কয়েকটি রাজনৈতিক দল সরকার উৎখাতের চেষ্টা করছে —প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার

দেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে উত্খাতের চেষ্টায় লিপ্ত বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা দেশের কোনো সংকটপূর্ণ মুহূর্তেই জনগণের পাশে থাকেন না। জনগণের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে তারা অনেক বেশি ব্যস্ত থাকেন সরকার পতনের আন্দোলন গড়ে তুলতে। আওয়ামী লীগ সরকারকে উচ্ছেদ করার আন্দোলন গড়ে তুলতে কমিউনিস্ট পার্টি ও বাম দলগুলো এখন বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানে যুক্ত হন সরকারপ্রধান। অনুষ্ঠানে কৃষক লীগের একটি বইয়েরও মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের রোল মডেল, তখন এদেশের কিছু মানুষ বিদেশের কাছে নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে ব্যস্ত, সরকার উত্খাতে ব্যস্ত। তাহলে তাদের উচিত দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কী করবে, সেটাও জনগণের কাছে তুলে ধরা।

কেন সরকার উত্খাতের চেষ্টা, আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী; সে প্রশ্নও রাখেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা ২০০৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারে রূপকল্প-২১ ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমরা আমাদের লক্ষ্য স্থির করেছিলাম ২০২১ সাল পর্যন্ত। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি যে তারা বারবার আমাদের ভোট দিয়েছে, ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমরা সরকারে এসেছি। আমরা নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে আমাদের লক্ষ্য অর্জন করেছি।

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা তাদের ভালো লাগেনি বলেই কি তারা এ সরকারকে হটাতে চায়?

এ সময় বাংলাদেশের উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে, বাংলাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে। এছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, ভূমিহীনদের ঘর তৈরি করে দেয়ার মতো কর্মসূচিগুলোর কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ একটা ঘর পাওয়ার পর তার জীবন-জীবিকার পথ খুঁজে পাচ্ছে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে—এ অপরাধে কি আওয়ামী লীগ সরকারকে হটাতে হবে? ১০ টাকায় কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিয়েছি। বেসরকারি ব্যাংক আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি এবং তাদের ওপর শর্ত আছে যে প্রতিটি উপজেলা পর্যন্ত তাদের শাখা থাকতে হবে। তাছাড়া সরকারি ব্যাংক আছেই। আজ ১০ টাকায় কৃষক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে তার ভর্তুকির টাকাটা সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে পাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। চার দফা সারের দাম কমিয়েছি। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। যেটা নিয়ে একটা বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের ছিল। আমাদের এ একটা সিদ্ধান্তই সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে দিয়েছে। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। প্রতিটি ইউনিয়নে আমরা ব্রডব্যান্ড কানেকশন দিয়েছি, ডিজিটাল সেন্টার করেছি। আজকের বাংলাদেশে এ ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেক মানুষ নিজের ঘরে বসে বিদেশে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। আর্থিক সচ্ছলতা পাচ্ছে, তাদের আমরা লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ট্রেনিং করাচ্ছি।

পায়রায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার সাশ্রয় হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই এত বড় বড় প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে গেলে তো আমাদের উৎপাদন করতেই হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের প্রত্যেকটা মানুষের ভাগ্য যাতে পরিবর্তন হয়, তার ব্যবস্থা আমরা করেছি। আজকে করোনার সময়ও আমাদের দেশে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে। আরো বহু কাজ আমরা করে যাচ্ছি। আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, এই যে কাজগুলো আমরা করে যাচ্ছি, এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে, তৃণমূলের মানুষ, গ্রামের মানুষ উপকার পাচ্ছে। তারা যে সরকার উত্খাত করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যটা কী? এ মানুষগুলোকে এসব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা এটাই কি তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য? সেই জন্যই শেখ হাসিনার সরকারকে উত্খাত করার পরিকল্পনা কিনা, সে প্রশ্নও রাখেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *