গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে চীন-জিসিসি বাণিজ্য চুক্তি
চীনের সঙ্গে গালফ কো-অপারেশন (জিসিসি)ভুক্ত দেশগুলোর বাণিজ্যিক সম্পর্ক ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই মধ্যপ্রাচ্যে চীনের উপস্থিতি নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ। দুই পক্ষ এখন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির দ্বারপ্রান্তে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহানের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ ব্যাপারে দ্রুত মীমাংসায় পৌঁছতে জোর দিয়েছেন। উভয় পক্ষের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে এ চুক্তি। খবর দ্য ন্যাশনাল নিউজ।
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং দাবি করেন, উভয় পক্ষকে সহযোগিতার সম্পর্ক আরো গভীর করা প্রয়োজন। বিশেষ করে অর্থনীতি, বাণিজ্য, জ্বালানি, নির্মাণ স্থাপনা, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির মতো খাতগুলোয়। মজবুত করতে হবে চীন ও জিসিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কৌশলগত অংশীদারত্ব। যত দ্রুত সম্ভব প্রবেশ করতে হবে মুক্ত বাণিজ্যের যুগে। এদিকে ইঙ্গিত করে নাসের সাইদি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের প্রধান ও অর্থনীতিবিদ নাসের সাইদি বলেন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এ বছরেই স্বাক্ষরিত হতে পারে। যদিও ২০০৪ সাল থেকেই চীন ও জিসিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এফটিএ নিয়ে আলোচনা বিদ্যমান। দীর্ঘ এ সময়ে বাণিজ্য নির্ভর অনেক বিষয়েই একমত হয়েছে দুই পক্ষ।
গত ডিসেম্বরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সৌদি আরবে ঐতিহাসিক সফর করেন। ঘটনাটি মধ্যপ্রাচ্যের বাণিজ্যনীতিতে কৌশলগত পরিবর্তনের আভাস দেয়। ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী জিসিসিভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সম্পর্কের সূচক। ২০১০-২১ সালে দ্বিগুণ রূপ নিয়েছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। উপসাগরীয় অঞ্চলের মোট বাণিজ্যের ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ এখন চীনের সঙ্গে। সৌদি আরবের শীর্ষ ব্যবসায়িক অংশীদার দেশটি। জেনারেল অথরিটি ফর স্ট্যাটিসটিকস অনুসারে, ২০২২ সালের প্রথম নয় মাসেই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল ৭ হাজার ৮৮০ কোটি ডলার। দেশটির রফতানি পণ্যের ১৬ শতাংশের গন্তব্য ছিল চীন। আমদানির ২১ শতাংশের উৎস ছিল দেশটি। চীনের সঙ্গে বাণিজ্যে আমিরাতও পিছিয়ে নেই। ২০২২ সালে ৯ হাজার ৯২৭ কোটি ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে দেশটির সঙ্গে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি। দেশটি থেকে চীনের আমদানি বেড়েছে ৫৯ শতাংশ, সেখানে রফতানি বেড়েছে ২৩ শতাংশ। একদিকে চীন আমিরাতের জন্য বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে আরব অঞ্চলে চীনের দ্বিতীয় বৃহৎ অংশীদারে পরিণত হয়েছে আমিরাত।
উপসাগর অঞ্চলে নির্মাণ ও জ্বালানি খাতের দ্রুতবর্ধনে চীনের অবস্থান মজবুত হয়েছে। কাঁচামাল সামগ্রী ও বাণিজ্যিক সেবা নিয়ে দেশগুলোয় সরব চীন। নতুন চুক্তি এই সম্পর্ককে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। চুক্তিতে অপরিশোধিত তেলের বাইরে গিয়েও জ্বালানি খাত একটা বড় অনুঘটক হয়ে উঠবে স্বাভাবিকভাবেই। বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাস ও নবায়নযোগ্য শক্তি থাকবে প্রথম সারিতে। তেল ব্যতীত অন্যান্য পণ্যও চুক্তির মধ্যে পালন করবে অনুঘটকের ভূমিকা। সাইদি দাবি করেন, এফটিএ চুক্তিতে প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিকসের মতো নতুন কিছু খাত ভূমিকা রাখবে। যুক্ত হবে উৎপাদন, পর্যটন ও মহাকাশ গবেষণা।
উপসাগরীয় দেশগুলো তাদের বাণিজ্যিক ভবিষ্যতের জন্য প্রাচ্যের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। কৌশলগত দিক দিয়ে পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থিতিশীল রেখেই। জিসিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য চীন প্রধান আমদানিকারক হিসেবে পরিণত হবে। বিপরীতে চীনের শিল্প, বাণিজ্য ও অর্থনীতিকে নিজেদের বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করতে পারবে দেশগুলো। দ্বিপক্ষীয় বিনিময়ের জন্য ডলারের মাধ্যমে দাম নির্ধারিত হলেও পরিশোধের জন্য ইউয়ান ব্যবহার করা যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। সে সিদ্ধান্ত হলে দৃশ্যমান প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।