চীনা তেল কোম্পানির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

চীনের অন্যতম রাষ্ট্রায়ত্ত অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কোম্পানি ঝুহাই ঝেনং করপোরেশন লিমিটেডের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, চীনা কোম্পানিটি ইরানের ওপর চলমান মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে তেহরানের কাছ থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক বিবৃতিতে এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনা দূতাবাস এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ইরান থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে কয়েকটি দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া বিশেষ সুবিধা তুলে নেয়ার পর এটাই প্রথম কোনো কোম্পানি, যা ওয়াশিংটন কর্তৃক নিষেধাজ্ঞার আওতায় এল। খবর রয়টার্স ও সিএনএন।

মাইক পম্পেও ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত ফরেন ওয়ার কনভেনশনে দেয়া এক বক্তৃতায় বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আগেই ঘোষণা করেছে কোনো দেশ বা কোম্পানি যদি ইরান ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, তারাও নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে। আর ওয়াশিংটন ঠিক এ কাজটিই করেছে। এটা অবশ্যই অবাক করার মতো বিষয় নয়।

এর পর পরই এ ইস্যুতে বিবৃতি দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সুস্পষ্ট তথ্য আছে যে চীনা জ্বালানি তেল কোম্পানি ঝুহাই ঝেনং ইচ্ছাকৃতভাবে ইরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে। এমনকি তেহরান থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে চীনসহ আটটি দেশকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সুবিধা তুলে নেয়ার পরও কোম্পানিটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইরানি জ্বালানি তেল আমদানি করেছে। এটা ইরানের ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ঝুহাই ঝেনং কোম্পানিটির সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে। মার্কিন আইন অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন ঝুহাই ঝেনং কোম্পানিটি ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে বিদেশী মুদ্রা কিংবা সম্পত্তি লেনদেন বা হস্তান্তর করতে পারবে না। এছাড়া কোম্পানিটির যুক্তরাষ্ট্রস্থ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইউমিন লিকে দেশটিতে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

পম্পেও এ সময় অন্যান্য দেশ ও কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করে বলেন, ইরান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ কোনোভাবেই অবজ্ঞা করা যাবে না। কেউ যদি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, তবে তাদের এ পদক্ষেপ আমলে নেয়া উচিত।

তবে চীন ঝুহাই ঝেনং কোম্পানির ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার দৃঢ় বিরোধিতা করেছে। চীনা পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র ই-মেইল বার্তায় জানান, চীন অন্যান্য দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব আইনকে যথেচ্ছা ও একতরফাভাবে প্রয়োগের বিরোধিতা করে। তিনি এ সময় যুক্তরাষ্ট্রকে অবিলম্বে তাদের ভুল পদক্ষেপ থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের নিজস্ব আইন ও স্বার্থের প্রতি আন্তরিক সম্মান প্রকাশের আহ্বান জানান।

ইরান থেকে জ্বালানি তেল আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে চীন অন্যতম। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রাণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশটি ইরান থেকে সব মিলিয়ে ২ কোটি ৯২ লাখ ৭০ হাজার টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেছে। চীনের ঝুহাই ঝেনং কোম্পানিটি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিকারক কোম্পানির মধ্যে একটি। ঝুহাই ঝেনংয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ইরান ও চীনের মধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মোট বাণিজ্যের ৬০ শতাংশই কোম্পানিটির মাধ্যমে লেনদেন হয়ে থাকে।

তবে ঝুহাই ঝেনংয়ের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০১২ সালে ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য ইস্যুকে কেন্দ্র করে ওবামা প্রশাসনও কোম্পানিটিকে আংশিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছিল। ওই সময় কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রের এক্সপোর্ট লাইসেন্স প্রাপ্তি, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন এবং যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১ কোটি ডলারের বেশি ঋণ না পাওয়ার অধিকার হারিয়েছিল।

চীনা জ্বালানি কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে উভয় দেশের মধ্যে নতুন করে বিরোধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশেষত দুটি দেশের মধ্যে আগে থেকে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব তো রয়েছেই। একই সঙ্গে বাড়ছে মার্কিন-ইরান উত্তেজনাও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *