চীনে আরো সক্রিয় আর্থিক নীতি গ্রহণের প্রতিশ্রুতি শি জিনপিংয়ের
বিদায়ী বছরে চীনের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১৩০ ট্রিলিয়ন (প্রতি ট্রিলিয়নে ১ লাখ কোটি) ইউয়ান (প্রায় ১৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার) ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি বলেছেন, ‘এ বছরও প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দেশটি। এর জন্য আরো সক্রিয় আর্থিক নীতি গ্রহণ করা হবে।’ নববর্ষ উপলক্ষে দেয়া এক বক্তৃতায় এ কথা বলেন শি জিনপিং। খবর রয়টার্স।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি গত বছর সম্পত্তি খাতে দীর্ঘমেয়াদি মন্দা, স্থানীয় সরকারের ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা, ভোক্তা আস্থা কমে যাওয়াসহ নানা ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে গেছে। এতে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে ব্যাহত হয়েছে। তবে এ অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধারের জন্যও চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তারা।
চীনা অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি রফতানি খাত। এখন পর্যন্ত এ খাতই অর্থনীতির গতি ধরে রেখেছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারির শেষের দিকে দায়িত্ব গ্রহণের পর আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দিতে পারেন। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শুল্কারোপের ঘোষণাও দিয়েছেন ট্রাম্প। এটি বাস্তবায়ন শুরু হলে চীনা রফতানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
টেলিভিশনে দেয়া বক্তৃতায় শি বলেন, ‘চীন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির প্রভাব মোকাবেলায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এ বছর উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এরই মধ্যে বিস্তৃত নীতি গ্রহণ করেছে।’ সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে কর্তৃপক্ষ একাধিক প্রণোদনা ব্যবস্থা চালু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সুদহার কমানো ও আবাসন খাতে চাহিদা বাড়াতে বাড়ি কেনার নিয়ম শিথিল করা।’
শি আরো বলেন, ‘বর্তমান অর্থনৈতিক কার্যক্রম নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা এক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে হাজির হয়েছে। তাছাড়া প্রবৃদ্ধির আগেকার নিয়ামকগুলোও পরিবর্তন হচ্ছে। নতুন নতুন খাত সেগুলোর স্থান দখল করে নিচ্ছে। তবে আমরা বিশ্বাস করি, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা এ চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করতে পারব। আমরা সবসময় প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধ হয়েছি এবং কঠিন সময়ে আরো শক্তিশালী হয়েছি। আমাদের আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে।’
এর আগে গত মঙ্গলবার নববর্ষের এক অনুষ্ঠানে শি বলেন, ‘চীনের জিডিপি ২০২৪ সালে প্রায় ৫ শতাংশ বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি সরকার নির্ধারিত প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণের ইঙ্গিত দেয়।’
ডিসেম্বরের শুরুতে চীনের শীর্ষ নেতারা ২০২৫ সালে মুদ্রানীতি শিথিলায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা ১৪ বছরের মধ্যে প্রথম। এছাড়া ভোগ ব্যয় আরো বাড়ানো এবং ২০২৫ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে বন্ড ইস্যুর পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন তারা।
এদিকে রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা কর্তৃপক্ষ ২০২৫ সালে রেকর্ড ৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ৪১ হাজার ১০০ কোটি ডলার) মূল্যের বিশেষ ট্রেজারি বন্ড ইস্যু করতে সম্মত হয়েছে।
সূত্রমতে, দেশের বাজেট ঘাটতি ২০২৫ সালে জিডিপি ৪ শতাংশ বাড়বে। একই সময়ে সরকার প্রায় ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য বজায় রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে।
অর্থনৈতিক স্থবিরতার দরুন অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক চীনকে এশিয়ার দুর্বল দেশ হিসেবে বিবেচনা করছেন। তবে অনেকে মনে করেন, ২০২৪ সাল চীনের অর্থনীতির পতনের বছর হিসেবে নয়, বরং আবাসন খাত ও স্থানীয় সরকারের দুর্বল আর্থিক অবস্থার মতো সমস্যাগুলোর সমাধান বছর হিসেবে বিবেচিত হবে। গত বছর ছাড় হওয়া অর্থনৈতিক প্রণোদনার ফল এ বছর পেতে শুরু করতে পারে দেশটি, যা গ্রাহক আস্থা ফেরানো এবং ব্যয় বাড়ানোর ওপর আরো বেশি মনোযোগ দেয়ার সুযোগ করে দেবে।
তাছাড়া চীন নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলো সফলভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হলে তা ইউরোপের সঙ্গে আরো গঠনমূলক সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করতে পারে। একই সঙ্গে দেশটি গ্লোবাল সাউথের (এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশ) সঙ্গেও ভালো অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে পারে। এর মাধ্যমে চীন তার জ্বালানি রূপান্তরের প্রযুক্তি ও পণ্যের জন্য নতুন বাজার তৈরিতে সক্ষম হতে পারে।
এর আগে গত মাসে একটি সিম্পোজিয়া ২০২৫ সালের অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ‘সম্পূর্ণ প্রস্তুতির’ আহ্বান জানান চীনা প্রেসিডেন্ট। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের কৌশলগত মনোযোগ বজায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের জন্য অনুকূল একটি পরিবেশ তৈরিতে সক্রিয় থাকতে হবে।’