গুঠিয়া মসজিদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার

বরিশাল শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স। যা স্থানীয়দের কাছে গুঠিয়া মসজিদ নামে পরিচিত। অপরূপ সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এ মসজিদটিতে সারা বছরই লেগে থাকে পর্যটকদের ভিড়। শুধু মুসলমানরাই নয়, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে এখানে সবাই আসছে মসজিদটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

গুঠিয়া মসজিদের মূল সৌন্দর্য ফুটে ওঠে সন্ধ্যার পর। মসজিদ ভবনের সৌন্দর্য বাড়াতে বিভিন্নস্থানে বর্ণিল কাচ, মূল্যবান মার্বেল পাথর, গ্রানাইট ও সিরামিক দিয়ে করা হয়েছে নকশার কাজ।

মসজিদের দৃষ্টিনন্দন ঝাড়বাতি ছাড়াও রয়েছে বাহারি নকশার আলোকবাতির ব্যবস্থা। এছাড়া বাইরে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স ঘিরেও রয়েছে বাহারি আলোকবাতি। যা রাতের বেলা মসজিদের শোভা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া মসজিদটির তিন পাশে খনন করা হয়েছে কৃত্রিম লেক।

মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু জানিয়েছেন, তিনি তার কয়েকজন স্থপতি বন্ধুকে নিয়ে দুবাই, তুরস্ক, মদিনা শরীফ, ভারত ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যান। সেখানে তারা বিভিন্ন মসজিদ ঘুরে দেখেন ও সেসব মসজিদের স্থাপত্যশৈলী প্রয়োগ করে গুঠিয়ায় মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির আরেকটি বিশেষ দিক হলো, এর সামনের পুকুরটি এমনভাবে খনন করা হয়েছে যাতে পানিতে মসজিদটির পুরো প্রতিবিম্ব দেখা যায়।

মসজিদে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্নস্থান থেকে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ ঘুরতে এসেছে। পরিবার পরিজন ও বন্ধু বান্ধব নিয়ে ঘুরতে আসা লোকজন যে যার মতো ছবি তুলে সময় পার করছে।

ঝালকাঠি থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা শফিকুল আলম তুহিন বলেন, অনেকদিন ধরেই আসবো আসবো করে আসা হয়নি, আজ পরিবার নিয়ে এসেছি। গুঠিয়া মসজিদটি আসলেই সৌন্দর্যের দারুণ নিদর্শন। যে কেউ মসজিদটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবে। তাছাড়া মসজিদটির মূল সৌন্দর্য ফুটে ওঠে রাতে। নান্দনিক কারুকার্য খচিত অংশগুলো রাতের বর্ণিল আলোকসজ্জায় আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। যা দেখতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসে লোকজন।

বরিশাল নগরী থেকে ঘুরতে আসা সম্রাট বলেন, এর আগে অনেকবার এসেছি। তারপরও সুযোগ পেলে চলে আসি। মূলত মসজিদটির সৌন্দর্য কাছে টানে। এর আগে বিকেলে দূর্গা সাগর দিঘীও ঘুরে দেখেছি। সন্ধ্যায় মসজিদ প্রাঙ্গণে এসেছি। কারণ সন্ধ্যায় লাইটগুলো জ্বললে মসজিদের আসল সৌন্দর্য দেখা যায়।

মসজিদের শিলালিপি সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় এক ব্যবসায়ী এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা। ২০০৩ সালে ব্যক্তি উদ্যোগে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। প্রায় ১৪ একর জমির ওপর স্থাপিত এই মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। ওই নির্মাণ কাজে প্রায় দুই লাখ ১০ হাজার নির্মাণ শ্রমিক তিন বছর কাজ করেছে। ২০টি গম্বুজের স্থাপত্যকলায় সাজানো হয়েছে মসজিদটি। এছাড়াও রয়েছে একটি ডাকবাংলো, এতিমখানা, গাড়ি পার্কিং, পুকুর, লেক এবং বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের বাগান। একটি হ্যালিপেডও রয়েছে। মসজিদটিতে এক সঙ্গে প্রায় এক হাজার ৫০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। যেখানে নারী, পুরুষদের জন্য রয়েছে আলাদা নামাজের স্থান। এছাড়া ২০ হাজার অধিক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ঈদগাহ ময়দান রয়েছে।

মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্সের মূল গেট দিয়ে প্রবেশ করলে ডান পাশে রয়েছে একটি পুকুর, পুকুরটির চারপাশ নানান রঙের ফুল ও গাছ দিয়ে সাজানো। দর্শনার্থীদের চলাচলের জন্য পুকুর পাড়ের রাস্তা পাকা করে দেওয়া হয়েছে। মসজিদটির দক্ষিণ দিকে রয়েছে প্রায় ১৯৩ ফুট উচ্চতার একটি মিনার। পুরো মসজিদ জুড়ে রয়েছে ছোট বড় ৯টি গম্বুজ। মসজিদ ভবনকে ঘিরে বিভিন্নস্থানে ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে লেখা হয়েছে আয়াতুল কুরসি, সুরা আর রহমানসহ আল কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও সুরা।

বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বাস বা মাহিন্দ্রায় করে আধঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছানো যায় গুঠিয়া মসজিদে। বরিশাল-বানারীপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে হওয়ায় বাস বা অটো থেকে নেমেই মসজিদটি চোখে পড়বে। সন্ধ্যার সময় মসজিদটি ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময়। কারণ মসজিদটি তার রূপ দিন অপেক্ষা রাতেই বেশি মেলে ধরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *