চীনে উৎপাদন পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে
চীনে উৎপাদন পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি গত মাসে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বেড়েছে। কারণ হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। আবার চীনের অভ্যন্তরে হঠাৎ করে কভিড-১৯ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া খাদ্য সরবরাহ ও ভোক্তা ব্যয়ের ওপর প্রভাব ফেলেছে। খবর রয়টার্স।
দ্য প্রডিউসার প্রাইস ইনডেস্ক (পিপিআই) একটি পরিসংখ্যানে জানিয়েছে, উৎপাদন পর্যায়ের মূল্যস্ফীতি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত বছরের তুলনায় এ মূল্যবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৩ শতাংশ, যা অর্থনীতিবিদদের দেয়া পরিসংখ্যানের চেয়ে কিছুটা বেশি।
এক বিবৃতিতে পরিসংখ্যান ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ পরিসংখ্যানবিদ ডং লিজুয়ান বলেন, ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিবিধ কারণে পুরো বিশ্বেই ভোক্তা পর্যায়ে খরচ বেড়েছে। সেই সঙ্গে ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম, বিভিন্ন ধরনের ধাতুর দাম এবং এগুলোর সম্পর্কিত শিল্পের খরচ।
চীনের খুচরা মূল্যস্ফীতির মূল পরিমাপক কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্সও (সিপিআই) প্রত্যাশার চেয়ে বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ে তুলনায় এ বছরের মার্চে সিপিআই বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ শতাংশ। যদিও চলতি বছর উৎসব মৌসুম শেষ হওয়ার পর ভোক্তা চাহিদা খানিকটা কমেছে। ডং লিজুয়ান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গম, ভুট্টা ও সয়াবিনের দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও কিছু খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি দেশে কভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়াও এ মূল্যবৃদ্ধির কারণ।
জাতিসংঘের একটি সংস্থা জানিয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের কারণে চলতি বছরের মার্চে বিশ্বে খাবারের দাম রেকর্ড ছুঁয়েছে। কারণ ইউক্রেনকে বলা হয় বিশ্বের কৃষির পাওয়ার হাউজ। ফলে সেখান থেকেই যখন শস্য রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে, তখন তার প্রভাব তো বাজারে পড়বেই। শুধু ইউক্রেনই নয়, বিশ্ববাজারে গম, ভোজ্যতেল ও ভুট্টার বড় একটি অংশ আসত রাশিয়া থেকে। যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে সেটিও বিঘ্নিত হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সিপিআই ও পিপিআইয়ের বৃদ্ধির পেছনে জ্বালানির দাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
অর্থনীতিবিদ টিং লু বলেন, এপ্রিলে সিপিআই মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে। কারণ কভিড-১৯ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর সাংহাইয়ে লকডাউনের কথা শুনে চীনের মানুষ এখন খাদ্যসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য মজুদ করে রাখতে শুরু করেছেন, যা মূল্যস্ফীতিকে ত্বরান্বিত করবে।
টিং লু আরো বলেন, উত্তর চায়নায় সবচেয়ে বেশি শস্য উৎপাদন হয়। লকডাউনের কারণে পণ্য পরিবহনে বাধার সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে চলতি বছরের বসন্তকালীন ফসল চাষ কিছুটা দেরিতে শুরু হতে পারে, যা বছরের পরের অংশে খাদ্য সংকটের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সেই সঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকট তো রয়েছেই।