খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক রফতানি পূর্বাভাস কমিয়েছে আইজিসি
২০২১-২২ মৌসুমের জন্য খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক রফতানি পূর্বাভাস কমিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইনস কাউন্সিল (আইজিসি)। সংস্থাটি জানায়, মৌসুম শেষে রফতানি দাঁড়াবে ৪১ কোটি ৫০ লাখ টনে। আগের পূর্বাভাসের তুলনায় ৯০ লাখ টন খাদ্যশস্যের রফতানি কমবে বলে জানানো হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দুটি খাদ্যশস্য উৎপাদক দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন। কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলের দেশ দুটির মধ্যে সংঘাত শুরুর পর খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিপর্যয় নেমেছে। যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশেও। এ কারণে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে গম ও ভুট্টার রফতানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। এটি ব্যাপক প্রভাব ফেলছে বৈশ্বিক রফতানিতে।
এক প্রতিবেদনে আইজিসি জানায়, বর্তমানে ইউক্রেন কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দরে বাণিজ্যিকভাবে পণ্য পরিবহন বন্ধ রেখেছে। অন্যদিকে কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলে রাশিয়ার টার্মিনালগুলো তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির রফতানি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর তথ্য বলছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর পর পরই কৃষ্ণ সাগরে খাদ্যশস্য বাণিজ্য বন্ধ হয়ে পড়ে। বৈশ্বিক গম রফতানির ৩০ শতাংশই আসে এ অঞ্চল থেকে। এছাড়া ১৭ শতাংশেরও বেশি ভুট্টা রফতানি করে অঞ্চলটি।
আইজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা কিছুটা লাঘব করতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ব্রাজিল।
সংস্থাটি চলতি মাসে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক উৎপাদন পূর্বাভাস বাড়িয়েছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি মৌসুম শেষে উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ২২৮ কোটি ৪০ লাখ টনে, যা আগের পূর্বাভাসের তুলনায় ৩০ লাখ টন বেশি।
তবে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক ব্যবহার পূর্বাভাস কমিয়েছে আইজিসি। ২০২১-২২ মৌসুম শেষে ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়াবে ২২৭ কোটি ৮০ লাখ টনে। আগের পূর্বাভাসে ২২৮ কোটি ৬০ লাখ টন খাদ্যশস্য ব্যবহারের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। এদিকে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক মজুদ ৫৯ কোটি ৬০ লাখ টন থেকে বেড়ে ৬০ কোটি ৭০ লাখ টনে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আইজিসি ভুট্টার বৈশ্বিক রফতানি পূর্বাভাস ৬০ লাখ টন কমিয়েছে। নতুন পূর্বাভাসে ১৭ কোটি ৩০ লাখ টন ভুট্টা রফতানির কথা বলা হয়েছে। শস্যটির উৎপাদন পূর্বাভাস ১২০ কোটি ৩০ লাখ টন থেকে বাড়িয়ে ১২০ কোটি ৭০ লাখ টন করা হয়েছে। তবে শস্যটির ব্যবহার ২০ লাখ টন কমে ১১৯ কোটি ৭০ লাখ টনে নামার কথা বলা হয়েছে। যদিও ভুট্টার মজুদ বেড়ে ২৮ কোটি ৭০ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। আগের পূর্বাভাসে ২৭ কোটি ৮০ লাখ টনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।
এদিকে চলতি মৌসুমে গমের বৈশ্বিক বাণিজ্য ১৯ কোটি ৪০ লাখ টনে নামতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগের পূর্বাভাসে ১৯ কোটি ৭০ লাখ টনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। শস্যটির উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ৭৮ কোটি ১০ লাখ টনে। অন্যদিকে গমের ব্যবহার পূর্বাভাস ৭৮ কোটি ১০ লাখ টন থেকে কমিয়ে ৭৭ কোটি ৮০ লাখ টনে নামানো হয়েছে। তবে মজুদ পূর্বাভাস ২৮ কোটি ১০ লাখ টনে উন্নীত করা হয়েছে। এর আগে ২৭ কোটি ৮০ লাখ টনের কথা বলা হয়েছিল।
চলতি মৌসুমে চালের বৈশ্বিক উৎপাদন বেড়ে ৫১ কোটি ৪০ লাখ টনে পৌঁছতে পারে। আগের পূর্বাভাসে ৫১ কোটি ১০ লাখ টন উৎপাদনের কথা বলা হয়েছিল। শস্যটির বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫ কোটি ১০ লাখ টনে, যা আগের পূর্বাভাসের তুলনায় ২০ লাখ টন বেশি।