চীনে তৈরি গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করবে টেসলা!
চীনে তৈরি গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানির বিষয়টি বিবেচনা করছে টেসলা। পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলে এটি হবে মার্কিন বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির বিপরীতমুখী একটি পদক্ষেপ। পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে রয়টার্স। তবে এ পরিকল্পনা কার্যকর হলে মার্কিন গাড়ি ক্রেতাদের জন্য নতুন জটিলতা তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মূলত নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে সাংহাইয়ের কারখানায় স্বল্প ব্যয়ে গাড়ি উৎপাদন সুবিধা কাজে লাগাতে চাইছে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলোন মাস্কের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি চীনে চাহিদা কমে যাওয়ার বিষয়টিও সংস্থাটিকে এমন পরিকল্পনা করতে প্ররোচিত করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র দুটি রয়টার্সকে জানিয়েছে, টেসলা চীনভিত্তিক সরবরাহকারীদের তৈরি যন্ত্রাংশ উত্তর আমেরিকার স্থানীয় বিধির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কিনা তা খতিয়ে দেখছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের মধ্যেই চীনে তৈরি মডেল ওয়াই ও মডেল থ্রি গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি কানাডায় গাড়িগুলো রফতানি করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।
বিষয়টি নিয়ে মন্তব্যের অনুরোধে কোনো সাড়া দেয়নি টেসলা। তবে সংবাদ প্রকাশের পর একটি টুইটার পোস্টে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী খবরটিকে কেবল মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও তিনি বিস্তারিত তথ্য দেননি।
চলতি বছরের শুরুতে সাংহাইয়ের গিগাফ্যাক্টরি আপগ্রেড করে টেসলা। এতে কারখানাটিতে বার্ষিক গাড়ি উৎপাদন ক্ষমতা ১১ লাখ ইউনিটে উন্নীত হয়। এটি এখন সংস্থাটির সবচেয়ে উৎপাদনশীল কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। চীনে বিক্রি করার জন্য এবং ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারগুলোয় রফতানির লক্ষ্য নিয়ে সাংহাইয়ে গিগাফ্যাক্টরি তৈরি করেছিল টেসলা। তবে সেখানকার স্বল্প ব্যয়ের গাড়ি উৎপাদন সুবিধা কাজে লাগিয়ে নতুন পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, ডলারের বিপরীতে সস্তা ইউয়ান, চীনে কাঁচামালের কম দাম এবং যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ির উচ্চ দাম টেসলাকে নতুন পরিকল্পনা নিতে উৎসাহিত করছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনের তুলনায় চীনে তৈরি গাড়ি রফতানি করা অধিক লাভজনক হয়ে উঠেছে।
তবে পরিকল্পনাটি কার্যকর হলে মার্কিন ক্রেতারা নতুন করে জটিলতায় পড়তে পারেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নতুন বিদ্যুচ্চালিত গাড়িতে ভর্তুকি ও উৎপাদন প্রণোদনা নিয়ে নতুন আইন স্বাক্ষর করেছেন। আমদানি করা গাড়ি ও ব্যাটারির ক্ষেত্রে এ ভর্তুকি ভিন্ন হবে। আবার এটি রাজনৈতিকভাবেই বিতর্কিত হতে পারে। কারণ টেসলাকে জো বাইডেন প্রশাসনের ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্টের (আইআরএ) অন্যতম সুবিধাভোগী হিসেবে দেখা হয়েছে। এ আইনের অধীনে চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাপ দেয়ার উদ্দেশ্যে ইভি ক্রয়ের ওপর ৭ হাজার ৫০০ ডলার ছাড় দেয়া হয়। গত মাসে টেসলার প্রধান অর্থ কর্মকর্তা জাচারি কিরখর্ন বিনিয়োগকারীদের বলেছিলেন, আইআরএ আইনের আওতায় ইভি ও ব্যাটারির জন্য দেয়া প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা খুব ভালো অবস্থানে রয়েছি।
এতদিন পর্যন্ত সংস্থাটির পরিকল্পনা ছিল উত্তর আমেরিকায় বিক্রি করা গাড়িগুলো ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্রেমন্ট ও টেক্সাসের অস্টিনের কারখানায় তৈরি করার। চলতি বছরের শুরুতে চালু হওয়া জার্মানির বার্লিন কারখানার উৎপাদনও বাড়াচ্ছে সংস্থাটি। বার্লিনের কারখানার উৎপাদন চীন থেকে গাড়ি রফতানির প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দেবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
এদিকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া টেসলার গাড়ির দামের ব্যবধানও প্রশস্ত হচ্ছে। অনেক বিশ্লেষক এ মূল্যযুদ্ধ নিয়ে সতর্ক করেছেন। যদিও সংস্থাটি একদিকে চীনে গাড়ির দাম কমাচ্ছে, এবং অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়াচ্ছে। যেমন চীনে ৪৯ হাজার ৩৪৪ ডলার সমমান মূল্যে মডেল ওয়াই গাড়ি বিক্রি করে টেসলা। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে মডেলটির দাম ৬৫ হাজার ৯৯০ ডলার। তবে যুক্তরাষ্ট্রে চীনে নির্মিত গাড়িকে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। পাশাপাশি হালকা ট্রাকের ক্ষেত্রে এ শুল্কের হার ২৫ শতাংশ। তার পরও চীনে নির্মিত গাড়িকে লাভজনক হিসেবে দেখছে প্রতিষ্ঠানটি।