খাতুনগঞ্জে পণ্য বেচাকেনা অর্ধেকে নেমেছে
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক সপ্তাহও বাকি নেই। পুরো দেশে নির্বাচনী আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা। জনগণও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বেশ আগ্রহী। এর প্রভাব পড়েছে ভোগ্যপণ্যের বাজারে। নির্বাচনের ডামাডোলে ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ।
ফলে এখানকার পাইকারি আড়তগুলোয় ভোগ্যপণ্যের বেচাকেনা অন্যান্য সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। কমে গেছে লেনদেনও। ফলে নির্বাচনকে ঘিরে বছরের শেষ সময়ে এসে লোকসানের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা।
গতকাল সরেজমিন খাতুনগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পাইকারি বাজার বেশ ফাঁকা। অন্যান্য সময়ে খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে ঢোকার আগেই বক্সিরহাট মোড় থেকে যানজট লেগে থাকে। রাস্তার দুপাশে রাখা থাকে অসংখ্য পণ্যবাহী গাড়ি। গতকাল খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জের মূল সড়কে পণ্যবাহী গাড়ি ছিল খুবই কম। ক্রেতা প্রায় নেই বললেই চলে।
পাইকারি দোকান ও আড়তগুলোর মতো খাতুনগঞ্জে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখাগুলোতেও লোক সমাগম ছিল আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় কম। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলতি মাসের শুরু থেকেই পাইকারি বাজারে ক্রেতা সমাগম কমতে শুরু করেছিল। তবে সপ্তাহখানেক আগে থেকে খাতুনগঞ্জ বাজার প্রায় ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ভোগ্যপণ্যের বেচাকেনা ততই কমছে। সর্বশেষ এক সপ্তাহেই বেচাকেনা প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।
এ বিষয়ে খাতুনগঞ্জের কাঁচাপণ্য ব্যবসায়ী চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ে প্রতিদিন ৪০-৫০ ট্রাক পেঁয়াজ আসে। বর্তমানে এর পরিমাণ ১০-১৫ ট্রাকে নেমে এসেছে। মূলত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেচাকেনা কমে আসায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা আড়তে পেঁয়াজ ওঠানো কমিয়ে দিয়েছেন।
স্থানীয় ডাল ব্যবসায়ী আহমেদ রশিদ আমু বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কায় ভুগছেন। এ শঙ্কা থেকেই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারি বাজারে ক্রেতারা আসছেন না। অনেকেই ফোনে পণ্য অর্ডার দিচ্ছেন। তবে এর পরিমাণ সামান্য। আগে যেখানে একটি আড়ত থেকে প্রতিদিন ২০-২৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হতো, এখন ১০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রিও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি নির্বাচনের সময় দেশে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে।
হামিদুল্লাহ মার্কেট কাঁচাপণ্য ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য অনুযায়ী, এ বাজারে প্রতিদিন ৩০-৪০ কোটি টাকার কৃষিপণ্য বেচাকেনা হয়। বর্তমানে এখানকার প্রাত্যহিক লেনদেন ১০ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী নেওয়াজ মোর্শেদ বলেন, খাতুনগঞ্জে প্রতিদিন ২০-৩০ কোটি টাকার ভোজ্যতেল বেচাকেনা হয়। গতকাল এখানে সাকল্যে ৫-৭ কোটি টাকার ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) বিক্রি হলেও নগদে পণ্য বিক্রি হয়েছে খুব কম। কয়েক দিন ধরেই বেচাকেনা কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা লোকসানের আশঙ্কা করছেন।
বণিক বার্তার সঙ্গে আলাপকালে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জ মিলে বৃহত্তর খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজার। দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় এ পাইকারি বাজারে প্রতিদিন দেড় থেকে ২ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। কিন্তু নির্বাচনকে ঘিরে বর্তমানে এর পরিমাণ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। নির্বাচনের পরও রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা থাকায় আগামী দু-তিন সপ্তাহ খাতুনগঞ্জে বেচাকেনা ও আর্থিক লেনদেনে বিদ্যমান মন্দাভাব বজায় থাকতে পারে।
পাইকারি বাজারে বেচাকেনা কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে খাতুনগঞ্জের ব্যাংকগুলোতেও। ব্যাংকিং লেনদেনও আগের তুলনায় কমে গেছে। এ বিষয়ে ন্যাশনাল ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক শাহাদত হোসেন বলেন, প্রতি বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে ব্যাংক ক্লোজিংয়ের কারণে লেনদেন কিছুটা কমে যায়। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে বছরের শেষ চারদিন ব্যাংক বন্ধ থাকবে। সব মিলিয়ে আগামী দুই সপ্তাহ খাতুনগঞ্জে ব্যাংকিং লেনদেন বর্তমানের তুলনায় আরো কমতে পারে।