চীনে বাজার হারাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান কয়লা
চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার কয়লা বাণিজ্য বেশ পুরনো। দ্বিপক্ষীয় এ বাণিজ্যে চীন আমদানিকারক ও অস্ট্রেলিয়া রফতানিকারক দেশ। প্রতি বছরই চীনা আমদানিকারকরা অস্ট্রেলিয়া থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কয়লা আমদানি করেন।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে এসে চীনের বাজারে অস্ট্রেলিয়ান কয়লা আমদানি নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির আমদানিকারকদের মতে, দ্বিপক্ষীয় কয়লা বাণিজ্যে পরিবেশ রক্ষাসংক্রান্ত চীনা নীতি ও নিয়মকানুনের বিধি-নিষেধ মানছে না অস্ট্রেলিয়া। তুলনামূলক নিম্নমানের কয়লা পাঠাচ্ছে দেশটি।
ফলে এসব কয়লা ব্যবহার করায় বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে চীনের ভূমিকা বাড়ছে। এ কারণে চীনের অন্যতম বৃহত্তম ডালিয়ান বন্দর অস্ট্রেলিয়ান কয়লার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বলে দুই দেশের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
তবে এ খবরকে গুজব বলে জানিয়েছে দুই দেশের সরকার। এর পরও চীনা বাজারে অস্ট্রেলিয়ান কয়লার ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় কাটছে না। খবর রয়টার্স, এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল ও মাইনিং ডটকম।
বন্দর কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন থেকেই অভিযোগ করে আসছিল, কয়লা বাণিজ্যে চীনা পরিবেশসংক্রান্ত নিয়মনীতি মানছে না অস্ট্রেলিয়া। দেশটি থেকে চীনের বাজারে নিম্নমানের কয়লা পাঠানো হচ্ছে। তাই পরিবেশ সুরক্ষার স্বার্থে অস্ট্রেলিয়ান কয়লা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ডালিয়ান বন্দর। তবে রাশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকছে না।
এ খবরে নড়েচড়ে বসে দুই দেশের সরকার। আন্তর্জাতিক বাজারেও জ্বালানি পণ্যটির দাম কমে যায়। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেং শুয়াং বলেন, অস্ট্রেলিয়ান কয়লা আমদানি পুরোপুরি বন্ধের খবরটি সঠিক নয়। এক্ষেত্রে নিষিদ্ধ শব্দটি উপযুক্ত নয়; বরং মান পরীক্ষার জন্য আমদানি প্রক্রিয়া কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে।
এর আগে বিভিন্ন সময় অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা কয়লা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তা চীনের পরিবেশ সুরক্ষা নীতির ন্যূনতম মান পূরণে সক্ষম নয়। এ কারণে অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আমদানিতে মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আরো কঠোর অবস্থান নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
চীন সরকারের এ অবস্থানের সপক্ষে অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে দেশটির রাজস্ব বিভাগ। চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া থেকে চীনের বাজারে সব মিলিয়ে ৭৯ লাখ টন কয়লা আমদানি হয়েছে। গত ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়া থেকে চীনে মোট ৫৮ লাখ টন কয়লা আমদানি হয়েছিল।
নিষেধাজ্ঞার খবর প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় অস্ট্রেলিয়ান বাণিজ্যমন্ত্রী সিমোন বার্মিংহাম বলেন, চীন সরকারের পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়ান কয়লার ওপর আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো কারণ নেই। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ। তবে কয়লার মান নিয়ে চীনা সরকারের কিছু জিজ্ঞাসা রয়েছে। ভবিষ্যতে রফতানিযোগ্য কয়লার মানের বিষয়ে আমাদের (অস্ট্রেলীয় রফতানিকারকদের) আরো সচেতন হতে হবে।
কয়লা উত্তোলনকারী দেশগুলোর তালিকায় চীনের অবস্থান বিশ্বে প্রথম। তালিকায় অস্ট্রেলিয়া তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। তবে চাহিদা বেশি থাকায় চীন প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কয়লা আমদানি করে। জ্বালানি পণ্যটির আমদানিকারকদের তালিকায় দেশটির অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়।
প্রতি বছর কয়লার বৈশ্বিক আমদানির ১৪ দশমিক ১ শতাংশের গন্তব্য চীন। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের শীর্ষ কয়লা রফতানিকারক দেশ। জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্যের ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ দেশটি এককভাবে জোগান দেয়। অস্ট্রেলিয়া থেকে রফতানি হওয়া কয়লার অন্যতম বড় বাজার চীন। এ কারণে চীনের বাজারে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে অস্ট্রেলিয়ার রফতানি আয় বড় ধরনের বাধার মুখে পড়বে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দামেও এর প্রভাব পড়বে।
এ বিষয়ে মেলবোর্নভিত্তিক অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ব্যাংকের বিশ্লেষক রবার্ট মিলার বলেন, অস্ট্রেলিয়ান কয়লার ওপর চীনা নিষেধাজ্ঞার সাম্প্রতিক খবরটি সত্য না হলেও এ ইস্যুতে বিদ্যমান সমস্যা নতুন করে সামনে এসেছে। পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে চীন সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
এটা অস্ট্রেলিয়ার কয়লা রফতানিকারকদের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। মান উন্নত করা সম্ভব না হলে আগামী দিনগুলোয় অস্ট্রেলিয়ান কয়লার ওপর চীন সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। ফলে কয়লার বৈশ্বিক বাণিজ্যে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হতে পারে।
সর্বশেষ সপ্তাহে চীনা গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় ডালিয়ান বন্দর অস্ট্রেলিয়ান কয়লার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। একই সঙ্গে চলতি বছর এ বন্দর দিয়ে সাকল্যে ১ কোটি ২০ লাখ টন কয়লা আমদানি করা হবে বলেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে।