ছুটির মৌসুমে ব্যস্ত এয়ারলাইনসগুলো

স্টাফ রিপোর্টার

কভিড-১৯-পরবর্তী সময়ে পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে চলতি ছুটির মৌসুমে ভ্রমণকারীদের সংখ্যা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। ফলে এয়ারলাইনসগুলোকে ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে। গ্রীষ্মে ভয়াবহ আকার ধারণের পর কভিড-১৯-এর সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। পাশাপাশি টিকাদান কার্যক্রম উড়োজাহাজ ভ্রমণের চাহিদা বাড়াতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানায়, কভিড-পূর্ববর্তী সময় অর্থাৎ ২০১৯ সালের মতো প্যাসেঞ্জার চেক পয়েন্টগুলো যাত্রীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। খবর এপি।

যাত্রীদের চাহিদা মেটাতে সক্ষমতা বাড়াচ্ছে বিশ্বের এয়ারলাইনসগুলো। তবে কভিডজনিত কারণে কর্মীদের যে সংকট তৈরি হয়েছে সেটির কারণে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নতুন কর্মী বিশেষ করে এয়ার ক্রু নিয়োগে প্রতিষ্ঠানগুলো হিমশিম খাচ্ছে। ফলে ডিসেম্বরে এয়ারলাইনসগুলো আশানুরূপ সেবা দিতে পারবে না বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

থার্ড ব্রিজের বিশ্লেষক পিটার ম্যাকনালি বলেন, অন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও খাতের মতো এয়ারলাইনসগুলো নতুন কর্মীর সন্ধানে সংগ্রাম করছে। তারা জানে তাদের কী করতে হবে। এখন তাদের মাঠে নেমে কাজ সম্পন্ন করতে হবে। গত বছর কভিড-১৯-এর সংক্রমণের কারণে এয়ারলাইনসগুলো হাজার হাজার কর্মীকে কর্মক্ষেত্র ছাড়তে উৎসাহিত করেছিল। সরকারের ত্রাণসহায়তা প্রকল্পের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী ছাঁটাই করতে পারেনি। করোনা-পরবর্তী সময় এসব কর্মী দ্রুত ফেরত আসেননি। ফলে এয়ারলাইনসগুলো কার্যক্রম পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছে। যথেষ্ট কেবিন ক্রু না থাকায় ফ্লাইট ক্রুরা অতিরিক্ত সময় কাজ করছেন। অনেক সময় ফ্লাইট বাতিল করতে এয়ারলাইনসগুলো বাধ্য হচ্ছে।

অক্টোবরের শেষে আমেরিকান এয়ারলাইনস এরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল। সে সময় কর্মী সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানটি এক হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল। একই সময়ে সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইনস ফ্লাইট বাতিলের বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছিল। সে সময় দুটি এয়ারলাইনসই খারাপ আবহাওয়ার অজুহাত দিয়েছিল। যদিও বিশ্লেষকরা জানিয়েছিলেন, খারাপ আবহাওয়া বা ট্রাফিক-সংক্রান্ত সমস্যা কর্মী সংকটের বিষয়টিকে আরো প্রকট করে তুলেছিল।

ম্যাকনালি বলেন, এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠানগুলো এত দিন যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, সেটি হচ্ছে টিকিট বুকিংয়ের অপ্রত্যাশিত সময়সূচি। যাত্রীরা বুকিং ও ভ্রমণের সময়ের মধ্যে খুব কম পার্থক্য রাখেন। ফলে কর্মী সংকটের মাঝে ফ্লাইট পরিচালনা করতে এয়ারলাইনসগুলো হিমশিম খায়। নির্ধারিত কর্মীর তুলনায় অধিক ফ্লাইট শিডিউল করায় আমেরিকান এয়ারলাইনসের শ্রমিক ইউনিয়ন কয়েক মাস ধরে সতর্ক করে আসছিল।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এয়ারলাইনস খাতের তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিরিয়াম জানায়, এয়ারলাইনসগুলো যখন কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, তখন আবহাওয়ার পাশাপাশি কর্মী সংকট এ খাতে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করছে। এসব ঘটনা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী সময়ে পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে ২০২১ সালের প্রথমার্ধে আমেরিকান, ডেল্টা ও ইউনাইটেড এয়ারলাইনস ধীরগতিতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। আসন ও যাত্রীর অনুপাতের ক্ষেত্রে সব এয়ারলাইনস উন্নতি দেখতে পেয়েছে। এ পরিমাপ তৃতীয় প্রান্তিকের উন্নয়ন হার করোনা-পূর্ববর্তী স্তরে নিয়ে গিয়েছিল। যাত্রীধারণ সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা কিছু কিছু এয়ারলাইনসের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শ্রম বিভাগের তথ্যানুযায়ী, এয়ারলাইনস শিল্পে করোনা আঘাত হানার আগ পর্যন্ত কর্মসংস্থানের যে হার ছিল, বর্তমান পরিস্থিতি সেটির তুলনায় এখনো ৯ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *