ঘরে নয়, বাইরে কামড়াচ্ছে এডিসের যে প্রজাতি

ডেঙ্গু ছড়ানোর সঙ্গে দুই ধরনের মশা জড়িত; একটি এডিস এলবোপিক্টাস, অন্যটি এডিস এজিপ্টাই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বাইরে গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গু রোগ ছড়ানোর জন্য এডিস এলবোপিক্টাস মশার একটি প্রজাতি দায়ী। কারণ এডিস এজিপ্টাই প্রজাতির মশা শহরাঞ্চলে বেশি থাকে। আর এডিস এলবোপিক্টাসের ঘনত্ব বেশি দেখা যায় গ্রামাঞ্চলে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. কবিরুল বাশার বলেন, এডিস এলবোপিক্টাস যেহেতু মহামারি আকারে রোগ ছড়াতে পারে, সেহেতু এডিস এলবোপিক্টাসই রোগ ছড়াচ্ছে বলে আমাদের ধারণা। তবে এখনও এর গবেষণালব্ধ তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে এ ধরনের মশা ঘরের ভেতরে নয়, বরং বাইরে কামড়ায় বলেই জানিয়েছেন তিনি।

সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগ ছড়ানোর সবচেয়ে উপযোগী সময় ধরা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, থেমে থেমে বৃষ্টি হলে সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গত ২৮শে আগস্ট প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব বলছে, এদিন ঢাকার ভেতরে নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৫৫১ জন। আর ঢাকার বাইরে নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৬০৬ জন। এ মৌসুমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এডিস এলবোপিক্টাস মশার কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন কীতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, এ ধরনের মশা ঘরের ভেতরে না, বাইরে থাকে। আর এ কারণেই ঘরের ভেতরে থাকলে তারা কামড়ায় না। কামড়ায় বাইরে বের হলে।

তিনি আরও বলেন, বেশিরভাগ মানুষই এডিস এলবোপিক্টাস কোথায় জন্মায় তার জানে না। এডিস এজিপ্টাইয়ের মতো এটি যেকোনো জায়গায় স্বচ্ছ পানি পেলেই বংশবৃদ্ধি করে না। বরং এর জন্য বিশেষ ধরনের পরিবেশের দরকার পড়ে।

ড. বাশার বলেন, এডিস এলবোপিক্টাস যেখানে জন্মায় তার মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে গাছের কোটর। এছাড়া বাঁশ কাটার পর সেখানে থেকে যাওয়া গোঁড়ায় যে পানি জমে, সেখানেও এলবোপিক্টাস মশা বেশি হয়। কলাগাছের দুটো পাতার মাঝখানে যে পানি জমে, কচু গাছের দুটো পাতার মাঝখানে যে পানি জমে, এগুলোকে আমরা বলি ন্যাচারাল কন্টেইনার। এলবোপিক্টাস জন্মায় ন্যাচারাল কন্টেইনারে।

এলবোপিক্টাসের বংশবৃদ্ধি সম্পর্কে মানুষ কমই জানে। তাই একে নিয়ন্ত্রণ করাও বেশ কঠিন। ড. কবিরুল বাশার বলেন, এলবোপিক্টাসকে ম্যানেজ বা নিয়ন্ত্রণ করাটা কঠিন। তাই এটি যদি ভেক্টোরিয়াল ক্যাপাসিটি (আক্রান্ত করার ক্ষমতা) খুব বেশি পেয়ে যায়, তাহলে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, এলবোপিক্টাস নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রকৃতিতে থাকা ন্যাচারাল কন্টেইনার বা পাত্রগুলোকে খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে বন্ধ করতে হবে। যেমন গাছের কোটর মাটি দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে, কলাগাছের পাতায় কোণা দিয়ে একটু কেটে দিলেই হয়। আর কচু গাছের বড় বড় ডগাগুলো ছেঁটে দিতে হবে।

এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে তিনি সাতক্ষীরা জেলার উদাহরণ টানেন। বলেন, সেখানকার জেলা প্রশাসন, জেলা-উপজেলা, ইউনিয়নসহ সব মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে ডেকে কর্মশালা করানো হয়েছে। যেখানে এডিস এজিপ্টাই এবং এডিস এলবোপিক্টাসের জন্ম এবং এগুলো নির্মূলের উপায় বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপ যদি সব জেলাতে নেয়া যায়, তাহলে ডেঙ্গু নির্মূল অনেক বেশি সহজ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *