গালওয়ানের পর দেপসাং ভ্যালির দিকে হাত বাড়ালো চীন
গালওয়ান ভ্যালি, প্যাংগং লেকের পরে এবার দেপসাং ভ্যালিতেও চলে এসেছে চীনা সেনাবাহিনী। ফলে চীন সামরিক শক্তি দিয়ে ভারতের এলাকা কব্জা করার চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ভারত। ভারতের সেনা সূত্রের বরাত দিয়ে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে দেশটির প্রভাবশালী পত্রিকা আনন্দবাজার।
সম্প্রতি গালওয়ান উপত্যকায় চীনা সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের ২০ সেনা সদস্যের প্রাণ গেছে। এ সংঘর্ষে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন আরও ৭০ জন সেনা। এই সংঘর্ষকে ঘিরে ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে গালওয়ান উপত্যকাকে নিজেদের বলে দাবি করেছে বেইজিং। তবে চীনের এই দাবিকে অগ্রহণযোগ্য বলেছে ভারত।
জম্মু-কাশ্মীরে সেনার ১৬ কোরের সাবেক কমান্ডার ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল রামেশ্বর রায়। তিনি আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘এতদিন চীনের পক্ষে দেপসাং ভ্যালিতে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকা মুশকিল ছিল। কারণ পাহাড়ের ওপরে দৌলত বেগ ওল্ডি বিমানঘাঁটি থেকে ভারত ওই এলাকায় কর্তৃত্ব করে। কিন্তু এখন চীনের সেনা দেপসাং ভ্যালির দক্ষিণে, গালওয়ান ভ্যালিতে পাহাড়ের মাথায় চলে এসেছে। অপরদিকে প্যাংগং লেকের মধ্যে ঢুকে আসা ফিঙ্গার ফোর নামক পাহাড়ের মাথাতেও চীনের সেনা ঘাঁটি গেড়ে বসেছে।’
ভারতীয় সাবেক এই সেনা কমান্ডারের আশঙ্কা, এরপরে চীন দেপসাংয়েও সামরিক শক্তি বাড়াতে শুরু করবে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেপসাং ভ্যালি থেকে একেবারে নিচে ডেমচক পর্যন্ত কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা চীনের রয়েছে।
সেনা সূত্র বলছে, সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের এই আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়। কারণ দেপসাংয়ে ইতোমধ্যেই সেনার সংখ্যা বাড়াতে শুরু করেছে চীন। সেখানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন করেছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন এলাকায় সেনার সঙ্গে ট্যাঙ্ক, কামানও মোতায়েন করতে শুরু করেছে। ওই এলাকায় দ্রুত সেনা মোতায়েনের জন্য রাস্তাও তৈরি করছে চীন।
অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল রায়ের এ বিষয়ে ভাষ্য, ‘দারবুক থেকে শিয়ক হয়ে দৌলত বেগ ওল্ডি বিমানঘাঁটি পর্যন্ত যে রাস্তা তৈরি হচ্ছে, তা আমাদের এলাকায় হলেও তা চীনের মাথাব্যথার কারণ। চীন পাহাড়ের ওপর থেকে এই রাস্তায় গতিবিধির ওপর নজরদারি করতে চায় বলেই গালওয়ান ঘাঁটির ১৪ নম্বর পেট্রলিং পয়েন্ট সংলগ্ন এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার তোয়াক্কা না করে পাহাড়ের ওপরে চলে এসেছে। সেখান থেকে চীন দৌলত বেগ ওল্ডির দিকে যাওয়া রাস্তায় নজরদারি করতে পারবে। ফলে সামরিক দিক থেকে আমাদের দৌলত বেগ ওল্ডি দুর্বল হয়ে পড়ল।’
এর আগে ২০১৩ সালের এপ্রিলে দেপসাং ভ্যালিতে প্রায় তিন সপ্তাহ ঘাঁটি গেড়েছিল চীনের সেনারা। আগস্টে দেপসাংয়ের ওপরে কর্তৃত্ব নিতে বিশ্বের সর্বোচ্চ বিমানঘাঁটি দৌলত বেগ ওল্ডি চালু করে দেয় ভারত। তবে এবার গালওয়ান বা প্যাংগং থেকে চীনের সেনাকে সরানো সহজ হবে না বলেই মনে করছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তারা।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা রামেশ্বর বলেন, ‘অনেকে বলছে, চীনের সেনা শীতে সরে যাবে। সরে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলে তারা কংক্রিটের বাঙ্কার তৈরি করত না। আমাদের জওয়ানেরা শীতের সময় ওই ১৬ হাজার ফুট উচ্চতায় থাকতে পারলে, ওরা পারবে না কেন?’
তা হলে এখন উপায়? এর উত্তরে এই অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল বলেন, ‘আমি যদি মনে করি, আমাদের পাল্টা আক্রমণে যাওয়ার উপায় নেই, তাহলে ওদের অন্তত ওখানেই আটকাতে হবে। গালওয়ান, প্যাংগং বা দেপসাং-কোথাও এগোতে দেয়া চলবে না। চীন কথা বোঝে না। সমানে সমানে শক্তি হলে তবেই গুরুত্ব দেয়। সেটাই করতে হবে।’
কর্তৃত্ব করার লক্ষ্যেই প্যাংগং লেকের উত্তরে ফিঙ্গার-ফোর বলে চিহ্নিত পাহাড়ের মাথাতেও চীন ঘাঁটি গেড়েছে বলে ধারণা ভারতের। ওই এলাকার ভৌগোলিক বিষয়াদির সঙ্গে পরিচিত রামেশ্বরের বক্তব্য, চীনের সেনারা প্যাংগংয়ের পাহাড়ের মাথায় অন্তত ৬০টি কংক্রিটের বাঙ্কার তৈরি করে ফেলেছে। পাহাড়ের নিচে ভারতের ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের (আইটিবিপি) চৌকি থাকলেও পাহাড়ের ওপরে চীন ঘাঁটি গেড়ে ফেলায় ভারতের সেনা বা আইটিবিপি ফিঙ্গার-এইটের দিকে নিজ এলাকাতেই যেতে পারছে না।