ঘুরে দাঁড়াচ্ছে আইএলআফএসএল

জীবন ইসলাম

প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ লুট করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে- পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফএসএল), বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স করপোরেশন লিমিটেড (বিআইএফসি), ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল)ও এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

এই চার সংস্থার মধ্য থেকে আইএলএফএসএল  ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসাবে লভাংশ ঘোষণা করতে না পারলেও লোকসানের প্ররিমান কমায়ে এনেছে। বর্তমানে সামান্য লোকসানে প্রতিষ্ঠানটি আছে।আগামী বছর শেষে লাভজনক হবে বলে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান (এনআই খান) সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের সাথে দেয়া এক সাক্ষাঃকারে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন,  হাইকোর্ট থেকে আমাকে নিয়োগ দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটিকে সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য আইএলএফএসএল’র দেওয়া ঋণ নিয়ে যেসব প্রকল্প অচল হয়ে মুখ ধুবরে পরে আছে। তা পরিদর্শন করি এবং যেসব প্রকল্পে নতুন করে অর্থায়ন করলে লাভবান করা যাবে, সেইসব প্রকল্পগুলো চিহিৃত করি। তিনি আরো বলেন, চিহিৃত প্রকল্পগুলো নিয়ে পর্ষদে আলোচনা করা হয়। পর্ষদ একমত হলে হাইকোর্টের অনুমোদনসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে প্রকল্পগুলো নতুন করে চালূ করার উদ্যোগ গ্রহণ করি।

এনআই খান বলেন, ময়মনসিংহের ভালুকায় রেপটাইলস ফার্ম লিঃ নমের প্রকল্পে প্রায় শত কোটি টাকা ঋণ দেয় আইএলএফএসএল। ঋণ নেয়ার পর প্রকল্পটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। ওই অবস্থায় হাইকোর্ট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন এবং বর্তমান পর্ষদ একমত হয়ে নতুন করে প্রায় ৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। নতুন টাকা বিনিয়োগের ফলে কুমিরের খাবার সরবরাহ, চিকিৎসা প্রদানসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় মৃত্যুর হাত থেকে কুমির রক্ষা পায় এবং ১৭৩০টি কৃমির থেকে এক বছরে ২৫২৬টি কুমির হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে এনআই খান বলেন, আন্তর্জাতিক মানের স্বয়ংসম্পন্ন একটি আধুনিক খামার করতে পারলে অনেক দর্শানার্থীর আগমন ঘটবে। বর্তমান অবস্থায় অনেক দর্শক কুমির দেখার জন্য আসে। যা থেকে মোটা টাকা আয় করা সম্ভব। পাশাপাশি কুমিরের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারলে কুমিরের মাংস, চামড়া, হাড় এবং দাঁতের চাহিদা রয়েছে।দামও চড়া। বিশেষ করে ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় বিশাল বাজার সৃষ্ঠি হয়েছে। এসব বাজারের চাহিদা পূরণ করতে পারলে এ প্রকল্প লাভজনক হবে।

তিনি বলেন, একজন প্রকৌশলী দ্বারা যাচাই-বাছাই করার পর পর্ষদের অনুমোতি ও হাইকোর্টের অনুমোদন ক্রমে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার ভাকুম জয়মন্টপে অবস্থিত আনান কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড নতুন করে উৎপাদন শুরু করলে সালফিউরিক এসিড এবং ফিটকিরি উৎপাদন যথাযথভাবে করতে পারলে লাভজনক প্রকল্প হবে। এদুটি পণ্যেরই ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।উৎপাদন খরচ বাদ দিলে মোটা লাভ করার সুযোগ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, উদ্যোক্তারা ৬৩.৪১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। উদ্যোক্তারা সুষ্ঠুভাবে প্রকল্পটি পরিচালনা করতে না পেরে সরে যায়।কর্মচারিরাও সরে গেছে। এখন সুদাসলে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৬.১৯ কোটি টাকা ।প্রকল্পটি চালু করলে ঋণের এ টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হবে।

এনআই খান বলেন, ফিটকিরি এবং সালফিউরিক এসিড উৎপাদনকারী এ প্রকল্পের কিছু যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তসরুপ হয়েছে। তারপরও আশা করা যায়, প্রকল্পটি উৎপাদনে গেলে লাভ করবে। পাশাপাশি আইএলএফএসএল ‘র সকল দেনা পরিশোধ করা সম্ভব হবে। তাই এ প্রকল্পটি নতুন করে চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নর্দান জুট মিলস নতুন করে অর্থায়ন করে প্রকল্পটি চালু করা হলে লাভজনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই এ প্রকল্পের মরগেজকৃত সম্পদ বিক্রি করে ঋণের টাকা আদায় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে পাওনার পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা

তিনি বলেন, নতুন মেধাবী  লোক নিয়োগ, নতুন প্রকল্পে ঋণ অনুমোদন করাসহ আইএলএফএসএল কে শক্তিশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে যা করনীয় তা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি আগামী বছর পরিমাণ কম হলেও এ প্রতিষ্ঠান লাভাংশ ঘোষনা করতে পারবে। লোকসান শব্দটি আর কোনোদিন এ প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হবে না বলে আমরা আশা করছি।

তিনি বর্তমান পর্ষদকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বর্তমান পর্ষদ আইএলএফএসএল’কে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরীত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আর এই পর্ষদকে হাইকোর্টি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় সহযোগিতা এবং অনুমোদন দেয়ায় পর্ষদ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিতে পেরেছে।যেকারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত করা সম্ভব হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *