ঘোষিত দামে ডলার নেই বাজারে

স্টাফ রিপোর্টার

আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স– সব পর্যায়ে ডলারের দর ৫০ পয়সা করে কমানোর ঘোষণার প্রভাব নেই বাজারে। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগের দিনের চেয়ে ডলারের দর বেড়েছে। রেমিট্যান্স আহরণের শীর্ষ দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে শনিবার ১২২ টাকা ২৫ পয়সা পর্যন্ত দরে ডলার কিনেছে ব্যাংকগুলো। আগের দিন সর্বোচ্চ দর ১২২ টাকা ছিল। গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি এবং বৈদেশিক মুদ্রা লেনদনকারী ডিলারদের সংগঠন বাফেদা ৫০ পয়সা কমিয়ে রেমিট্যান্সে সর্বোচ্চ দর নির্ধারণ করে ১১০ টাকা। এর মানে, নির্ধারিত দরের চেয়ে ব্যাংকগুলো ১২ টাকা বেশি দর দিচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে, বাজারে সরবরাহ বাড়ায় দর কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

ডলার সংকটের প্রভাব কাটাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ, এলসিতে শতভাগ পর্যন্ত মার্জিন, দর যাচাইসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। ২০২১ সালের আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমে গত বুধবার ১৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। আগের বুধবার শেষে যা ১৯ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ডলারের দর ঘোষণা করে আসছে বাফেদা এবং এবিবি। প্রথমে রেমিট্যান্সে ১০৮ টাকা এবং রপ্তানিতে ৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে বাড়িয়ে উভয় ক্ষেত্রে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়। আর আমদানিতে নির্ধারণ করা হয় ১১১ টাকা। তবে গত বুধবার প্রতি ডলারে ৫০ পয়সা করে কমানোর ঘোষণা দেয় বাফেদা-এবিবি। মূলত যারা ডলার ধরে রেখেছে, তারা যেন দ্রুত ডলার ছেড়ে দেয়, সেজন্য এই কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও এতে কাজ হয়নি।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাফেদার ডলারের দর কমানোর ঘোষণা ঠিকই আছে। কেননা, বৈদেশিক মুদ্রার দর নির্ধারিত হয় ডলারের চাহিদা ও জোগানের ওপর। ইতোমধ্যে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। নির্ধারিত দরে ডলার না পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ঘোষিত দরের চেয়ে বেশি দিয়ে ডলার কেনায় ইতোমধ্যে কয়েক দফায় বিভিন্ন ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখনও এ ধরনের প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরবরাহ বাড়ার কারণে রিজার্ভ আর ডলার বিক্রি করা হবে কিনা জানতে চাইলে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক জ্বালানি, সারসহ বিভিন্ন সরকারি আমদানির বিপরীতে ডলার বিক্রি করে। যে কারণে এখনও বিক্রি না করার পর্যায়ে আসেনি।

বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের রেমিট্যান্স বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাহিদা ও জোগানের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্যের কারণে ডলারের দর কমছে না। বৃহস্পতিবার এক্সচেঞ্জ হাউসভেদে ১২০ থেকে ১২২ টাকা ২৫ পয়সা পর্যন্ত দরে রেমিট্যান্স কিনতে হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যতম বড় এক্সচেঞ্জ হাউস আল-আনসার থেকে গতকাল ১২২ টাকা ২৫ পয়সায় কিনতে হয়েছে। বাহরাইনসহ কয়েকটি দেশের এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার পাওয়া গেছে। আগের দিনও এ রকমই ছিল।

সম্প্রতি ভোজ্যতেলের দর আরও বাড়ানোর সুপারিশ করেছে আমদানিকারকদের সংগঠন ট্যারিফ কমিশনে পাঠানো চিঠিতে দর বাড়ানোর প্রস্তাবের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বর্তমানে তাদের ১২২ থেকে ১২৪ টাকা দরে ডলার কিনতে হচ্ছে। গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে ফরেন চেম্বার আয়োজিত অনুষ্ঠানে এক ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানে ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অথচ ডলার সংকটের কারণে এখন এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।

 

জানতে চাইলে বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম বলেন, বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে আগে ১৮ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি ছিল। এখন তা প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত হয়েছে। তিনি বলেন, কমানোর ঘোষণার পরও কেউ যদি বাড়িয়ে থাকে, তা  কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *