ঘুরে দাঁড়াচ্ছে থাই পর্যটন খাত
কভিডের বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে থাই পর্যটন খাত। কভিডজনিত বিধিনিষেধ শিথিলের পর থেকেই দেশটিতে পর্যটক বেড়ে গিয়েছে বহুলাংশে। যদিও মহামারী-পরবর্তী সময়ে পর্যটকের উৎস দেশের ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে ভিন্নতা। একসময় দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে চীনা পর্যটকের আধিপত্য থাকলেও জিরো কভিড নীতির আওতায় তারা এখন অনেকটা ঘরবন্দি রয়েছে। এ অবস্থায় মালয়েশিয়া ও ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পর্যটক পাচ্ছে থাইল্যান্ড। যদিও মহামারীপূর্ব পর্যায়ে পৌঁছতে দেশটিকে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চীনভিত্তিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবর অনুসারে, চলতি বছর থাইল্যান্ড ১ কোটি বিদেশী পর্যটকের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে চলেছে। দেশটির পর্যটন খাতের শক্তিশালী এ পুনরুদ্ধারে নেতৃত্ব দিচ্ছে মালয়েশীয় ও ভারতীয় ভ্রমণকারীরা।
থাই সরকারের মুখপাত্র অনুচা বুরাপাচাইশ্রী এক বিবৃতিতে বলেন, ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৭৫ লাখ ৬০ হাজার। বছরের বাকি সময়ে প্রতি মাসে অন্তত ১৫ লাখ পর্যটক আসবে বলে আমরা আশা করছি। বিশেষ করে ভারত ও মালয়েশিয়া থেকে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। দেশ দুটি থেকে থাইল্যান্ডের ফ্লাইট বুকিংয়ের লোড-ফ্যাক্টর (উড়োজাহাজের আসনের বিপরীতে যাত্রী সংখ্যার হার) নভেম্বর ও ডিসেম্বরে যথাক্রমে ৮৫ ও ৬৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
সমুদ্রসৈকত, জাতীয় উদ্যান ও বৌদ্ধমন্দিরের জন্য বিখ্যাত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটক বাড়ছে। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি মালয়েশীয় থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছে। এটিই একক দেশ থেকে যাওয়া সর্বোচ্চ পর্যটক। পাশাপাশি বছরের প্রথম নয় মাসে প্রায় ছয় লাখ ভারতীয় দেশটি ভ্রমণ করেছেন। তবে এ সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এক হাজার কম।
এদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চলমান বৈশ্বিক সংকট পার করতে পর্যটন খাতের ওপর নির্ভর করছে। বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের রেকর্ড দাম এবং অস্থির আর্থিক বাজারের আঘাতে ডলারের বিপরীতে থাই বাতের বিনিময় হার ১৬ বছরের সর্বনিম্ন স্তরে নেমেছে। একই কারণে দেশটির মূল্যস্ফীতিও ১৪ বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে পর্যটন খাতের শক্তিশালী পুনরুদ্ধার আশা দেখাচ্ছে দেশটিকে।
স্থানীয় কভিড সংক্রমণ কমে যাওয়ায় গত জুলাইয়ে সব ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়েছিল থাই সরকার। এটি পর্যটক আকর্ষণে সহায়তা করেছে। যেখানে কভিডজনিত নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল খাতটি। বিধিনিষেধ শিথিলের পর দেশটির বেশির ভাগ ব্যবসা স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরেছে।
থাইল্যান্ডের পর্যটন কর্তৃপক্ষের একটি পূর্বাভাসের উদ্ধৃতি দিয়ে অনুচা বুরাপাচাইশ্রী বলেন, আগামী বছর পর্যটকের সংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখে উন্নীত হতে পারে। এ সময়ে পর্যটন খাতের রাজস্ব প্রায় ৯৭ হাজার কোটি বাথে (২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার) উন্নীত হতে পারে। তবে খাতটির সামগ্রিক পরিস্থিতি এখনো কভিডপূর্ব পর্যায় থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৯ সালে প্রায় ৪ কোটি বিদেশী পর্যটক এবং এ খাত থেকে ৬ হাজার কোটি ডলার রাজস্ব পেয়েছিল দেশটি।
২০২৩ সালে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের রাজস্ব ৭৬ হাজার কোটি বাথে পৌঁছবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে পর্যটন কর্তৃপক্ষ। সরকারের মুখপাত্র বুরাপাচাইশ্রী বলেন, থাইল্যান্ড এখনো একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হিসেবে রয়ে গিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণ করতে চাওয়া পর্যটকদের আমরা চাহিদা মেটাতে পারি। তাছাড়া পর্যটক আকৃষ্টের ক্ষেত্রে আমরা যেকোনো দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারি।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চ্যান-ওচা পর্যটকের আগমন বিশেষ করে সেবা বিস্তৃত করতে বিমানবন্দরের অভিবাসন কাউন্টারে আরো কর্মী নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আশা করছি, আগামী বছরগুলোয় পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়বে।