খাতুনগঞ্জে আদার দাম কমল কেজিতে ২০ টাকা
দেশে আদার মৌসুম শুরু হয়েছে। শীত শুরুর আগেই বাজারে আসতে শুরু করেছে নতুন মৌসুমে দেশে উৎপাদিত আদা। এ কারণে আমদানি করা আদার চাহিদা কমে গেছে। একই সঙ্গে আমদানি করা আদার দামেও দেখা দিয়েছে নিম্নমুখী প্রবণতা।
দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা আদার দাম কেজিতে ২০ টাকা কমেছে। আগামী দিনগুলোয় দেশে উৎপাদিত নতুন মৌসুমের আদার সরবরাহ পুরোদমে শুরু হলে পণ্যটির দাম আরো কমে আসার জোরালো সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা।
দেশের চাহিদা পূরণের জন্য চীন থেকে সবচেয়ে বেশি আদা আমদানি করা হয়। গতকাল খাতুনগঞ্জ বাজারে মসলার পাইকারি আড়তগুলো ঘুরে চীন থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি আদা মানভেদে ১০০-১০৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এক সপ্তাহ আগেও পাইকারি বাজারে আমদানি করা এসব আদার দাম ছিল কেজিপ্রতি ১২০ টাকায়। সে হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে আমদানি করা আদার দাম কেজিতে ২০ টাকা কমেছে।
এদিকে খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে এদিন দেশে উৎপাদিত নতুন মৌসুমের প্রতি কেজি আদা মানভেদে ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। মৌসুমের শুরুতে পণ্যটি কেজিপ্রতি ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাইকারি বাজারে দেশে উৎপাদিত আদার দামও কেজিতে ৫ টাকা কমে এসেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে আদার বাজার বেশ চাঙ্গা ছিল। বিশেষত কোরবানি ঈদ ও দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে চাহিদা বেশি থাকায় আদার দাম অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল।
বর্তমানে পণ্যটির বাজার পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। এক-দেড় মাস থেকে নতুন মৌসুমে দেশে উৎপাদিত আদা বাজারে আসতে শুরু করেছে। ফলে পণ্যটির সরবরাহও আগের তুলনায় বেড়েছে। চাহিদাও রয়েছে বাড়তি। মূলত এ কারণে বর্তমানে পাইকারি বাজারে আদার দাম কমতির দিকে রয়েছে।
খাতুনগঞ্জের মসলা ব্যবসায়ী মিঠু মল্লিক বলেন, কোরবানি ঈদের সময় চীন থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি আদার দাম ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ওই সময় দেশে উৎপাদিত আদার সরবরাহ কম ছিল।
এ কারণে বাজারে চীন থেকে আমদানি করা আদার একচেটিয়া আধিপত্য দেখা গিয়েছিল। দেশে বাড়তি চাহিদার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তি দামের যুক্তি দেখিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল। মৌসুম শুরু হওয়ায় এখন আদার বাজার পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে গেছে।
মসলা আমদানিকারক মোরশেদ আহমেদ জানান, অভ্যন্তরীণ চাহিদার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ দেশে উৎপাদিত আদা দিয়ে পূরণ করা হয়। এছাড়া চীন, মিয়ানমার, ভারত, ইন্দোনেশিয়া থেকেও আদা আমদানি করা হয়। বিশেষত ঈদ কিংবা পূজাকে কেন্দ্র করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমদানি বাড়িয়ে বাড়তি চাহিদার চাপ সামাল দেয়া হয়। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি।
তবে এবারের ঈদের মৌসুমে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম বাড়তি ছিল। এর প্রভাবে দেশের বাজারেও আদার দাম বেড়ে যায়। এখন দেশে উৎপাদিত নতুন মৌসুমের আদার সরবরাহ বৃদ্ধি আমদানি করা আদার দামও কমিয়ে দিয়েছে।
আদার সাম্প্রতিক দরপতনের বিষয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ হয় খাতুনগঞ্জ বাজারের কাঁচাপণ্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিসের। তিনি বলেন, সাধারণত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খাতুনগঞ্জ বাজারে প্রতিদিন ১৫-২০ ট্রাক আদা সরবরাহ হয়।
তবে ভরা মৌসুম হওয়ায় বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতিদিন ২৫-৩০ ট্রাক আদা সরবরাহ হচ্ছে। বিশেষত তিন পার্বত্য জেলাসহ চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আদার সরবরাহ বেড়েছে। বাড়তি সরবরাহ পণ্যটির দাম কমিয়ে দিয়েছে। আগামী দিনগুলোয় পাইকারি বাজারে দেশে উৎপাদিত আদার সরবরাহ যত বাড়তে থাকবে, পণ্যটির দাম ততই কমবে।