গার্ডিয়ানের ‘বিভ্রান্তিকর’ প্রতিবেদন বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত তৈরি পোশাক শিল্প। বিগত তিন দশকে এই খাতে উৎপাদন ব্যবসা দ্রুত প্রসারিত হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের জিডিপিতে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ছিল ১১ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে মোট রপ্তানিতে জিডিপিতে ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশ অবদান রাখে, যা প্রায় ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলারেরও বেশি। বিজেএমইএ বলছে, বর্তমানে তৈরি পোশাক খাতে মোট শ্রমিক রয়েছেন প্রায় ৩৬ লাখ। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশই নারী শ্রমিক।
আগে ন্যূনতম মজুরি হিসেবে মাসিক ৮ হাজার টাকা পেতেন পোশাক শ্রমিকরা। মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে চলতি বছরের ৮ নভেম্বর শ্রমিকদের মাসিক ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা চূড়ান্ত করে মজুরি বোর্ড, যা বর্তমানের তুলনায় মজুরি বৃদ্ধির এই হার ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। এর সঙ্গে ওভারটাইম করে অনেক শ্রমিক ১৭-২০ হাজার টাকা মাস শেষে ঘরে তোলেন। এতে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করেন বলে জানান বিজেএমইএ নেতারা।
তবে সম্প্রতি ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে বাংলাদেশি এক নারী পোশাক শ্রমিকের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রাতে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন নারী পোশাক শ্রমিকরা। ওই প্রতিবেদনে এক নারী শ্রমিকের জীবনকাহিনী তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে রুবি রফিক (ছদ্মনাম) নামে ওই নারীর বিষয়ে বলা হয়, প্রতি রাতে সন্তানরা ঘুমিয়ে পড়লে বাসা থেকে বের হন তিনি, চলে যান কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত বাজারের দিকে। অভাবের তাড়নায় তিনি দিনে পোশাক শ্রমিক আর রাতে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করেন।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌনকর্মে বাধ্য হওয়া ওই নারী সাধারণত জনপ্রতি ২০০ টাকা করে নেন। এতে প্রতিদিন তার আয় হয় ৪০০-৬০০ টাকা। তিনি ওই টাকা দিয়ে পরিবারে ক্ষুধার চাহিদা মেটান। আর কারখানায় সপ্তাহে ৭ দিন ১০ ঘণ্টা করে কাজ করে ১৫০০-১৭০০ টাকা উপার্জন করেন রুবি। সেটার বেশির ভাগই খরচ হয় ভাড়া, বিল এবং তার সন্তানদের পড়ালেখার জন্য।
প্রতিবেদনে রুবি নামে ওই নারীর জীবনের এমন করুণ গল্প তুলে ধরা হলেও বাংলাদেশের কত শতাংশ নারী পোশাক শ্রমিকের কাজ করছেন তার উল্লেখ নেই। সেসব শ্রমিকদের মধ্যে কত শতাংশ নারী আর্থিক সংকটে থাকেন, তাদের মধ্যে কারা যৌনকর্ম করতে বধ্য হচ্ছেন তারও কোনো পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়নি। এমনকি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক কোনো প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যও নেওয়া হয়নি। করা হয়নি জরিপও।
এ বিষয়ে বিজেএমইএর সহ-সভাপতি শহিদ উল্লাহ আজিম বলেন, ‘আমাদের দেশের পোশাক শ্রমিকরা বরং অন্যান্য দেশের পোশাক শ্রমিকদের চেয়ে আর্থিকভাবে অনেক ভালো অবস্থানে আছেন। গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ নারীদের মধ্যে পোশাক শ্রমিকরাই সবচেয়ে বেশি আয় করে সংসারে ব্যয় করছেন। এক পরিবার থেকে একাধিক মানুষ কাজ করছেন, আয়ও ভালো হচ্ছে। ভালো আয়ে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে বলেই তাদের বাড়িতে রঙিন টেলিভিশন, ফ্রিজ, হাতে স্মার্টফোন রয়েছে।’
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনের বিষয়ে বিজেএমইএর এই নেতা বলেন, ‘কিছু কিছু মানুষ এবং দেশ ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের দেশের পোশাক খাত এবং শ্রমিকদের বিরুদ্ধে প্রোপাগাণ্ডা ছড়ায়। তারা আগেও এমনটি করেছে, এখনও করছে। এসবের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে। নারীদের অংশগ্রহণে তৈরি পোশাক খাত এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে।‘
এদিকে পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দেশের নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির নারীরা যেখানে পোশাক শ্রমিকের কাজ করে ভালো উপার্জন করছেন এবং পরিবারকে ভালোভাবেই সহযোগিতা করছেন সেখানে গার্ডিয়ানের এমন একটি প্রতিবেদন উদ্দেশ্যমূলক ভূমিকা পালন করছে। সেই সঙ্গে অনেকের ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার জন্য প্রতীকী চরিত্রে কোনো জরিপ এবং তথ্য উপাত্ত ছাড়াই এমন নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে।