চীনা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সুবিধা পাচ্ছে মার্কিন কোম্পানি

স্টাফ রিপোর্টার

মহামারী-পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে চীন। ব্যস্ততা বেড়েছে রেস্তোরাঁ ও পর্যটন অঞ্চলগুলোয়। নাগরিকদের মধ্যে বেড়ে যাওয়া চাহিদার সুবিধা পাচ্ছে দেশটিতে সক্রিয় থাকা মার্কিন কোম্পানি। বিক্রয় বেড়েছে প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল, স্টারবাকস ও এমজিএম রিসোর্টস ইন্টারন্যাশনালের মতো প্রতিষ্ঠানের। দেশের মাটিতে অর্থনীতির সংকোচনের বিপরীতে চীনে গ্রাহক বৃদ্ধিকে আশাব্যঞ্জক হিসেবে দেখছে কোম্পানিগুলো। খবর সিএনবিসি।

বিশাল জনসংখ্যা ও উদীয়মান মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য চীন বরাবরই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আগ্রহের স্থান। কিন্তু মহামারীকালীন কঠোর নীতিমালায় স্থবির হয়ে পড়ে সেখানকার অর্থনৈতিক কার্যক্রম। চীনের বাজার থেকে মার্কিন কোম্পানিগুলোর আয়ও নেমে এসেছিল তলানিতে। আইন শিথিল করার পর চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। যদিও পুনরুদ্ধারের গতি বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশিত নয়। অধিকাংশ কোম্পানি এখনো মহামারীপূর্ব বাজার পরিস্থিতিতে ফেরার জন্য অপেক্ষমাণ। চীন, হংকং ও তাইওয়ান অঞ্চলে কমেছে অ্যাপলের বিক্রি। মরগ্যান স্ট্যানলির পক্ষ থেকে জানানো হয়, চীনের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার মূলত তিনটি পর্যায়ে ঘটবে। প্রথম দফায় ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলজুড়ে বসন্তকালীন ছুটিতে, দ্বিতীয় দফায় মে থেকে জুলাই পর্যন্ত বিস্তৃত গ্রীষ্মে ও তৃতীয় দফায় স্থিতিশীল পুনরুদ্ধার শুরু হবে আগস্ট থেকে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রেস্তোরাঁগুলোয় মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত মহামারীপূর্ব অবস্থায় ফেরেনি। স্টারবাকসের প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৩ শতাংশ বিক্রয় বেড়েছে। এক বছর আগে মহামারীর কারণে প্রতিষ্ঠানটি সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন কোম্পানির বিক্রয়ে পতন ঘটেছিল ২৩ শতাংশ। এদিকে ইয়াম চায়নার বিক্রি বেড়েছে ৮ শতাংশ। চীন কেএফসির সবচেয়ে বড় বাজার। পিৎজা হাটের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার। রেস্তোরাঁর পাশাপাশি পর্যটন অঞ্চলগুলোয় বেড়েছে ব্যস্ততা। পার্ক ও ক্যাসিনোয় অবসর কাটানোর প্রবণতায় নতুন বছরে বেড়েছে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সুযোগ। হংকং ও সাংহাইয়ের রিসোর্ট থেকে আয় বাড়ার প্রতিবেদন জানিয়েছে মার্কিন বিনোদন প্রতিষ্ঠান ডিজনি। প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা ক্রিস্টিন ম্যাককার্থি দাবি করেন, ‘‌মহামারীকালীন অচলাবস্থা অতিক্রম করে অর্থনীতি গতিশীল করতে পারায় আমরা আনন্দিত।’

জানুয়ারির শেষ দিকে চীনা নববর্ষ উপলক্ষে পর্যটন পরিস্থিতি ছিল শীর্ষে। এমজিএম রিসোর্টস ইন্টারন্যাশনাল চীনে পরিচালনা করে এমজিএম কোটাই ও এমজিএম ম্যাকাও। চলতি মাসে ক্যাসিনো পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটি তাদের কার্যক্রম মহামারীপূর্ব পরিস্থিতিতে ফেরার খবর প্রকাশ করেছে। প্রথম প্রান্তিকে তাদের আয় ছিল ১৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এদিকে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে বছরওয়ারি আয় বৃদ্ধির খবর জানিয়েছে এয়ারবিএনবি। ২০২২ সালে কোম্পানিটি চীনে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিল। প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল নিয়ন্ত্রিত প্রসাধনী ব্র্যান্ড এসকে-২ চীনে সার্বিকভাবে বিক্রয় বেড়েছে। অর্গানিক বিক্রি বেড়েছে ২ শতাংশ। বিক্রি বেড়েছে ফ্যাশন কোম্পানি ট্যাপেস্ট্রি ও প্রসাধনী কোম্পানি কোটির। ট্যাপেস্ট্রির অর্থনৈতিক কর্মকর্তা স্কট রো দাবি করেন, উত্তর আমেরিকা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলমান মন্দাবস্থার কারণে ভোক্তা কমে যাওয়ার বিপরীতে চীনের ভোক্তা বৃদ্ধির ঘটনা অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতাপ্রবণ হবে। অন্য দিকে কোটির অর্থনৈতিক বিশ্লেষক পাইপার স্যান্ডলার জানিয়েছেন, ‘‌আমরা আশাবাদী চীনের প্রসাধনী বাজার পুনরুদ্ধার নিয়ে। তার পরও আমরা কোটির বিনিয়োগ কৌশল ও নতুন পণ্যগুলোকেই সফলতার কারণ হিসেবে তুলে ধরতে চাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *