কয়েকশ কোটি ডলার ব্যয় করেছে চীন
আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি পর্দা উঠতে চলেছে শীতকালীন অলিম্পিকের। বৈশ্বিক এ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ফাইন্যান্স মডেল অনুযায়ী কয়েকশ কোটি ডলার ব্যয় করবে আয়োজক দেশ। এতে কয়েকশ কোটি ডলার আয় করবে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)। পাশাপাশি ক্রীড়া সংস্থাগুলোও লাখ লাখ ডলার আয় করে থাকে। তবে এরই মধ্যে মহামারীর কারণে আয়ের কিছু প্রত্যাশিত উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও মহামারীর আগেও এই গেমস থেকে আয় করার বিষয়টি বেইজিংয়ের অগ্রাধিকার ছিল না। সুতরাং অলিম্পিকে বেইজিংয়ের লাখ লাখ ডলার ব্যয়কে পর্যটন খাতের বিকাশে বিনিয়োগ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
এপির খবরে বলা হয়েছে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৫ সালেই দেশে একটি নতুন পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, আমরা অলিম্পিকের আয়োজক হতে পারলে কয়েক দিক থেকে লাভবান হওয়া যাবে। এটি ৩০ কোটিরও বেশি চীনা নাগরিককে শীতকালীন ক্রীড়াগুলোয় অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করবে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিকের কারণে সৃষ্ট এ আবহ আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ব্যাপক অবদান রাখবে।
চীনের ব্যয়: আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাওয়া এ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ১৬ দিন পর বন্ধ হবে। আয়োজনে অংশগ্রহণ করা ক্রীড়াবিদদের বেইজিংয়ের বাইরে নতুন স্কি রিসোর্টে নিয়ে যেতে উচ্চগতির ট্রেন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এই ট্রেন লাইনগুলো আগামী কয়েক দশক ধরে চীনা পর্যটকদের স্ক্রি রিসোর্টের পাহাড়টিতে নিয়ে যাবে।
২০১৪ সালের সোচি গেমসে রাশিয়া ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছিল। অলিম্পিকের ইতিহাসে এটি বহু বছর ধরে রেকর্ড ব্যয় হিসেবে জায়গা করে নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিপুল পরিমাণের এ ব্যয় ভবিষ্যতে ইউরোপীয় আয়োজকদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। এরপর আইওসি গেমসের পুরস্কার ও আয়োজনে ব্যয়ের বিষয়টি পর্যালোচনা করে আসছে। তবে চীনের অনুপ্রেরণা রাশিয়ার সেই রেকর্ড ব্যয়।
রাষ্ট্র সমর্থিত এ পরিকল্পনায় অভ্যন্তরীণ অবসর কাটানো এবং নতুন পর্যটন খাত তৈরির জন্য অলিম্পিককে বেছে নেয়া হয়েছে। চীন একটি উচ্চগতির রেল নেটওয়ার্কের জন্য ৯০০ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে। এটি বেইজিংকে ঝাংজিয়াকো ও ইয়াংচিংয়ের নিকটবর্তী স্কি রিসোর্টের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। সেখানে প্রাকৃতিক তুষার ঢাকা পাহাড়ে স্কি ঢাল তৈরি করা হয়েছে।
অলিম্পিকের নির্দিষ্ট কার্যক্রমের জন্য বাজেট প্রায় ৪০০ কোটি ডলার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০০৮ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের জন্য বেইজিংয়ের ভেনুগুলো পুনরায় সাজানো হয়েছে। সাঁতার প্রতিযোগিতার ওয়াটার কিউবগুলোকে কার্লিংয়ের আইস কিউবে রূপান্তর করা হয়েছে। সাত বছর আগে আয়োজক হিসেবে বিড জেতার পর থেকেই শীতকালীন ক্রীড়াগুলোয় বিনিয়োগ করে আসছে বেইজিং। ন্যাশনাল স্পোর্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সেন্টারের বরাত দিয়ে এ মাসে চায়না ডেইলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনে বর্তমানে ৬৫০টিরও বেশি আইস রিংক ও ৮০০টি স্কি রিসোর্ট আছে। এ সংখ্যা ২০১৫ সালের চেয়ে যথাক্রমে ৩১৭ ও ৪১ শতাংশ বেশি।
