চট্টগ্রামে জাহাজজটের ফলে লোকসানের আশঙ্কা

বৈরী আবহাওয়ারে কারণে গত চারদিন পণ্য খালাস কার্যত বন্ধ ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে। এতে আমদানি পণ্যবোঝাই ১০৩টি বড় জাহাজ অপেক্ষায় রয়েছে পণ্য খালাসের। জাহাজজটের ফলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন আমদানিকারকরা।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, গত বুধবার ভোর থেকে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র কারণে আবহাওয়া অধিদফতর দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত ছিল। আর গত শুক্রবার সারাদিন ৩ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি জারি ছিল। এ সতর্কমূলক অবস্থায় গত বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাস পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এতে বহির্নোঙরে গম, সার, চিনি জাতীয় খোলা পণ্যবাহী খালাসযোগ্য বড় ১০৩টি জাহাজ আটকে আছে।

এসব জাহাজে থাকা কয়েক লাখ টন কার্গো থেকে গত চার দিনে প্রায় তিন লাখ টন পণ্য খালাস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় অভ্যন্তরীণ রুটের পণ্যবাহী লাইটারগুলো বহির্নোঙরে যেতে পারেনি। ফলে ১৫০টির অধিক লাইটারেট জাহাজ অলস পড়েছিল। তবে বন্দরের কনটেইনার হ্যাল্ডলিং অনেকটা স্বাভাবিক ছিল।

এছাড়া আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যের ওপর নির্ভর করে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম ধাপে ধাপে নিয়ন্ত্রিত ছিল।

জানা গেছে, সাধারণত চার বা তিন নম্বর সংকেত জারি থাকলে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় লাইটারগুলো বহির্নোঙরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। আর উত্তাল সময়ে বহির্নোঙরে কাজ করাও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ বড় জাহাজের সঙ্গে ছোট জাহাজ বেঁধে পণ্য খালাস করতে হয়। এ সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেশি থাকে। এছাড়া বৃষ্টি পড়লে গম, চাল, চিনি ইত্যাদি নষ্ট তো হবেই। তাই এ ধরনের পণ্য খালাস বন্ধ থাকে। আর বৃষ্টি থামলে কিংবা বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলে শুরু হবে খালাসের কাজ। তবে স্টিল, ক্লিংকারসহ যেসব পণ্য বৃষ্টিতে নষ্ট হয় না সেগুলো যতক্ষণ সম্ভব খালাস করা হয়।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, বহির্নোঙরে টানা তিন দিনের বেশি পণ্য খালাস না হওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বন্দর পরিচালন কার্যক্রমে। পণ্য নিয়ে আসা মাদার ভেসেলের অপেক্ষা ও জাহাজজটও বাড়বে। এতে আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ একটি মাদার ভেসেল একদিনের বেশি অবস্থান করলে শিপিং এজেন্টকে ১০-১৫ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ গুনতে হয়।

লাইটার চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকায় গত বুধ থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত কোনো লাইটার বহির্নোঙরে যায়নি। এ সময়ে বহির্নোঙরে যেতে না পারায় মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাসও হয়নি। অথচ স্বাভাবিক সময়ে কমপক্ষে ১৩০টি লাইটার বহির্নোঙরে যাওয়ার সুযোগ ছিল। আর প্রতিটিতে গড়ে এক হাজার ৫০০ টন হিসাবে প্রায় দুই লাখ টন পণ্য মাদার ভেসেল থেকে খালাস করা যেত। তবে গতকাল দুপুরে মোট ৫৬টি বুকিং হয়।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (পরিবহন) গোলাম সরওয়ার শনিবার বিকেলে বলেন, সাগরের আবহাওয়া এখনও অনুকূলে আসেনি। আগের তিন দিনে বহির্নোঙরে পণ্য খালাস ব্যাহত হয়েছিল। অন্যদিকে জেটিতে খোলা পণ্য খালাসও বিঘ্নিত হয়েছে। তবে বন্দরের কার্যক্রম চালু ছিল।

তিনি আরও বলেন, বহির্নোঙরে আমদানি পণ্যবোঝাই খালাসযোগ্য ১০৩টি বড় জাহাজ অপেক্ষমাণ আছে।

চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলের গভীরতা কম হওয়ায় ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৯ মিটার গভীরতার বড় জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারে না। তাই বড় আকারের মাদার ভেসেলগুলো পণ্য নিয়ে বহির্নোঙরে অপেক্ষা করে। আর বহির্নোঙর তিনটি অ্যাংকরেজে (আলফা, ব্রেভো ও চার্লি) মোট ৯৩টি জাহাজ ভিড়তে পারে। এর মধ্যে চার্লি অ্যাংকরেজে আট থেকে ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ, ব্রেভো অ্যাংকরেজে ৯ থেকে সাড়ে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ এবং আলফা অ্যাংকরেজে সাড়ে ১০ থেকে সাড়ে ১২ গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো হয়। আর জাহাজে থাকা ক্রেনের সাহায্যে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের পণ্যবাহী জাহাজে (লাইটার) পণ্য বোঝাই করে আনা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *