ঘাটতি মেটাতে ৫৫ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে নেয়ার লক্ষ্য

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য প্রায় সোয়া ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী, যাতে ঘাটতি দেখানো হতে পারে ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। বিপুল এ ঘাটতি পূরণে বিদেশী ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়বে। সেই সঙ্গে চাপ পড়বে ব্যাংক ব্যবস্থায়ও।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পনা যেভাবে করা হচ্ছে তাতে বাজেটের ঘাটতি মোকাবেলায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বিদেশী উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে। আর অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সংগ্রহ করা হতে পারে ৫৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এছাড়া সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে নেয়া হবে ৩০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

আগামী বাজেটে সব মিলিয়ে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকা। ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি রাখা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর থেকে প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার। করবহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। যদিও উল্লেখিত অংকের কোনোটাই এখনো চূড়ান্ত নয়। শেষ সময়ে এসে এতে কাটছাঁটও হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য বছরের মতো এবারো বাজেটের আকার বড় হবে, এতে সন্দেহ নেই। তবে বড় আকারের কারণে বাজেট বাস্তবায়ন করাটা কঠিন হবে। সরকার রাজস্ব প্রাপ্তির যেসব লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, তা পূরণ করা দুরূহ হবে। কারণ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কর, রাজস্ব বোর্ডবহির্ভূত করের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা পূরণ করা কঠিন হতে পারে। এছাড়া অন্যান্য খাত থেকেও প্রাপ্তি চলতি অর্থবছরের চেয়ে খুব বেশি হবে বলে মনে হয় না।

এ পরিস্থিতিতে সরকারকে বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অতিরিক্ত ঋণ করতে হবে। আর এর চাপ পড়বে মূল্যস্ফীতিতে। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগেও এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকার এ ঝুঁকি না নিলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার কাটছাঁট করে বাজেট সংশোধন করতে হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা এবি আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জন করা কঠিন হবে। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। যদিও অর্থমন্ত্রী বলছেন তারা নতুন কৌশল গ্রহণ করবেন। কর হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়াবেন। সেটি ভালো কৌশল, কিন্তু বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ আছে। আবার অর্থ সংস্থানের বিষয়গুলোও সঠিকভাবে কার্যকর করতে পারার উপরেই বাজেট ব্যয় নির্ভর করবে। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতের ব্যয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। যেহেতু আয়বৈষম্য বাড়ছে, কর্মসংস্থান বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে, এটির কোনো বিকল্প নেই।

ব্যাংকগুলোয় নগদ অর্থের ঘাটতির কথা শোনা যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। এর মধ্যে বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে অর্থ সংগ্রহ করার পরিকল্পনায় ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট বাড়তে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোয় নগদ টাকার সংকট বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে টাকা ধার নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ সুদহার উঠেছিল ৯.৭৫ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১ লাখ ১৯৪ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ২৫ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। মূল বাজেটে ঘাটতির বিপরীতে বৈদেশিক সূত্র থেকে অর্থায়নের প্রাক্কলন ছিল ৫৪ হাজার ৬৭ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে কমে দাঁড়ায় ৪৫ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উেসর মধ্যে সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য সূত্র থেকে অর্থায়নের পরিমাণ ছিল ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *