চীনে নাস্তানুবাদ নাইকি ও অ্যাডিডাস

স্টাফ রিপোর্টার

ইউরোপ-আমেরিকার নামকরা ব্র্যান্ডগুলোর অন্যতম বাজার চীন। বিশাল চীনা জনগোষ্ঠী বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় নাইকি, অ্যাডিডাসের স্পোর্টসওয়্যার পণ্য। তবে সম্প্রতি এ ব্র্যান্ডগুলোর পণ্য ক্রয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখা যাচ্ছে চীনা ক্রেতাদের। স্পোর্টসওয়্যার কোম্পানি নাইকি ও অ্যাডিডাসের সর্বশেষ বিক্রয় পরিসংখ্যান অনুসারে, বিদেশী এ জায়ান্ট ব্র্যান্ডগুলো তাদের ঐতিহ্যগত শক্তি হারাচ্ছে চীনা বাজারে।

অ্যাডিডাস তাদের সাম্প্রতিক আর্থিক বছরের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে, চীনের বাজারে এর বিক্রি কমেছে ৩৫ শতাংশ। বিপরীতে নাইকির বিক্রি কমেছে ১৯ শতাংশ। কারণ বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা বাজারটির তরুণ ক্রেতারা বিদেশী ব্র্যান্ডের পণ্যগুলো ঘিরে অনেকটাই উদাসীনতা দেখাচ্ছে। খবর সিজিটিএন।

চলতি মাসে এক সাক্ষাৎকারে অ্যাডিডাসের প্রধান নির্বাহী ক্যাসপার রোরস্টেড অনেকটা অকপটেই স্বীকার করেন, তারা চীনে একটি ভুল করেছেন। তাদের মূলত স্থানীয় গ্রাহকদের রুচির বিষয়টি আরো ভালোভাবে গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিল।

জার্মান স্পোর্টসওয়্যার কোম্পানি অ্যাডিডাস ও আমেরিকার প্রতিষ্ঠান নাইকি পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও গত বছর চীনের জিনজিয়াং তুলা ইস্যুতে সম্মিলিতভাবে সহঅবস্থান নেয়। বিতর্ক উঠেছিল যে চীনের উত্তর-পশ্চিমের এ অঞ্চলে তুলা উৎপাদনে শ্রমিকদের জোরপূর্বক কাজে লাগানো হচ্ছে। অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলে প্রমাণ হওয়ার পরও অন্যান্য বিদেশী ব্র্যান্ডের সঙ্গে নাইকি ও অ্যাডিডাস জিনজিয়াং তুলা বয়কটের ঘোষণা দেয়।

বেইজিংভিত্তিক সংবাদ চ্যানেল সিজিটিএনকে ২৪ বছর বয়সী চীনা ক্রেতা ডাও বোচেন বলেন, যখন শুনি বিদেশী ব্র্যান্ডগুলো জিনজিয়াং তুলা বয়কট করছে, তখন আমরা খুব অস্বস্তি বোধ করি। আমরা মনে করি, বিদেশী ব্র্যান্ডগুলো পরিস্থিতির অপব্যবহার করছে। বিদেশী ব্র্যান্ডগুলো মনে করেছিল তারা চীনের বাজারের সঙ্গে যা খুশি তাই করতে পারে। তারা অযথা বিতর্কের মাধ্যমে গোলমাল করতে চায়। কিন্তু মানুষ এ বিষয়গুলো মনে রাখে।

চীনের বাজারে ব্যবসা হারানোর পর গত সপ্তাহে অ্যাডিডাসের নির্বাহী ক্যাসপার রোরস্টেড পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তাছাড়া পণ্য উৎপাদন, নতুন পণ্যের অভাব আর সরবরাহ শৃঙ্খলে সমস্যার কারণে তার ওপর বিদ্যমান চাপগুলো আরো গুরুতর হয়ে উঠছিল।

বাজার গবেষণা সংস্থা ইউরোমনিটরের তথ্যানুসারে, জিনজিয়াংভিত্তিক চীনের আন্তা স্পোর্টস ২০২১ সালে চীনের বাজারের ১৬ দশমিক ২ শতাংশ দখল করে নেয় এবং প্রথমবারের মতো অ্যাডিডাসের ১৪ দশমিক ৮ শতাংশকে ছাড়িয়ে যায়। নাইকির বাজারের শেয়ার ২৫ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে চীনা ব্র্যান্ড লি-নিংয়ের বাজার শেয়ার বেড়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।

চলতি বছরও বিদেশী ব্র্যান্ডগুলোর বিপরীতে চীনা ব্র্যান্ডের বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত। বছরের প্রথমার্ধে আন্তার রাজস্ব ২৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউয়ান (৩৭৫ কোটি ডলার) পরিমাণ বেড়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে যায়, যা ছাড়িয়ে গেছে নাইকির দুটি আর্থিক বছরের ৩৭২ কোটি ডলার আয়কে।

কান্তার মার্কেটপ্লেস চায়নার প্রধান নির্বাহী ওয়াং সিরিয়াস বলেন, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহে খানিকটা ভাটা পড়ছে। এদিকে চীনের স্থানীয় ব্যান্ডগুলো ‘চায়না চিক’ ধরনের আর্কষণীয় পণ্য তৈরি করে বাজারে নতুন একটি উন্মাদনা তৈরি করেছে। চায়না চিক বা চীনা চটকদার পণ্য বলতে এমন নকশাকে বোঝায়, যা চীনা সংস্কৃতি প্রদর্শনের পাশাপাশি আধুনিকতার সঙ্গে ঐতিহ্যের মেলবন্ধন ঘটায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *