গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে সুযোগ পাচ্ছে বেসরকারি কোম্পানি

শুরু থেকেই দেশের আন্তর্জাতিক তিন বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করছে রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বিমানের আয়েরও বড় অংশ আসছে এ সেবা থেকে। যদিও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার মান নিয়ে অসন্তোষ দীর্ঘদিনের।

সেবার মানোন্নয়নে এবার গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ব্যবস্থাপনায় সুযোগ পাচ্ছে বেসরকারি কোম্পানি। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ব্যবস্থাপনার লাইসেন্স পেতে শর্ত হিসেবে ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রভাইডার কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন হতে হবে ন্যূনতম ২০০ কোটি টাকা।

গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের লাইসেন্স পেতে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন, লাইসেন্স ফির হার নির্ধারণ করে গত ২৯ নভেম্বর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ব্যবস্থাপনায় তিন ক্যাটাগরিতে লাইসেন্স প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। লাইসেন্স ফি ছাড়াও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে মাসিক রাজস্ব আয়ের ৫ শতাংশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ‘এ’ ক্যাটাগরিতে একটি প্রতিষ্ঠান দেশের সব বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের হ্যান্ডলিং করতে পারবে। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন হতে হবে ২০০ কোটি টাকা।

‘বি’ ক্যাটাগরিতে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের শর্ত দেয়া হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। ‘বি’ ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠান শুধু অভ্যন্তরীণ রুটে পরিচালিত বিমানবন্দরগুলোয় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিতে পারবে। এছাড়া বাংলাদেশী এয়ারলাইনসগুলোও তাদের নিজস্ব ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করতে পারবে। এজন্য ‘সি’ ক্যাটাগরিতে লাইসেন্স নিতে হবে।

এক্ষেত্রে এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেটে প্রদত্ত শর্ত মানতে হবে এয়ারলাইনসগুলোকে। বর্তমানে দেশী এয়ারলাইনসগুলো নিজস্ব ফ্লাইটের গ্রাউন্ড সার্ভিস করে আসছে।

তিন ক্যাটাগরির লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন ফিও নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য লাইসেন্স ইস্যু ফি ১০ কোটি ও নবায়ন ফি ৫ কোটি টাকা। একই ক্যাটাগরিতে সিলেটের ওসমানী, চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও কক্সবাজার বিমানবন্দরের জন্য লাইসেন্স ইস্যু ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ কোটি ও নবায়ন ফি ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

অন্যান্য বিমানবন্দরের জন্য লাইসেন্স ইস্যু ফি ৩০ লাখ ও নবায়ন ফি ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া প্রতিটি ক্ষেত্রেই বেবিচককে মাসিক ৫ শতাংশ হারে রাজস্ব আয়ের ভাগ দিতে হবে।

‘বি’ ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য লাইসেন্স ইস্যু ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ কোটি ও নবায়ন ফি ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। একই ক্যাটাগরিতে সিলেটের ওসমানী, চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও কক্সবাজার বিমানবন্দরের জন্য লাইসেন্স ইস্যু ফি ২ কোটি ও নবায়ন ফি ১ কোটি টাকা।

দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরের জন্য লাইসেন্স ইস্যু ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ লাখ ও নবায়ন ফি ৫ লাখ টাকা। এই ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানকেও বেবিচককে মাসিক রাজস্ব আয়ের ৫ শতাংশ ভাগ দিতে হবে। এছাড়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিশোধিত মূলধনের ৫ শতাংশ হারে বেবিচকের কাছে সিকিউরিটি ডিপোজিট ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে জমা দিতে হবে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, লাইসেন্সিং ও প্রতিযোগিতার অভাবে দেশের বিমানবন্দরগুলোর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থার মান অনুসরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে যাত্রী দুর্ভোগের পাশাপাশি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বিমানবন্দরের ভাবমূর্তিও। আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।

বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাজের মধ্যে রয়েছে বোর্ডিং পাস ইস্যু, ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং, কার্গো লোড-আনলোড ও এয়ারক্রাফট সার্ভিসসহ বিভিন্ন কার্যক্রম। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশাপাশি চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বেও রয়েছে বিমান। বিমানবন্দরের এ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং থেকেই বিমানের আয়ের বড় অংশ আসছে।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিজস্ব ফ্লাইট ছাড়াও ২৬টি বিদেশী এয়ারলাইনসের ১৮ হাজার ৬২৮টি ফ্লাইট হ্যান্ডলিং করেছে বিমান।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান তার নিজস্ব ১৬ হাজার ৪৭৩টি ও ২৬টি বৈদেশিক এয়ারলাইনসের ৪৮ হাজার ৫০২টি ফ্লাইট মিলে মোট ৬৪ হাজার ৯৭৫টি ফ্লাইটে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়েছে। এ খাত থেকে বিমানের বার্ষিক আয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।

গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সুযোগ পেলে বিমানের আয়ে প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এএম মোসাদ্দিক আহমেদ  বলেন, এ খাত থেকে বিমানের আয়ের বড় অংশ আসে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংকে সরকার লাইসেন্সিংয়ের আওতায় আনছে।

বিষয়টিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। গত কয়েক বছরে বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে অনেক উন্নয়ন করেছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করেছে। অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতায় বিমান অনেক এগিয়ে রয়েছে। সুতরাং আমরা আশা করছি, সব প্রক্রিয়া শেষে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের ব্যবস্থাপনায় বিমানই থাকবে।

সেবার মান নিয়ে যাত্রীদের পাশাপাশি বিমানবন্দরে কার্যক্রম পরিচালনাকারী এয়ারলাইনসগুলোর দীর্ঘদিনের অভিযোগ ও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা উন্নয়নের জন্য নীতিমালা করছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। গত বছর ‘গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিস প্রভাইডারস লাইসেন্স’ শীর্ষক এ নীতিমালার একটি খসড়াও তৈরি করেছে বেবিচক।

নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, দেশী প্রতিষ্ঠানকে জয়েন্ট স্টকে কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত থাকতে হবে। বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ মালিকানা থাকলে ৫১ শতাংশ শেয়ার বাংলাদেশী হতে হবে। যেকোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুই বছর গ্রাউন্ড সার্ভিসের অভিজ্ঞতা থাকা প্রতিষ্ঠান ‘এ’ ক্যাটাগরিতে লাইসেন্সের আবেদন করতে পারবে।

তবে কোনো বিদেশী প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন দুটি দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দিনে কমপক্ষে ৩০টি উড়োজাহাজের গ্রাউন্ড সার্ভিসের ন্যূনতম পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ‘বি’ ক্যাটাগরির ক্ষেত্রেও তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দিনে কমপক্ষে ২০টি উড়োজাহাজের গ্রাউন্ড সার্ভিসের ন্যূনতম দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *