জিটিসিএলের ভাণ্ডারে মজুদ রয়েছে।
কিন্তু যে দুই জেলাজুড়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা, সেখানকার জমি অধিগ্রহণের কাজই শেষ হয়নি এখনো। এর মধ্যে কক্সবাজার জেলায় জমি হুকুমদখলের প্রস্তাব অনুমোদিত হলেও এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় নোটিস জারি হয়নি। অন্যদিকে চট্টগ্রাম অংশে পাইপলাইনের জন্য একটি উপজেলার কিছু অংশ ছাড়া অন্য কোথাও ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়নি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, জমি অধিগ্রহণ একটি লম্বা প্রক্রিয়া। অধিগ্রহণের আইনে অনেকগুলো ধাপ রয়েছে এবং প্রতিটি ধাপের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমাও রয়েছে। এক-একটি ধাপ শেষে যদি আপত্তি আসে, সেগুলো নিষ্পত্তি করে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে। প্রতিটি ধাপ শেষ করতে তিন-চার মাস সময় লাগে। জুনের মধ্যে তারা জমি চেয়েছে। আমরা দ্রুত সব প্রক্রিয়া শেষ করে জমি হস্তান্তরের জন্য কাজ করছি।
অন্যদিকে পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান জিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. আল মামুন বলেন, চট্টগ্রাম জেলাধীন এলাকায় আমাদের বেশ কয়েকটি মৌজা দেয়া হয়েছে। সেখানে কাজ করছি। আশা করি, টার্মিনাল প্রস্তুত হওয়ার সঙ্গে মিল রেখে পাইপলাইন নির্মাণকাজও শেষ করতে পারব।
এদিকে পাইপলাইন স্থাপন শেষ না হলে এক্সিলারেট এনার্জির মতো সামিটের টার্মিনালটিকেও বসিয়ে রেখে মাশুল গুনতে হবে বিদ্যুৎ বিভাগকে। এছাড়া এলএনজি ব্যবহার না করা হলেও চুক্তি অনুযায়ী উৎস দেশ কাতারকে ঠিকই এ জ্বালানির মূল্য পরিশোধ করতে হবে।