মহামারীতে বন্ধ হওয়ার আগেও চীন শীতকালীন গেমস উপলক্ষে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের থেকে অপেক্ষাকৃত পরিমিত আয় আশা করেছিল। এমনকি এবারের অলিম্পিকের টিকিটগুলো স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বিক্রি করাও হচ্ছে না। এখান থেকেও আয়োজক দেশের বড় একটি আয় আসে। ২০১০ ভ্যাঙ্কুভার অলিম্পিকে ১৫ লাখ টিকিট বিক্রি থেকে সর্বোচ্চ আয় এসেছিল ২৫ কোটি ডলার। সোচি গেমস ৪৬ জন স্পন্সরের কাছ থেকে প্রায় ১২০ কোটি ডলার নিয়ে শীতকালীন গেমসের রেকর্ড গড়েছিল।
বেইজিং আয়োজক কমিটির ওয়েবসাইটে ৪৪টি বাণিজ্যিক অংশীদার হওয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেয়া হয়েছে। এগুলো বেশির ভাগই চীনা। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো বলেছে, এ মাসে শীতকালীন ক্রীড়াগুলোয় ৩০ কোটি মানুষকে জড়িত করার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে।
আইওসির আয়: আইওসি বিশ্বজুড়ে সম্প্রচারকারীদের কাছ থেকে এবং একচেটিয়া স্বত্ব পাওয়া স্পন্সরদের কাছ থেকে কয়েকশ কোটি ডলার পায়। ২০৩২ সাল পর্যন্ত ছয় অলিম্পিকের জন্য মার্কিন সম্প্রচারকারী এনবিসি ৭৭৫ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে। বেইজিং দিয়েই এ চুক্তি শুরু হতে যাচ্ছে। আট বছর আগে স্বাক্ষর হওয়া এ চুক্তিতে ২০২২ বেইজিং গেমস ও ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের জন্য ২৫০ কোটি ডলার সম্প্রচারস্বত্বের কথা বলা হয়েছিল। এছাড়া আইওসির এখন ১৩টি শীর্ষ পর্যায়ের স্পন্সর রয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৬ সালে সম্মিলিত এ স্পন্সর থেকে ১০০ কোটি ডলার নগদ আয় এবং পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত ছিল। পাশাপাশি ২০২১-২৪ সালের শীর্ষ প্রোগ্রামগুলোর জন্য প্রায় ৩০০ কোটি ডলার স্পন্সর রয়েছে।
আইওসির ব্যয়: আইওসি বেইজিং আয়োজকদের ৮৮ কোটি ডলার সরবরাহ করছে। এটি চার বছর আগে পিয়ংচ্যাং আয়োজকদের চেয়ে মাত্র কয়েক লাখ ডলার কম। এছাড়া আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ২০১৮ সালের রাজস্ব থেকে ২১ কোটি ৫০ লাখ ডলার শীতকালীন গেমস স্পোর্টসের সাতটি পরিচালনা সংস্থার মধ্যে বিতরণ করেছে। এগুলো হলো স্কিইং, স্কেটিং, হকি, বায়াথলন, ববপ্লেড, কার্লিং ও লুজ।
অ্যাথলিটদের অংশ: বেইজিং অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করতে যাওয়া ২ হাজার ৯০০ অ্যাথলিট প্রতিযোগিতা বা পদক জয়ের জন্য আইওসি থেকে পুরস্কারের অর্থ পাবেন না। যদিও আইওসির দেয়া অর্থ থেকে ক্রীড়া সংস্থাগুলো অ্যাথলিটদের কিছু দিতে পারে। আইওসি ২০২১-২৪ সময়ের জন্য অলিম্পিক সলিডারিটি ফান্ডে ৫৯ কোটি ডলার জমা রাখবে। এটি ক্রীড়াবিদ, প্রশিক্ষক ও প্রশাসকদের প্রশিক্ষণের পেছনে ব্যয় করা হবে। এক্ষেত্রে স্বল্প আয়ের দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
আইওসি জানিয়েছে, চলতি বছরের অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জন ও প্রস্তুতিতে সহায়তা করার জন্য ৭৮টি দলের ৪২০ জন ক্রীড়াবিদকে বৃত্তি দেয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমে ২০১৮ পিয়ংচ্যাং অলিম্পিকের জন্য ১ কোটি ডলার বাজেট ছিল।
কিছু দেশে অলিম্পিক পদ বিজয়ীরা ক্রীড়া সংস্থা ও সরকারের থেকে নগদ অর্থ বা উপহার পান। যুক্তরাষ্ট্র ক্রীড়াবিদদের পুরস্কারস্বরূপ অর্থ দিয়ে থাকে। এছাড়া অলিম্পিক সাফল্যের জন্য রুশ ধনী সমর্থকরা ক্রীড়াবিদদের পুরস্কৃত করার ঐতিহ্য রয়েছে।