চীনে ইস্পাত উৎপাদন কমেছে

স্টাফ রিপোর্টার

চীনে অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদনে নিম্নমুখিতা অব্যাহত আছে। সর্বশেষ নভেম্বরে টানা ছয় মাসের মতো দেশটিতে ইস্পাত উৎপাদন কমেছে। অক্টোবরের তুলনায় শিল্প ধাতুটির উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকা পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে নানামুখী প্রয়াস চালাচ্ছে চীন। এরই অংশ হিসেবে অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন সীমিত করা হয়েছে। অন্যদিকে করোনার ধাক্কার পর অবকাঠামো নির্মাণ চাহিদা এখনো বাড়েনি। এটিও উৎপাদন কমে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে।

জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, চীন বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদক। নভেম্বরে দেশটিতে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৯৩ লাখ ১০ হাজার টনে। অক্টোবরে উৎপাদন হয়েছিল ৭ কোটি ১৫ লাখ ৮০ হাজার টন। গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় উৎপাদন কমেছে ২২ শতাংশ।

চলতি বছরের নভেম্বরে চীনের দৈনিক গড় অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ১০ হাজার টনে। অক্টোবরে দৈনিক গড় উৎপাদন ছিল ২৩ লাখ ৯ হাজার টন। অর্থাৎ দৈনিক উৎপাদন কিছুটা ঊর্ধ্বমুুখী ছিল।

গত বছরের প্রথম ১০ মাসে চীন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় অনেকখানি কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল দূষণ রোধ করা। বিশেষ করে দেশটির উত্তরাঞ্চলে উৎপাদন কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। মূলত শীতকালীন অলিম্পিক সামনে রেখে বাতাসে দূষণের পরিমাণ হ্রাস করতে বেইজিং ইস্পাত উৎপাদনে লাগাম টেনে ধরে।

এদিকে ২০২২ সালে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে চীন। এ লক্ষ্যে আগামী বছর ইস্পাতের চাহিদা ও সরবরাহের ক্ষেত্রে নীতিমালা সহজ করা হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। চীনের পলিটব্যুরো আর্থিক নীতিমালা সহজ করার পাশাপাশি সম্পদ খাতে স্বাস্থ্যকর উন্নয়ন নিশ্চিতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০২২ সালে সহজলভ্য মূল্যে গৃহ ক্রয়ের সুবিধা দিতে এমন পরিকল্পনা নিয়েছে চীনা প্রশাসন।

চীনে ইস্পাতের সবচেয়ে বড় ভোক্তা দেশটির গৃহ খাত। মোট ব্যবহূত ইস্পাতের ৩০ শতাংশই ব্যবহার করে খাতটি। নির্মাণ খাত সম্পর্কিত গৃহ ও অবকাঠামো খাতে ব্যবহূত ইস্পাতের পরিমাণ চীনের মোট ব্যবহারের ৭০ শতাংশ।

তবে দেশটির পলিটব্যুরোর বৈঠকে ২০২২ সালের মধ্যে চীনের জীবনযাপন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার আলোচনা উঠলেও সেখানে সরবরাহ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বৈঠকে ইস্পাতের দাম যেন দেশটির মুদ্রাস্ফীতিতে বাড়তি চাপ তৈরি না করে, সে ব্যাপারে আলোচনা করেছেন সদস্যরা। তবে কিছু সূত্র জানিয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে ইস্পাত শিল্প উৎপাদন নিষেধাজ্ঞা অথবা রফতানিতে সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে পারে।

কিছু কারখানা সূত্র জানায়, ২০২২ সালের প্রথমার্ধে ইস্পাতের উৎপাদন ২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধের তুলনায় পুনরুদ্ধার হতে পারে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে দেশটিতে ইস্পাত উৎপাদন হ্রাসের অন্যতম কারণ ছিল বেইজিংয়ের চাপ প্রয়োগ। তবে আগামী বছর স্থানীয় সরকারগুলো উৎপাদন নীতিমালায় কিছুটা সংস্কার আনতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *